বিয়ের পাত্রী নির্বাচন

অলংকরণ: তুলি
অলংকরণ: তুলি

কুদ্দুস সাহেব মন খারাপ করে রুমের মধ্যে একাকী বসে আছেন। তিনি এই মাত্র কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। ঠিক করেছেন, এ জীবন তিনি আর রাখবেন না। তিনি আত্মহত্যা করবেন। কিন্তু আত্মহত্যাটা কীভাবে করবেন, তা ঠিক করতে পারছেন না।

কুদ্দুস সাহেব দুই দিন আগে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। কারণ, তাঁর শ্যালকের বিবাহ উপলক্ষে পাত্রী বাছাই চলছে। সে কারণে পুরো বাসা এখন জমজমাট।

কুদ্দুস সাহেব ভাবছেন, কারও সঙ্গে আত্মহত্যার ব্যাপারে একটু আলোচনা করে পরামর্শ নেওয়া দরকার। কিন্তু তিনি ঠিক বুঝতে পারছেন না কার সঙ্গে আলোচনা করবেন। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘর ঝাড়ু দেওয়ার জন্য সখিনার মা রুমে ঢুকলেন। সখিনার মা এই বাসায় কাজ করেন। মধ্যবয়সী এক নারী। কুদ্দুস সাহেব ঠিক করলেন সখিনার মায়ের সঙ্গেই পরামর্শ করবেন।

কুদ্দুস সাহেব নরম সুরে বললেন, খালা কেমন আছেন?

: ভালা আছি, বাবাজি। বাবাজি আপনি যখন খালা কইয়া সম্মান দেন, তখন মনে অনেক আনন্দ হয়।

: খালা একটা বিষয়ে আমার একটু পরামর্শ দরকার। আপনি কি আমাকে একটা ভালো পরামর্শ দিতে পারবেন?

: অবশ্যই পারব। আপনি বলেন, বাবাজি। আমি আমনেরে ভালো পরামর্শ দিব। ছোটবেলা থাইক্কাই আমার মাথা খুবই পরিষ্কার। আমার বুদ্ধি ভালো। সে কারণে এলাকার সবাই আমারে হিটলার কইয়া ডাকে।

: খালা, আপনি কি জানেন হিটলার কে?

: জানব না ক্যান? অবশ্যই জানি। হিটলার ছিলেন একজন বিরাট রাজা। তাঁর কথায় বাঘে-মহিষে এক ঘাটে পানি খাইত। তাঁর ছিল বিরাট সম্মান।

: বুঝলাম। কিন্তু খালা, বাংলাদেশের মানুষ কাউকে কেন হিটলার বলে, তা কি আপনে জানেন?

: জানি, বাবাজি। আমাগো দেশে মানুষ যখন কাউরে খুব সম্মান দেয়, তখন তারে হিটলার কয়।

: তাই নাকি! তাহলে তো আপনার অনেক সম্মান।

: সবই আল্লাহর ইচ্ছা, বাবাজি। আমারে ভালো কপাল দিয়া পাঠাইছে।

: খালা শোনেন, আমি ঠিক করেছি এ জীবন আর রাখব না। আমি আত্মহত্যা করব। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী।

: বাবাজি, এটা খুবই ভালা সিদ্ধান্ত। আপনার কপাল বহুত খারাপ। যার জন্য কাইলা মোটা একটা বউ পাইছেন। তার ওপর বউ আবার দজ্জাল। এমন অসুন্দর দজ্জাল বউ যার আছে, তার এই দুনিয়ায় থাকোনের কোনো দরকার নাই।

: সবই ঠিক আছে, খালা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কীভাবে কাজটি করব বুঝতে পারছি না।

: বাসায় হারপিক আছে দিমু?

: হারপিক তো কখনো খাইনি। খেতে কি ভালো হবে?

: আপনি কইলে একটু দুধ-চিনি মেশাইয়া হারপিকের শরবত বানায়ে দিমু। আমাদের গ্রামের রতন পাগলা একবার এই শরবত খাইছিল। সে কইছে, সেই রকম টেস্ট।

: কিন্তু খালা, হারপিকে কি কাজ হবে? রতন পাগলার কি কাজ হয়েছিল?

: না, কাজ হয় নাই। ব্যাটা মরে নাই। পাগল গো জান একটু শক্ত হয়। তয় আমনের বেলায় কাজ হবে। শরবত কি বানায়ে আনমু?

