৭ ডিসেম্বর লন্ডনে বেদের মেয়ে জোছনার পালা

বেদের মেয়ে জোছনার পালা এবার একাডেমিক ভ্যানু ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিসের ব্রুনেই গ্যালারিতে মঞ্চায়িত হবে ৭ ডিসেম্বর। ছবি: সংগৃহীত
বেদের মেয়ে জোছনার পালা এবার একাডেমিক ভ্যানু ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিসের ব্রুনেই গ্যালারিতে মঞ্চায়িত হবে ৭ ডিসেম্বর। ছবি: সংগৃহীত

ইস্ট লন্ডন ও লিডসে হল উপচে পড়া দর্শকদের উপস্থিতি ও করতালি সহকারে দাঁড়িয়ে সম্মান জানানো সম্মোহনী পরিবেশনার পর বেদের মেয়ে জোছনার পালা এবার একাডেমিক ভ্যানু ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিসের ব্রুনেই গ্যালারিতে মঞ্চায়িত হবে। আগামী শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ছয়টায় বেদের মেয়ে জোছনার পালা হবে।

কবি টি এম আহমেদ কায়সারের পরিচালনায় লোকবাংলার জনপ্রিয়তম এই যাত্রাপালার ইংরেজি নাম ক্লাস কনফ্লিক্ট।

সোয়াস সাউথি এশিয়া ইনস্টিটিউট ও রাধারমণ সোসাইটির প্রযোজনায় অনুষ্ঠিতব্য এ বিনির্মাণবাদী পরিবেশনায় গল্প কথক বা বয়াতির ভূমিকায় রয়েছেন কায়সার নিজেই। নাম চরিত্রে অভিনয় করছেন সোনিয়া সুলতানা, রাজার চরিত্রে কবি ও সাংবাদিক সারওয়ার ই আলম, যুবরাজ চরিত্রে সোহেল আহমেদ। এ ছাড়া কিবোর্ড ও কণ্ঠ সহযোগিতায় শিল্পী অমিত দে, তবলায় পিয়াস বড়ুয়া, জল্লাদ ও রাজার পাইকের ভূমিকায় সুহেল মিয়া ও জাবেদ কাদির, ওঝা চরিত্রে কাজী নজরুল ইসলাম। পালার বিভিন্ন সেকুয়েন্সে সংগীত পরিবেশন করবেন জেসি বড়ুয়া। পালাগানের সহকারী পরিচালক হিসেবে আছেন কবি শামীম শাহান ও শাহীন মিতুল।

টি এম আহমেদ কায়সার বলেন, বাংলার এই লোকগাথাকে আজকের বিশ্বরাজনীতির এলিগরি হিসেবে আমরা উপস্থাপন করছি। বাইবেলে ইভের মন্ত্রণাদাতা ইডেন গার্ডেনের সেই সর্প, মেসোপটেমিয়ান বীর গিলগামেশের পরমায়ু হরণ করে নিয়ে যাওয়া সেই একই সর্পই নতুন মুখোশ নিয়ে নেহাত এই বাংলা লোকগাথার যুবরাজকে ছোবল হানতে দেখি। তাতেই প্রকট হয়ে উঠতে দেখি শ্রেণিবৈষম্যের রাজনীতি।

টি এম আহমেদ কায়সার জানান, এই পালাগানটি একঅর্থে এর চিরন্তন লোক-সাঙ্গিতিক ঐতিহ্য নিয়ে তো হাজির হবেই, উপরন্তু, এতে যুক্ত হবে বৈশ্বিক মিথ ও নানা মাত্রিক মেটাফর ও এলিগরিসহ এক গভীর বিনির্মাণবাদী উন্মোচন। সোয়াসের ব্রুনেই গ্যালারিতে প্রাচীন বাংলার এই সংগীত ও লোক-থিয়েটারের মঞ্চায়ন নিশ্চিতই আমাদের জন্যে আনন্দের ঘটনা। আমরা অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি; লন্ডনের বিভিন্ন প্রান্তের দর্শকেরাও, ধারণা করি এই নতুন ধরণের নাট্য-সংগীত দেখতে হাজির হবেন যথারীতি।

সোয়াস সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের শিল্প পরিচালক, ইতিহাসবিদ ড. সংযুক্তা ঘোষ বলেন, যাত্রাপালা আবহমানকাল ধরেই গ্রামীণ জনপদে একদিকে যেমন বিনোদন জুগিয়েছে, অন্যদিকে গ্রামীণ জনপদকে রাজনীতিমনস্কও করে তুলেছে, এমনই এক জনপ্রিয় যাত্রাপালার নাম বেদের মেয়ে জোছনা। শক্তিশালী থিমের কারণে এ পালা নিয়ে দুই বাংলায় সিনেমা হয়েছে, টিভি সিরিজ হয়েছে। কিন্তু কায়সারের ইন্টারপ্রিটেশনে এই কাহিনিতে যুক্ত হয়েছে আধুনিকতা ও বিশ্বরাজনীতির নানা অনুষঙ্গ।

উল্লেখ্য, বাংলার প্রাচীনতম গ্রামীণ থিয়েটার হিসেবে পরিচিত এই পালাগান বা বাংলা অপেরাকে নানা রকম মিথের সঙ্গে যুক্ত করে বাঙালি ও অবাঙালি দর্শকদের জন্য ইউরোপে এক সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী পরিবেশনার সূচনা করেছেন কায়সার ও তাঁর সংগঠন রাধারমণ সোসাইটি।

*সুদীপ্তা চৌধুরী, লন্ডন, যুক্তরাজ্য