রং ফোটে রং মোছে
এক সপ্তাহের মধ্যে প্রকৃতির রং মুছে গেল। শীতের তীব্রতা যদিও মাইনাসের ঘরে এখনো যায়নি; গতকালের বৃষ্টির কান্না থামাতে ঝড় এসেছিল দমকা হাওয়ায়। সকালবেলা অফিসে যাওয়ার সময় দেখলাম, গাছগুলো ন্যাড়া হয়ে যাচ্ছে।
পিটার্সবার্গ শহরে যখন আসি, তখনো এখানে ঠান্ডা ছিল। ফেব্রুয়ারির কনকনে ঠান্ডায় প্রকৃতির দুঃখ দেখেছি তখন। পাতাবিহীন গাছ ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল সাদা বরফে।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আবহাওয়ার উষ্ণতার ছোঁয়া পেয়েছি। দেখেছি গাছের আনন্দ। দুই চোখে ভরা স্বপ্ন যেন ঝলমল করেছে সবুজ পাতায়। ক্রমান্বয়ে সবুজে ভরে গেল প্রকৃতি।
আমেরিকার পিটার্সবার্গ শহরের গ্রীষ্মকাল খুবই ছোট। কখন আসে আর কখন যায় বোঝা মুশকিল। তবে যতক্ষণ থাকে, পুরো রং নিয়ে আসে। সবুজের অপরূপ মায়া অদ্ভুতভাবে সবাইকে আবিষ্ট করে রাখে। বছরের বেশির ভাগ সময় শীতের তীব্রতা সবাই সহ্য করে এই গ্রীষ্ম বিলাসের জন্য। সত্যিই অন্য রকম এখানকার সামার।
শীত আসার আগে আগে প্রকৃতি এমন করে সাজে, না দেখলে আসলে বোঝানো সম্ভব নয়। এই ফলের সময়টা যেন লাল–সবুজে মোড়ানো বাংলাদেশের পতাকা। ঈশ্বর এ সময়ে নিজ হাতে প্রকৃতিকে সাজিয়ে দেন। প্রকৃতিও লুফে নেয় দুই হাতে। ভালোবাসার রঙে বাসর সাজায় কিছুক্ষণ।
হেঁয়ালিপনা কি না জানি না। তাই তো একই রূপে প্রকৃতির বেশি সময় থাকতে ভালো লাগে না। এবার তার খোলস বদলের সময়। সময় এসেছে বরফজলে হাঁটার। আর আমাদেরও তার সঙ্গী হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। তবে ক্যামেরায় ধরে রাখা রঙের কাব্যে করতে পারি ফেলে আসা দিনের রোমন্থন।
ড. মো. ফজলুল করিম: পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ ফেলো, পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং সহযোগী অধ্যাপক, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।