মেলবোর্নে কবিতায়নের আয়োজনে আবৃত্তি সন্ধ্যা

এক মঞ্চে ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিমূল মুস্তফার পরিবেশনা। ছবি: পারভেজ রাকসান্দ
এক মঞ্চে ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিমূল মুস্তফার পরিবেশনা। ছবি: পারভেজ রাকসান্দ

মেলবোর্নের মলভার্ন কমিউনিটি সেন্টার হয়ে উঠেছিল দুই বাংলার এক মিলনমেলায়। বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রথিতযশা আবৃত্তিশিল্পী যথাক্রমে শিমূল মুস্তফা ও ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় এক মঞ্চে তাঁদের হৃদয়ের সবটুকু উজাড় করে আবৃত্তির মাধ্যমে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিলেন দুই বাংলার বাংলা ভাষাভাষী কবিতাপ্রেমী শ্রোতাদের।

গত শনিবার (৯ নভেম্বর) অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে মেলবোর্নের জনপ্রিয় আবৃত্তি সংগঠন কবিতায়ন। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে দুই বাংলার একদল কবিতাপ্রেমী মানুষের হাত ধরে এই সংগঠন যাত্রা শুরু করে। কবিতায়নের পঞ্চম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সংগঠনটি বাংলা ভাষাভাষী মেলবোর্নপ্রবাসীদের এই মনোজ্ঞ সন্ধ্যা উপহার দেয়।

কবিতায়ন পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম শিশু-কিশোরদের আবৃত্তির মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

এরপর মঞ্চে আবৃত্তি শুরু করেন শিমূল মুস্তফা। তিনি ভরাট কণ্ঠে সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ‘আমার পরিচয়’ কবিতার মাধ্যমে আবৃত্তির খাতা খোলেন। আবৃত্তির শুরুতে হারমোনিয়াম বাজিয়ে ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানটির মুখরা পরিবেশন করেন তিনি। দর্শক-শ্রোতারা আবিষ্কার করেন এক অন্য শিমূলকে। শুরু হয় গান ও কবিতার ফিউশন। এ ক্ষেত্রে তাঁকে সহযোগিতা করেন মেলবোর্নের স্থানীয় সংগীতশিল্পী নিঝুম ও কিবোর্ডিস্ট অভিষেক। এরপর তিনি একে একে রবীন্দ্রনাথসহ বিভিন্ন কবিদের কবিতা আবৃত্তি করতে থাকেন। তাঁর কণ্ঠে ‘আমাদের মা’ কবিতাটি শুনে অনেককে চোখ মুছতে দেখা যায়। প্রায় এক ঘণ্টা শিমূল মুস্তফা তাঁর জাদুকরি কণ্ঠের মাধ্যমে দর্শক–শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন।

২০ মিনিটের বিরতির পর পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাচিকশিল্পী ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করেন অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব। তাঁকে সহযোগিতা করেন তাঁর সুযোগ্যা ছাত্রী ড. শ্রাবন্তী ঘোষ। রবীন্দ্রনাথের কবিতা দিয়ে শুরু করে তিনি একে একে কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাস, জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শ্রীজাত প্রমুখ কবির কবিতা আবৃত্তি করেন।

কবিতায়নের পক্ষ থেকে দুই শিল্পীকে ক্রেস্ট দেওয়া হয়। ছবি: পারভেজ রাকসান্দ
কবিতায়নের পক্ষ থেকে দুই শিল্পীকে ক্রেস্ট দেওয়া হয়। ছবি: পারভেজ রাকসান্দ

ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মোহনীয় কণ্ঠের মাধুর্যে দর্শক-শ্রোতারা অভিভূত হয়ে পড়েন। মজার ব্যাপার হলো, তিনি শিশুদের জন্য দুটি ছড়া আবৃত্তি করেন। সুকুমার রায়ের ‘গোঁফ চুরি’ ও নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘ছুটি’ ছড়া দুটি শিশুদের খুব আনন্দ দেয় আর বড়দের যেন তাঁদের শৈশবে নিয়ে যান।

দর্শক–শ্রোতাদের অবাক করে দিয়ে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব শুরু হয় অনুষ্ঠানের শেষাংশে। এই সময় ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চে ডেকে নেন শিমূল মুস্তফাকে। এই দুই শিল্পী রবিঠাকুরের ‘কৃষ্ণকলি’ ও কাজী নজরুলের ‘বাংলাদেশ’ কবিতা দুটি দ্বৈতকণ্ঠে আবৃত্তি করেন। মেলবোর্নপ্রবাসীরা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে উপভোগ করেন প্রথমবারের মতো এই দুই গুণী শিল্পীর একত্রে পরিবেশনা ও সাক্ষী হয়ে থাকেন দুই বাংলার অভূতপূর্ব মিলনমেলায়।

সবশেষে কবিতায়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখর দেব এই গুণী শিল্পীদের হাতে ক্রেস্ট প্রদান করে সম্মানিত করেন।