: না খালা, হারপিক খাব না। হারপিক খেয়ে আত্মহত্যা করলে প্রেস্টিজ থাকবে না। মানুষে বলবে, ব্যাটা বাথরুমের ওষুধ খেয়ে মরছে।

: তাইলে এক কাজ করি। বাসায় বাঁশ আছে। কন তো আইনা আপনার মাথায় একটা বাড়ি দিই।

: তা দিতে পারেন। তবে সমস্যা হচ্ছে আপনি বয়স্ক মানুষ। আপনার যে শক্তি, তাতে বাঁশ দিয়ে বাড়ি মেরে মাথা ফাটাতে পারবেন বলে মনে হয় না। অবশ্য হাতুড়ি হলে একটা সম্ভাবনা আছে। বাসায় কি হাতুড়ি আছে?

: না, বাবাজি বাসায় হাতুড়ি নাই। বাবাজি, পাইছি, এক কাজ করেন গলায় দড়ি দেন।

: এটা ভালো বলেছেন। কিন্তু ঝুলব কোথায়? বাসায় এত মানুষ।

: কোথায় ঝুলবেন মাইনে? রুমের দরজা বন্ধ কইরা ফ্যানের লগে ঝুলবেন। আমি বাইরে পাহারা দিমু। কেউ আপনারে ডিসটাব দিব না।

: কিন্তু দড়ি পাব কোথায়?

: এটা কোনো সমস্যা না। আপনি আমারে খালা কইয়া ডাকছেন, আমার একটা দায়িত্ব আছে না? টাকা দেন সামনের দোকান থাইক্কা কিন্না আনি। পাঁচ হাজার টাকা লাগব।

: একটা দড়ির দাম এত টাকা!

: আমি আপনেরে কত দামি একটা পরামর্শ দিলাম। তা আমারে বকশিশ দিবেন না? দড়ি কিন্না যেটা থাকব সেইটা আমার বকশিশ।

কুদ্দুস সাহেব সখিনার মায়ের হাতে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বললেন, খালা, খবরদার কাউকে বলবেন না। আমি গোপনে কাজটা সারতে চাই।

: বাবাজি, আপনে ডরাইয়েন না। আমি কাউরে কমু না। কাকপক্ষীও জানব না।

: কাকপক্ষী জানলে সমস্যা নাই, খালা। কিন্তু এই বাসার কেউ যেন না জানে?

: আমনে নিশ্চিত থাকেন কেউ জানব না। তয় বাবাজি, একটা কথা, আর যা-ই করেন লুঙ্গি পইরা গলায় দড়ি দিয়েন না।

: কেন? লুঙ্গিতে সমস্যা কী?

: কী যে কন, শরমের কথা। বাসায় আমরা মহিলারা আছি না? লুঙ্গি পইরা ঝুললে তো... ।

এতটুকু বলেই সখিনার মা লজ্জা পেয়ে শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। সখিনার মা কেন লজ্জা পেলেন, কুদ্দুস সাহেব সেটা বুঝতে পারলেন না। অবশ্য বোঝার দরকারও নাই। এই দুনিয়ার সবকিছু সবার বুঝতে হবে, এমন কোনো কথা নাই।

সখিনার মা রুম থেকে বের হয়েই বিড়বিড় করে বলে উঠলেন, বেটা বলদের ঘরের বলদ। দড়ি কেনার জন্য পাঁচ হাজার টাকা দিছে। তোর মতো বলদের গলায় ফাঁস দেওনই উচিত।

সখিনার মা বের হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে কুদ্দুস সাহেবের স্ত্রী ও শ্যালক রাসেল রুমে ঢুকলেন। রুমে ঢুকেই কুদ্দুস সাহেবের স্ত্রী খুশি বেগম বললেন, কুদ্দুস মিয়া তোমার সমস্যা কী?

: আফসোস, তুমি স্বামীরে নাম ধইরা ডাকলা।

: কথা ঘুরাবে না। আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছি, তোমার সমস্যা কী?

: আমার কোনো সমস্যা নাই।

: সমস্যা নাই? তুমি সখিনার মাকে কী বলেছ?

: তেমন কিছু তো বলিনি।

: তুমি সখিনার মাকে বলোনি তোমাকে দড়ি এনে দিতে?

