বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে কিছু ভাবনা

অলংকরণ: তুলি
অলংকরণ: তুলি

যমজ দুই ছেলে নিয়ে রনি আর লীনার ছোট্ট সংসার। ছেলেদের বয়স এখন ১২। স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই চাকরি করতে হয়। ১৫ বছর আগে ইমিগ্রেশন নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিল ওরা। পড়াশোনা শেষ করে নিজেদের জীবন মোটামুটি গুছিয়ে নিয়েছে।

মা-বাবার ইচ্ছায় বিদেশে আসা রনির। দেশে চাকরি করে পুরো পরিবার সাপোর্ট করার সামর্থ্য ওর ছিল না। যত দিন বাবা বেঁচে ছিলেন, দেশে আসা-যাওয়া করে খারাপ কাটছিল না সময়। রনি একবার মাকে নিয়ে এসেছিল এ দেশে। নিজের কাছে রেখে দেবে বলে।

লীনা কাজে চলে যাওয়ার সময় সকালের নাশতা আর দুপুরের খাবার গুছিয়ে দিয়ে যেত। বাচ্চাদের ন্যানি ওদের স্কুল থেকে এনে বাচ্চাদের খাবার গুছিয়ে তাকে বিকেলের নাশতা দিয়ে চলে যেত। রনির মা ইংরেজি জানতেন না। রনির ছেলে নিজে যতটুকু বাংলা বোঝে, ততটুকু জ্ঞান দিয়ে একটা ছোট্ট ডিকশনারি বানিয়ে দিয়েছিল ন্যানিকে। ওদের দাদু কী চাইলে কী দিতে হবে।

বাসায় এসে রনি প্রায় পুরোটা সময় দিতে চেষ্টা করত মাকে। উইকএন্ডে কারও কারও বাসায় নিয়ে যেত বেড়াতে। তারপরও এখানে ফুটফরমাশ খাটার লোক নেই। বাংলা বলার লোক কম ইত্যাদি অভিযোগ ছিল তাঁর। পাঁচ মাস পর দেশে চলে গেলেন। দেশে থাকবেন।

এখন ছেলেকে বলেন, দেশে চলে যেতে। এ বয়সে দেশে গিয়ে চাকরি করে সংসার চালানো সম্ভব নয়। মায়ের যখন শরীর ভালো ছিল, তখন গৃহকর্মীরা কথা শুনত। এখন চুরি করা সর্বোপরি তার দেখাশোনা ভালো করে না করার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

ইদানীং কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতে প্রায়ই বিকেল বা সন্ধ্যা হয়ে যায় রনির। ভ্যাঙ্কুভারে শীত আসি আসি করছে। রাস্তার দুই পাশে গাছের পাতাগুলো রং বদলে এক অপরূপ রং ধারণ করেছে। একটু আগে বের হতে পারলে কিছুটা হলেও এ সৌন্দর্য দেখার সৌভাগ্য হয় রনির।

এক বিষণ্ন বিকেলে মায়ের জন্য রনির মনটা খুব খারাপ। রনি ভাবছিল তার মায়ের কথা। তার মতো যাদের কেউ নেই দেশে বা জীবিকার জন্য ব্যস্ত দেশেরই ভিন্ন শহরে, তাদের মা–বাবার কথা। তাদের জন্য বৃদ্ধাশ্রম এখন সময়ের দাবি। যেখানে থাকবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ সার্বক্ষণিক দেখে রাখার ও যত্ন করার মানুষ। জীবনের শেষ বছরগুলো যেন গৃহকর্মীর হাতে গয়না বা টাকার জন্য অকালে শেষ না হয়ে যায়।

আর যেসব বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কেউ নেই, তাঁদের জন্য সরকারি-বেসরকারি বা বৈদেশিক অনুদানেও গড়ে উঠতে পারে বৃদ্ধাশ্রম। যাঁদের ত্যাগে আজকের তরুণ সমাজ, তাঁদের দেখে রাখা আমাদেরই তো কর্তব্য।