বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ার আশা

মেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন
মেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন

চীনের সাংহাইয়ে বসেছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ আমদানি মেলা ‘চায়না ইন্টারন্যাশনাল ইমপোর্ট এক্সপোর (সিআইআইই) দ্বিতীয় আসর। বিশ্বের ১৫৫টি দেশ ও ২৬টি আন্তর্জাতিক সংস্থাকে নিয়ে আয়োজিত ছয় দিনব্যাপী এই মেলা শেষ হয় গত রোববার (১০ নভেম্বর)।

৩ লাখ ৬০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এই এক্সপোতে ছিল নানা ধরনের পণ্যের সমাহার। মেলায় ৭টি ভাগে প্রায় ১৫০টি দেশের প্রায় ৪ হাজার প্রতিষ্ঠানের স্টল ছিল। যেখানে নিত্যনতুন তৈরি পোশাক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসাসামগ্রী ও অত্যাধুনিক অটোমোবাইল প্রযুক্তি স্থান পায়।

এতে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে অংশ নেয় ৯টি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড।

বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে স্টল
বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে স্টল

এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায় থেকেও বাংলাদেশি বেশ কিছু উদ্যোক্তা পাটজাত, কৃষি ও চামড়াজাত পণ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা নিয়ে মেলায় হাজির হন।

নিজেদের বাজারকে আরও উদারীকরণের লক্ষ্যে ২০১৮ সাল থেকে চীন তাদের বাণিজ্য শহর সাংহাইয়ে এই মেলার আয়োজন করে আসছে।

চীনের বৃহত্তম আমদানি-রপ্তানি মেলা ক্যান্টন ফেয়ারের পর এই মেলা এখন বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে নানা দেশের বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের কাছে। প্রথম আসর থেকেই বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়ে আসছে এ মেলায়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক অভিজিৎ চৌধুরী জানান, এবারের মেলায় বাংলাদেশি প্যাভিলিয়নে অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের রপ্তানি বাণিজ্যে বাড়তি কিছু যোগ হবে। পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্কেও তৈরি হবে নতুন মাত্রা।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে অনেক চীনা প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত আগ্রহ দেখিয়েছে। পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে অনেক বিনিয়োগ সম্ভাবনাও।’

চায়না ইন্টারন্যাশনাল ইমপোর্ট এক্সপোর ভেন্যু
চায়না ইন্টারন্যাশনাল ইমপোর্ট এক্সপোর ভেন্যু

বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ছাড়াও বিডা, বেপজা, বেজা, পর্যটন করপোরেশনসহ বিভিন্ন স্টলে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

তাঁরা জানান, বাংলাদেশে চূড়ান্ত বিনিয়োগে এরই মধ্যে অনেক চীনা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। কেউ কেউ এর মধ্যে বাংলাদেশে গিয়ে তাঁদের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছেন।

অন্যদিকে বেসরকারি পর্যায়ে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি স্টলেও ব্যাপক সাড়া মিলেছে বলে জানিয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান দাদা বাংলা মেলায় পাটজাত নানা পণ্য নিয়ে হাজির হয়।

প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নুরুস সাফা বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের পাটজাত পণ্যকে চীনা বাজারে আনো জনপ্রিয় করতে আমাদের প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে। জনবহুল চীনে পরিবেশবান্ধব পণ্যের ওপর চীন সরকার জোর দেওয়ায় বাংলাদেশি পাট নিয়ে এ দেশীয় ক্রেতারা ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাই এবার আশার চাইতে অনেক বেশি সাড়া পেয়েছি।’

বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের সামনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল
বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের সামনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল

মেলায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশি তরুণ উদ্যোক্তা ফররুখ উদ্দিন বলেন, ‘এই মেলা বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকর্ষণ ও চীনে পণ্য বাজার সৃষ্টির জন্য অনেকটা স্বর্ণখনির মতোই। তাই ভবিষ্যতে এই আয়োজনে পণ্য নিয়ে হাজির হওয়ার পরিকল্পনা থেকেই মেলায় আসা।’

মেলায় উদ্বোধনী ফোরামে বাংলাদেশের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে আট সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।

অন্যদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিচালক (টেক্সটাইল) মো. সামসউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল এবার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়া মেলায় চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব-উজ-জামান বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করেন।

ফায়সাল করিম: পিএইচডি গবেষক, সেন্ট্রাল চায়না বিশ্ববিদ্যালয়, চীন।
ই–মেইল: <[email protected]>