: তা অবশ্য বলেছি। কিন্তু তুমি জানলে কীভাবে? সে তো আমাকে কথা দিয়েছিল কাউকে বলবে না।

: বাসায় দড়ি নাই। তাই সে আব্বার কাছে দড়ি কেনার টাকা চেয়েছে।

: কী বললা? সখিনার মা দড়ি কেনার জন্য টাকা চেয়েছে! এই মহিলা তো আসলেই একটা হিটলার।

: সখিনার মা কী, সেটা নিয়ে তোমার মাথা ঘামাতে হবে না। তুমি দড়ি আনতে বলছ কেন, সেটা আগে বলো।

: আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আত্মহত্যা করব।

: আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা হইছে অবশ্যই আত্মহত্যা করবা। কোনো সমস্যা নাই। আমি তোমারে বাধা দেব না। কিন্তু আমার বাবার বাড়িতে কেন? তুমি তোমার বাড়িতে গিয়ে আত্মহত্যা করো। এখানে এসব রংঢং চলবে না।

কুদ্দুস সাহেবের শ্যালক বোনকে থামিয়ে প্রশ্ন করল, তা দুলাভাই হঠাৎ আপনি আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন? আপনি কি কোনো কিছু নিয়ে হতাশ?

: অবশ্যই হতাশ। আমি আমার জীবন নিয়ে খুবই হতাশ।

: কেন আপার সঙ্গে কি আপনার ঝগড়া হয়েছে?

: মাথা খারাপ! তোমার বোনের সঙ্গে ঝগড়া করব আমি? শোনো তাকে নিয়ে আমি সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি। কারণ, মাশা আল্লাহ তার যে শরীর, সে চাইলে যেকোনো সময় আমারে দুই হাতে উঠাইয়া একটা আছাড় মারতে পারে।

: তাহলে সমস্যাটা কোথায়?

: সমস্যা হলো সে আমারে কোনো সম্মান দেয় না। সে বলে আমি নাকি বলদ শ্রেণির মানুষ। আজ সবাই তোমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাবে। অথচ সে আমারে যেতে দেবে না। সে বলেছে, আমি যদি আজ রুম থেকে বের হই, তাহলে সে আমারে দাও দিয়া কোপ দেবে।

: মিথ্যা বলবা না। আমি দাওয়ের কথা বলিনি। আমি বলেছি, বঁটি দিয়া কোপ দেব।

: দেখেছ কত বড় ডাকাত এই মহিলা।

: কিন্তু আপা তুই দুলাভাইকে যেতে দিবি না কেন? উনি গেলে সমস্যা কোথায়?

: কারণ, ওর পছন্দ খারাপ, ওর রুচি খারাপ। সে যে মেয়েকেই দেখে, তাকেই বলে বিশ্ব সুন্দরী।

: আমার রুচি খারাপ! এটা কী বললা! খুশি বেগম, আমি কি তোমাকে পছন্দ করে বিয়ে করিনি?

: সে কারণেই তো বলেছি তোমার পছন্দ খারাপ। আব্বা আমার বিয়ের জন্য হাজার হাজার ছেলে আনছে। কিন্তু কেউ আমারে পছন্দ করে নাই। সবাই বলেছে, আমার রং কালো। আমার চেহারা ভূতের মতো। আমি মুটকি। আর এই ব্যাটা আমারে দেইখাই টাসকি খাইছে। বলে আমি নাকি পরির মতন সুন্দর। মানুষের চোখ এত খারাপ হয় কীভাবে?

: আপা, তোর তো দুলাভাইরে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। উনি না করলে তো এখনো তোর বিয়ে হতো না। রাসেল হেসে বলল।

: অবশ্যই আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমারে পছন্দ করছে ঠিক আছে। কিন্তু এই ব্যাটার পছন্দে আমি তোরে বিবাহ করাব না। তাহলে তোর কপালে খারাপি আছে। শোন, এই বলদের রুচি পরীক্ষা করার জন্য গত রাতে আমার মোবাইল ফোনে পাঁচটি ছবি দেখাইছি। বললাম, ছবি দেখে দশের মধ্যে স্কোর দিয়ে বলো কে কত সুন্দর। যদি তোমার মতামত আমার সঙ্গে মেলে, তবেই তুমি যাওয়ার অনুমতি পাবে।

