পানের ডিব্বা আর তিন বোতল ভদকা

প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স
প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স

ঢাকা থেকে জার্মানিতে ফিরছি। এমিরেটসের প্লেনে। পাশে এক হিজাব পরা বাঙালি ভদ্রমহিলা। সঙ্গে তাঁর তরুণী মেয়ে।

ভদ্রমহিলা সারাক্ষণই কী যেন চিবুচ্ছেন।

আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, আপনি চুইংগাম এত লাইক করেন?

: আরে ভাইজান কী কন? আমি পান খাইতেছি, এই যে দেখেন না পানের ডিব্বা সাথে লইয়া আসছি।

আমি বললাম, ঢাকায় কাস্টমসে কিছু বলেনি?

: আরে ভাইজান কাস্টমসে আমাগো নিজের লোক আছে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, জার্মানিতে কোথায় যাচ্ছেন?

: আমার পোলা থাকে ওইখানে।

আমি বললাম, দুবাইতে কিন্তু আবার চেক হবে। ঝামেলায় পড়বেন পানের ডিব্বা নিয়ে।

তিনি উত্তর দিলেন, পানের ডিব্বা ছাড়া আমি কোথাও যাই না।

তারপর কিছুক্ষণ চুপচাপ।

হঠাৎ তাঁর তরুণী মেয়ে বলল, মা দেখো দেখো প্লেন এত দ্রুত যাচ্ছে যে মেঘগুলোও পারছে না সামাল দিতে।

ভদ্রমহিলা কী বুঝলেন আল্লাহই মালুম। দৌড়ে গেলেন ককপিটের দিকে। আমাদের সিটগুলো একদম সামনে ছিল। ককপিটের কাছাকাছি।

চেঁচিয়ে বললেন, ‘এই যে পাইলট সাহেব একটু আইসতে চালান, আমার মাইয়া ভয় পাইতাসে।’

স্টুয়ার্ড এসে বসিয়ে দিলেন ভদ্রমহিলাকে তাঁর সিটে। পুরো প্লেন তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। ইন্ডিয়ান স্টুয়ার্ড যখনই পাশ দিয়ে যায়, একবার মুচকি হাসে। আমি লজ্জায় বাঁচি না।

যা হোক প্লেন দুবাইতে ল্যান্ড করল। এবার দুবাই থেকে ডুসেলডর্ফ। পানের ডিব্বা সহিসালামতে কাস্টমস পার হলো। আমি দুবাইয়ের ডিউটি ফ্রি শপ থেকে ভদকার একটি কেস কিনলাম। তিন বোতলের কেস। জার্মানিতে আমি যে কোম্পানিতে কাজ করি আমার বস জার্মান হলেও রাশিয়ান ভদকার পাগল। ভদ্রলোক বেশ খুশি হবেন।

দুবাই থেকে প্লেন ছাড়ল। পাঠক আপনি বিশ্বাস করবেন না, আবারও ওই দুজন আমার পাশে। তবে এবার আর কোনো কথা হলো না। না হলেই ভালো।

ডুসেলডর্ফে প্লেন ল্যান্ড করল। জার্মানরা পানের ডিব্বা দেখলই না। কিন্তু আমার ভদকার কেস ঠিকই তাদের নজর এড়াল না।

কাস্টমস অফিসার বললেন, মাত্র এক বোতল ট্যাক্স ছাড়া। বাকি দুই বোতলের জন্য ট্যাক্স দিতে হবে।

আমি বললাম, দেখুন এটি একটি গিফট আমার বসের জন্য।

কিন্তু কে শোনে কার কথা।

এমন সময় হঠাৎ হিজাব পরা ভদ্রমহিলা অক্সফোর্ড ইংরেজিতে কাস্টমস অফিসারকে বললেন, আচ্ছা, এক প্যাসেঞ্জার এক বোতল সাথে নিতে পারে তাই না?

: হ্যাঁ।

কাস্টমস অফিসারের উত্তর।

অত্যন্ত পরিষ্কার ইংরেজিতে তিনি বললেন, তাহলে তো ঠিকই আছে। আমরা তিনজন প্যাসেঞ্জার ও তিন বোতল ভদকা।

কাস্টমস অফিসার হিজাব পরা ভদ্রমহিলার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন, আপনি ড্রিংক করেন?

ভদ্রমহিলা উত্তর দিলেন, কেন, আপনার কি তাতে কোনো প্রবলেম আছে?

কাস্টমস অফিসার আমাদের ছেড়ে দিলেন। আমার দুই চোখ ছানাবড়া। আমার নাৎসি লালিত উন্নাসিকতাকে চুরমার করে দিলেন বাঙালি হিজাব পরা ললনা।

আমি তাঁকে বললাম, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ভদ্রমহিলা উত্তর দিলেন, ‘কী যে কন ভাইজান, বাঙালি হইয়া আরেক বাঙালিরে সাহায্য করুম না!’