প্রবাসে কুচকাওয়াজের নেতৃত্বে

পতাকা হাতে কুচকাওয়াজের নেতৃত্বে লেখিকা। ছবি: লেখিকার মাধ্যমে প্রাপ্ত
পতাকা হাতে কুচকাওয়াজের নেতৃত্বে লেখিকা। ছবি: লেখিকার মাধ্যমে প্রাপ্ত

প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙে মোবাইল ফোনের অ্যালার্মের শব্দে। ১৫ নভেম্বরও অ্যালার্মের শব্দেই ঘুম ভেঙেছিল। তবে সেটা এক ঘণ্টা আগে। সকাল ৬টায়। কেননা, তার একটু পরই শুরু হয়েছিল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান বা স্পোর্টস ডে।

খেলাধুলার এই বিশেষ দিনটি মানেই হাজার হাজার কণ্ঠে চীনা জাতীয় সংগীত, কুচকাওয়াজ, শপথ গ্রহণ, চীনের জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা আর শিক্ষকদের সম্মান প্রদর্শন।

এই দিনকে ঘিরে তাই বছরব্যাপী অপেক্ষা থাকে। থাকে অনেক দিনের প্রস্তুতি। আর আমার জন্য ছিল অন্য রকম প্রাপ্তির। কারণ, আন্তর্জাতিক স্কুলের শিক্ষার্থী হিসেবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের দলের কুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দিয়েছি আমি।

লেখিকা। ছবি: লেখিকার মাধ্যমে প্রাপ্ত
লেখিকা। ছবি: লেখিকার মাধ্যমে প্রাপ্ত

চীনের হুবেই প্রদেশের জিংচু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি আমি। আমার মতো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩৫টি দেশের শিক্ষার্থী আছেন। বিদেশি হিসেবে যাঁরা চীনা সংস্কৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। এবারের আয়োজনটি চলে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত।

প্রথমবার এমন একটি জমকালো আয়োজনে অংশ নিচ্ছি বলে প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম জোরেশোরে। কুচকাওয়াজের সময় কে কোন স্থানে থাকব, কে পতাকা বহন করবেন, কে প্রথম সারিতে ঐতিহ্যবাহী পোশাকে থাকবেন, হাঁটার গতি ও ধরন কেমন হবে—এসবই ছিল প্রস্তুতির বিষয়।

সৌভাগ্যই বলতে হয়। একসময় জানানো হলো আমিই ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পতাকা নিয়ে সবার সামনে হাঁটছি।

পতাকা হাতে শিক্ষকদের সম্মান প্রদর্শন করছেন লেখিকা। ছবি: লেখিকার মাধ্যমে প্রাপ্ত
পতাকা হাতে শিক্ষকদের সম্মান প্রদর্শন করছেন লেখিকা। ছবি: লেখিকার মাধ্যমে প্রাপ্ত

কুচকাওয়াজে হাঁটতে গিয়ে রোমাঞ্চ ভর করল। পাশে মিলিটারি পোশাকে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। অনেকে ফুল নিয়ে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে আছেন। সামনের বড় মঞ্চে আমাদের শিক্ষকেরা।

নির্ধারিত পোশাকে আমাদের দলের সামনে পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আমি। ঠিক সময়ে কুচকাওয়াজ শুরু হলো। আমরা চলতে থাকলাম। হঠাৎ মাইকে চীনা ভাষায় বলে উঠল, এখন পতাকা ও শিক্ষকদের সম্মান প্রদর্শন করতে আসছে ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থীরা।

আমি সামনে থাকা স্বেচ্ছাসেবককে অনুসরণ করছি। যিনি আমাদের ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের নামসহ প্ল্যাকার্ড বহন করছিলেন। আমাকে অনুসরণ করছে পুরো দল।

আমি স্লোগান দেওয়া শুরু করলাম। আমার সঙ্গে অন্যরাও। শিক্ষকেরাও দাঁড়িয়ে আমাদের সম্মান নিলেন। অন্য পাশে দুটি পতাকা টান করে সেনা পোশাকে দাঁড়িয়ে কিছু শিক্ষার্থী। আমি আমাদের পতাকা ধরে আছি ওপরে।

তারপর আমরা কুচকাওয়াজের নির্দিষ্ট সারি থেকে বেরিয়ে মাঠের নির্ধারিত জায়গায় দাঁড়ালাম। এরপর একের পর এক বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা পতাকাকে সম্মান প্রদর্শন করলেন।

মুগ্ধতা কাটিয়ে আমাদের কুচকাওয়াজ পর্ব শেষ হলো। তারপর শুরু হলো ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মূল আয়োজন। এবার প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পালা। খেলতে হবে ও জিততে হবে। আমার অনেক বন্ধু সেই প্রতিযোগিতায় লড়েছেন।

টুম্পা প্রামাণিক: শিক্ষার্থী, জিংচু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হুবেই, চীন।