: তা ফলাফল কী? রাসেল প্রশ্ন করল।

: খুবই ভয়াবহ অবস্থা। সে পাঁচজনকেই দশে দশ দিয়েছে।

: আচ্ছা, কেন দেব না? পাঁচজনই তো সুন্দরী। তাই আমি সবাইকে দশে দশ দিছি। রাসেল শোনো, পাঁচটি মেয়েই অসাধারণ সুন্দরী। তুমি চোখই ফেরাতে পারবে না।

: আপা, দুলাভাই তো ঠিকই বলেছে। পাঁচজন মেয়েই যদি সুন্দরী হয় তো উনি কেন কাউকে কম নম্বর দেবেন।

: শোন, না জেনে কথা বলবি না। ওই পাঁচটির মধ্যে চারটি ছবিই আমার। ব্যাটা বলদ নিজের বউরেও চেনে না!

: ওগুলো কি তোমার ছবি! সে জন্যই তো আমি ভাবছিলাম কেমন জানি চেনা চেনা লাগছে। কুদ্দুস সাহেব মিনমিন করে বললেন।

: দুলাভাই, আপনি নিজের বউকেও চেনেন না। আপা তো ঠিকই বলেছে, আপনার অবস্থা তো আসলেই খারাপ।

: না, এখনো তোকে আসল ঘটনাই বলা হয়নি। পঞ্চম ছবিটা কার ছিল শুনবি?

: কার ছিল, আপা?

: আমাদের বুয়া সখিনার মায়ের ছবি।

রাসেল অবাক হয়ে বলল, আপা, তুই কি সিরিয়াস!

: অবশ্যই সিরিয়াস। এবার বোঝ, আমি কী নিয়ে সংসার করছি। ব্যাটা বলদ সখিনার মায়ের মতো একজন বুড়ি মহিলাকেও দশে দশ দিছে। সুন্দর অসুন্দর তো বোঝেই না। তাই বলে ব্যাটা কি কে বুড়া কে জোয়ান, সেটাও বুঝবে না?

: আচ্ছা দুলাভাই, সখিনার মায়ের দাঁতগুলো তো উঁচু। মুখ বন্ধ করলেও দাঁত বের হয়ে থাকে। তবু আপনে তারে দশে দশ দিলেন কী কারণে?

: শোনো, এটা তার দাঁত, সে এটা মুখের ভেতরে রাখবে নাকি বাইরে রাখবে, সেটা তো আমার মাথাব্যথার বিষয় না।

: কিন্তু তাই বলে আপনার দেখতে খারাপ লাগবে না!

: অবশ্যই না। যদি সে নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করে, তাহলে খারাপ লাগবে কেন।

: আচ্ছা, দুলাভাই সত্যি করে বলেন তো, আপনি কি আসলেই সুন্দর অসুন্দর চেনেন?

: কেন চিনব না? অবশ্যই চিনি। শোনো, আল্লাহ এই দুনিয়ায় কোনো মেয়েকেই অসুন্দর করে বানায় নাই। পৃথিবীর প্রত্যেক মেয়েই সুন্দর।

: প্রত্যেক মেয়েই সুন্দর! আপনি কি বলতে চান উগান্ডার মেয়েরাও সুন্দর?

: অবশ্যই সুন্দর। গায়ের রং কালো না সাদা, এটা কোনো বিষয় না।

: মাই গড। আপা তোর ধারণাই ঠিক। এই লোক আসলেই একটা মফিজ। এই লোকের মাথায় গন্ডগোল আছে। আপা শোন, খবরদার এই লোক যেন কোনোভাবেই আমার জন্য মেয়ে দেখতে না যায়, তাহলে কিন্তু আমিই গলায় দড়ি দেব।

বলেই রাসেল রুম থেকে বের হয়ে গেল।

কুদ্দুস সাহেব স্ত্রীর দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে বললেন, তাহলে কি তোমরা আমাকে আসলেই নিবা না?

