জাপানের কোচি অঞ্চলের ইয়োসাকোই নাচ

ঐতিহ্যবাহী ইয়োসাকোই নাচ পরিবেশনরত শিল্পীরা। ছবি: লেখক
ঐতিহ্যবাহী ইয়োসাকোই নাচ পরিবেশনরত শিল্পীরা। ছবি: লেখক

জাপানের ঐতিহ্যবাহী ইয়োসাকোই নাচকে আসন্ন টোকিও অলিম্পিকের আগেই ব্যাপকভাবে পরিচিতি করার উদ্দেশ্যে দেশটিতে হয়ে গেল জমকালো এক অনুষ্ঠান। এ আয়োজনের নাম দেওয়া হয় ইয়োসাকোই প্রমোশনাল ইভেন্ট।

দেশটির কোচি প্রিফেকচারাল গভর্নমেন্টের উদ্যোগে গত বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানী টোকিওর কিনশিচোর টোবু (TOBU) হোটেলের কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় এই জমকালো ইভেন্টটি।

পশ্চিম জাপানের কোচি জেলা প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা ভূস্বর্গ। প্রশান্ত সাগরের নীল জলরাশি, পাহাড় আর নদীর বিমূর্ত সৌন্দর্যের লীলাভূমি। কোচি জেলার নিইয়োদো নদী সারা জাপানের সবচেয়ে পরিষ্কার পানির নদী হিসেবে পরিচিত।

মিখাইল নামের একজন বিদেশি ফটোগ্রাফার সারা জাপান ভ্রমণ ও ছবি তোলেন। তাঁর মতে, কোচি অঞ্চলে দেখা ফিরোজা রঙের গিরিসংকট তিনি অন্য কোথাও দেখেননি।

ভারতের কেরালা রাজ্যে কোচি নামের শহরের সঙ্গে নামের মিল আছে। ইয়োসাকোই (ইংরেজিতে Yosakoi। জাপানিতে よさこい ) নাচ এই জেলা থেকেই এসেছে। ঐতিহ্যবাহী এই নাচ সারা জাপান জুড়ে জনপ্রিয় গ্রুপ নাচ হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক ইভেন্ট ও অঞ্চলভিত্তিক বার্ষিক মেলায় এ নাচের ব্যাপকতা লক্ষ করা যায়।

ঐতিহ্যবাহী ইয়োসাকোই নাচ পরিবেশনরত শিল্পীরা। ছবি: লেখক
ঐতিহ্যবাহী ইয়োসাকোই নাচ পরিবেশনরত শিল্পীরা। ছবি: লেখক

মূলত ইউকাতা বা হ্যাপি কোট পরে এ ধরনের নাচ পরিবেশন করা হয়। এই নৃত্য দল বেশ বড় হয় এবং নাচগুলো হয় যথেষ্ট হইহুল্লোড় করে। ইনস্ট্রুমেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয় নারুকো নামের একটি খঞ্জনির মতো বাদ্যযন্ত্র।

১৯৫৪ সালে প্রথম দিকে কোচি থেকেই এর সূচনা। কোচি প্রিফেকচারের প্রসিদ্ধ ইয়োসাকোই ড্যান্স বর্তমানে জাপানের ২০০ এলাকায় আইটেম নাচ ও বিশ্বের ২৮টি দেশে ফেস্টিভ্যালের নাচ হিসেবে প্রচলিত।

অনুষ্ঠানে কোচি জাপানিজ ক্ল্যাসিক্যাল ড্যান্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট Wakayagi Yukimitsu–র নেতৃত্বে মূলধারার ইয়োসাকোই নারুকো নাচ পরিবেশন করা হয়।

আলোচনা পর্বে বক্তব্য দেন কোচির গভর্নর তরুণ রাজনীতিবিদ মাসানাও ওজাকি ও সাবেক জাপানের আন্তর্জাতিক রাগবি তারকা টাকুমা সাইতো।

অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য। ছবি: লেখক
অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য। ছবি: লেখক

অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে ছিল কোচি অঞ্চলের বিখ্যাত খাবার, হস্তশিল্পসহ নানা সামগ্রীর স্টল। এসব স্টলে দর্শকদের সমাগম দেখা যায়। অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সবাইকে কোচির নানা খাবার, পানীয় ও ইয়োসাকোই নাচের জন্য জরুরি নারুকোসহ গিফট প্যাক ধরিয়ে দেওয়া হয়।

জাঁকজমক এ অনুষ্ঠানে বিদেশি সাংবাদিকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এ অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল ইয়াসুহারু ইনোইউয়ে নামের খ্যাতনামা এক জাপানির আমন্ত্রণে। বাংলাদেশিদের মধ্যে আমি, রাহমান মনি ও হাসিনা বেগম উপস্থিত ছিলাম।

উল্লেখ্য, আগামী ২০২০ সালে টোকিওতে অনুষ্ঠিত হবে অলিম্পিক গেমস। ওই সময় অন্যদের সঙ্গে বিশ্বের অনেক মুসলমানও দেশটিতে আসবেন। তাই জাপান সরকার মোবাইল মসজিদ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বিশ্বের অন্যতম বড় এই ক্রীড়া আসর সামনে রেখে মোবাইল মসজিদ তৈরি করেছে জাপান সরকার।

মঞ্চে কয়েকজন অতিথির সঙ্গে শিল্পীরা। ছবি: লেখক
মঞ্চে কয়েকজন অতিথির সঙ্গে শিল্পীরা। ছবি: লেখক

এই মোবাইল মসজিদ নির্মাণের ধারণাটা ইয়াসুহারু ইনোইউয়ের। তিনি এর আগে গ্রিসের এথেন্সে ২০০৪ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ফুটবাথ তৈরি করেছিলেন। কাতারে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে মোবাইল মসজিদ বানানোর ধারণা তাঁর মাথায় আসে। তিনি তার এই ধারণাটি জাপান সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান। এরই ধারাবাহিকতায় জাপান সরকার মোবাইল মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে।

ইয়াসুহারু ইনোইউয়ে বলেন, ‘নামাজ পড়ার আরামদায়ক পরিবেশ তৈরির মধ্য দিয়ে মুসলমানদের ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিকে আমন্ত্রণ জানাতে চাই।’

মোবাইল মসজিদ। ছবি: লেখক
মোবাইল মসজিদ। ছবি: লেখক

ইতিপূর্বে টোকিওতে তাঁর বানানো মোবাইল মসজিদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় আমার উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল। তখন কথায় কথায় তাঁকে অনুরোধ জানিয়েছি, টোকিওর অলিম্পিক শেষে কয়েকটি মোবাইল মসজিদ বাংলাদেশে সরকারিভাবে দেওয়ার।