টরন্টোতে বাংলা ভাষা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত

বাংলা স্কুল টরন্টোর উদ্যোগে ‘প্রবাসে বাংলা শেখার প্রয়োজনীয়তা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
বাংলা স্কুল টরন্টোর উদ্যোগে ‘প্রবাসে বাংলা শেখার প্রয়োজনীয়তা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

বাংলা স্কুল টরন্টোর উদ্যোগে ‘প্রবাসে বাংলা শেখার প্রয়োজনীয়তা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাপ্তাহিক বাংলা মেইল, সিবিএন২৪, বিসিএস, এইচএসডিএনআইসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সহযোগিতায় গত শনিবার স্থানীয় মিজান অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় এ সেমিনার।

সেমিনারে বক্তরা বলেন, সবাইকে বুঝতে হবে যে বাঙালির অভিবাসী সন্তানেরা যদি বাংলা না শেখে তবে বাংলা পত্রিকা, বাংলা টিভির অস্তিত্ব একদিন বিলীন হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে ভাষাশহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক দেওয়ার মানুষের অভাব দেখা দিতে পারে।

ছুটির দিনের বেলা ১১টায় শুরু হওয়া সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলা স্কুলের সভাপতি ও ফার্মাসিস্ট ফখরুদ্দিন মাসুদ ও মূল প্রবন্ধ উপাস্থাপন করেন বাংলা স্কুলের উপদেষ্টা পরিষদের সমন্বয়কারী আব্দুল হালিম মিয়া। স্বাগত বক্তব্য দেন স্কুলের অন্যতম উপদেষ্টা আখলাক হোসেন।

সভায় বক্তারা বলেন, কানাডায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পরিবার থেকে বাংলা শিক্ষার চাহিদা প্রস্তুত করতে হবে৷ বাংলা শিক্ষার জন্য আমাদের পারিবারিক চর্চা ও যোগাযোগ বাড়াতে হবে। বাংলা ভাষা যেন আঞ্চলিকতামুক্ত হয়, সেই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। পিতা–মাতাকে বুঝতে হবে কোনটা আমাদের প্রয়োজন এবং কোনটা আমাদের উপকার। আমাদের বুঝতে হবে মেনে নেওয়া এবং মনে নেওয়ার ব্যাপারটি। বাসায় বাংলা বলতে হবে। এতে বাচ্চারা বাংলা ভুলে যাবে না। এ ক্ষেত্রে মায়েদের ভূমিকা অনেক৷ তাঁদের সন্তানদের সময় দিতে হবে। সন্তানেরা যেন বাংলা ভাষা ব্যবহার করে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। শিশুদের বাংলা বলতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সন্তানদের আমাদের শিকড় সম্পর্কে জানাতে হবে। ছেলেমেয়েদের বাংলাদেশের গল্প বলতে হবে, ইতিহাস বলতে হবে। সন্তানদের বোঝাতে হবে যে বাংলা ভাষা পৃথিবীর সপ্তম ভাষা, এ ভাষা যেকোনো দেশেই প্রয়োজন হতে পারে।

‘প্রবাসে বাংলা শেখার প্রয়োজনীয়তা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার অতিথি ও আগত দর্শকেরা। ছবি: সংগৃহীত
‘প্রবাসে বাংলা শেখার প্রয়োজনীয়তা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার অতিথি ও আগত দর্শকেরা। ছবি: সংগৃহীত

বক্তারা বলেন, বাংলা ভাষা কানাডার বিভিন্ন সেক্টরে অন্তর্ভুক্তি করার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে৷ যেমন জি-১ ড্রাইভিং টেস্টে বাংলা ভাষা অন্তর্ভুক্তি করার প্রচেষ্টা নিতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের পাঁচটি ভাষা শিখতে তাদের কোনো মানসিক চাপের মধ্যে পড়তে হয় না বরং এতে তাদের মানসিক বিকাশ ঘটে। তারা চৌকস হয়। এমনভাবে আমাদের বাংলা ভাষা আমাদের শিশুদের শিখতে হবে যেন তারা আনন্দ নিয়ে শিখতে পারে।

বক্তারা আরও বলেন, সবাইকে বুঝতে হবে যে বাঙালির অভিবাসী সন্তানদের যদি বাংলা না শেখানো হয়, তবে বাংলা পত্রিকা, বাংলা টিভির অস্তিত্ব একদিন বিলীন হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে ভাষাশহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক দেওয়ার মানুষের অভাব দেখা দিতে পারে। ফলে স্বল্প মেয়াদি স্কুলের পাশাপাশি, দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি যেমন ওয়ান স্টপ সেন্টার হিসেবে অদূরভবিষ্যতে বাংলা স্কুলের একটা কমিউনিটি সেন্টার গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়, যেখানে একই সঙ্গে স্কুলের পাশাপাশি, সুইমিংপুল, বাস্কেট বল, শরীরচর্চার কেন্দ্র, লেকচার থিয়েটার থাকবে, যেটা সব বাঙালির মিলনকেন্দ্রে পরিণত হবে।

সেমিনারে বিসিএসের নির্বাহী পরিচালক ডক্টর নাসিমা আখতারের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন শেরিডন কলেজের সাবেক সিনেট স্পিকার ডক্টর মোজাম্মেল খান, উইমেন ডেভলপমেন্ট সোশ্যাল সার্ভিস প্রোভাইডার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক নিউজ রিডার আসমা আহমেদ, বিশিষ্ট লেখক, সাহিত্যিক ও গবেষক সুব্রত কুমার দাস, ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির প্রক্টর ও রিসার্চার এবং সাবেক ছাত্রনেতা ডক্টর মনজুরে খোদা টরিক, সেন্টেনিয়াল কলেজের অধ্যাপক ও প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর টিটো খোন্দকার, বিশিষ্ট লেখিকা তাসরীনা শিখা, বাংলাদেশি কানাডিয়ান ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট রিমন মাহমুদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকিউলার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানিয়া সুলতানা। এ ছাড়া বক্তব্য দেন কমিউনিটির নেতা ও নাট্যকার আহমেদ হোসেন, বিশিষ্ট আবৃত্তিকার ও নন্দন টেলিভিশনের পরিচালক দিলারা নাহার বাবু, কৃষিবিদ মোস্তফা কামাল হিমু, এনআরবি টেলিভিশনের নির্বাহী পরিচালক ও সাপ্তাহিক বাংলা মেইলের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ইউসুফ শেখ, চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সভাপতি ইলিয়াস মিয়া, অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম, বিশিষ্ট রিয়েলটর রোকেয়া সুলতানা, চিকিৎসক কামরুন নাহার উর্মি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ, লেখিকা রোকেয়া পারভিন, সাব্বির আহমেদ, নাজমা হক, রাবেয়া হোগান, রেজানুল ফেরদৌস প্রমুখ।