: না, তোমাকে আমরা আসলেই নিব না। কারণ, আব্বা তোমাকে খুবই পছন্দ করে। তুমি যদি বলো মেয়ে সুন্দর, তাহলে আব্বা তোমার মতামতকে উপেক্ষা করতে পারবে না।

: আচ্ছা, যাও আমি চুপ থাকব। কোনো মতামত দেব না।

: আমি জানি সেটা তুমি পারবা না। আর তা ছাড়া মেয়ে যদি পছন্দ হয়, আজই আমরা দিন-তারিখ সব ঠিক করে ফেলব। মামা বলেছে ওখানে যৌতুকের কথাও চূড়ান্ত করা হবে। তোমারে আমি চিনি। তুমি যৌতুকের কথা উঠলে আর চুপ থাকবা না।

: সেটা অবশ্য থাকব না। যৌতুক খুবই খারাপ জিনিস। এটা চাওয়া ও নেওয়া দুটিই অপরাধ।

: এ জন্যই তোমাকে যেতে দেব না।

: কিন্তু আব্বা তো আমাকে ছাড়া যাবে না।

: অবশ্যই যাবে। আমি আব্বাকে বলব তোমার পেট খারাপ হয়েছে। তুমি সকাল থেকে টয়লেটে বসে আছ। তোমার পক্ষে কোনোভাবেই যাওয়া সম্ভব না।

: কিন্তু আমার পেট তো খারাপ না।

: অবশ্যই তোমার পেট খারাপ। আমি যখন বলছি তোমার পেট খারাপ, তার মানে তোমার পেট খারাপ।

স্ত্রীর কথা শুনে কুদ্দুস সাহেব খুবই হতাশ হলেন। তিনি বুঝলেন, এই অনুষ্ঠানে তাঁর আর যাওয়া হচ্ছে না। তিনি আর কথা না বাড়িয়ে টয়লেটের দিকে পা বাড়ালেন।

কুদ্দুস সাহেবের স্ত্রী অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন, এই তুমি কোথায় যাচ্ছ?

: টয়লেটে যাচ্ছি।

একটু পরে যাও। আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।

: না, আমাকে এখনই যেতে হবে। কারণ, তুমি বলেছ আমার পেট খারাপ। আমি এইমাত্র সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আজ সারা দিন আমি টয়লেটেই বসে থাকব। আর টয়লেট করে করে টয়লেট ভাসায়ে দেব। আমি আজ তোমাকে বুঝায়ে দেব, পেট খারাপ কাকে বলে, কত প্রকার এবং কী কী। আর শোনো, যাও আমার জন্য একটু দুধ-চিনি নিয়ে আসো।

: দুধ-চিনি দিয়ে কী করবে?

: হারপিকের সঙ্গে মিশিয়ে শরবত বানাব।

: মানে কী! তুমি হারপিক দিয়ে শরবত বানাবে কেন?

: কারণ, সখিনার মা বলেছে এটা নাকি দারুণ টেস্টি একটা শরবত। আমি ঠিক করেছি আজ সারা দিন টয়লেট করব আর হারপিকের শরবত খাব। তুমি চাইলে তুমিও টেস্ট করে দেখতে পারো।

এ কথা বলেই কুদ্দুস সাহেব টয়লেটে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। একবারও পেছনে ফিরে তাকালেন না। তাকালে তিনি দেখতে পেতেন, তাঁর স্ত্রী চোখ বড় বড় করে অবাক বিস্ময়ে বন্ধ দরজার দিকে বোকার মতো তাকিয়ে রয়েছেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: কুদ্দুস সাহেবের মতো সহজ-সরল মানুষগুলোকে আমরা বোকা-বলদ-মফিজ বলি। তবে এরা বোকা হতে পারে, কিন্তু মানুষ হিসেবে এরা অসাধারণ।

বিশেষ দ্রষ্টব্যের বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমাদের দেশে বিবাহের সময় ছেলেপক্ষ যেভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মেয়ের সৌন্দর্য পরখ করে, তা খুবই অমর্যাদাকর। তার ওপর আবার সৌন্দর্য পরীক্ষায় পাস করলেই যে বিয়ে হবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ, সেটা নির্ভর করে যৌতুক দিতে পারার নিশ্চয়তার ওপর। এটা বন্ধ হওয়া উচিত। ছেলেপক্ষের মনে রাখা উচিত, তার পরিবারেও হয়তো কারও না কারও মেয়ে আছে। আর ওই মেয়ের ক্ষেত্রেও এই একই ঘটনা ঘটতে পারে।

লেখকের ই-মেইল: <[email protected]>