বিবাহবার্ষিকী এবং ভেজাল

আজ আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী। আমি আর আমার স্ত্রী ঠিক করেছি আজ সারা দিন দুজনে রিকশায় ঘুরব। আমার স্ত্রী সকাল থেকেই সাজগোজ নিয়ে খুবই ব্যস্ত। আমাকে বলল তাড়াতাড়ি রেডি হতে। আমাকে রেডি হতে বলার ১ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের মধ্যে আমি রেডি। কিন্তু তার সাজগোজ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। তার সাজগোজ শেষ হওয়ার অপেক্ষা করতে করতেই একসময় আমি ড্রয়িংরুমের সোফাতেই আবারও ঘুমিয়ে পড়লাম। তার সাজগোজ শেষ হলে সে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে ওঠাল। তারপর আদুরে গলায় বলল,

: জান, দেখো তো আমাকে কেমন লাগছে?

আমি আধা খোলা ঘুমন্ত চোখে তাকে দেখলাম, তারপর বললাম,

: হাই, জেনিফার।

: মানে কী? তুমি কাকে জেনিফার বলছ?

অবাক হয়ে আমাকে প্রশ্ন করল।

: মানে কিছু না। আসলে তোমাকে জেনিফার লোপেজের মতো লাগছে তো, তাই বললাম।

: শোনো, তোমার চোখে এখনো ঘুম। তাই তুমি উল্টাপাল্টা বলছ। যাও বাথরুমে গিয়ে আগে চোখেমুখে পানি দিয়ে আসো।

বাথরুমে গিয়ে ভালো করে চোখেমুখে পানি দিয়ে এসে সামনে দাঁড়ালাম।

: ওকে, এখন বলো আমাকে কেমন লাগছে।

: একবার তো বললাম তোমাকে কেমন লাগছে।

: ওটা তো ঘুম চোখে বলেছ। এখন আবার ভালো করে দেখে তারপর বলো।

: শোনো চোখে ঘুম থাক বা না থাক, সেটা কোনো বিষয় না। আমার কাছে তুমি সব সময় বিশ্ব সুন্দরী। তোমাকে আসলেই মধুবালার মতো লাগছে।

: তুমি কিন্তু একটু আগে বলেছিলে জেনিফার লোপেজ।

: জেনিফার লোপেজ বলেছিলাম নাকি? আসলে তোমার রূপে মাথা এলোমেলো হয়ে গেছে। তবে কী জানো, দুটোই সত্য। তোমাকে জেনিফার লোপেজ আর শাবনূর দুজনের মতোই লাগে।

: তোমার সমস্যা কী? প্রথমে বললা জেনিফার লোপেজ, তারপর মধুবালা আর এখন বলছ শাবনূর। তুমি কি আমাকে টিটকারি করছ?

: টিটকারি কেন করব? আসলে তোমাকে ডান পাশ থেকে দেখলে মধুবালা আর বাঁ পাশ থেকে দেখলে শাবনূরের মতো লাগে। আর যখন সামনের থেকে দেখি, তখন জেনিফার লোপেজের মতো লাগে। তুমি হলে থ্রি ইন ওয়ান।

: শোনো, চাপা মারারও একটা সীমা থাকা উচিত।

: তোমাদের মেয়েদের এই এক সমস্যা। স্বামী প্রশংসা করলে বিশ্বাস করতে চাও না। অথচ অন্য কেউ যখন মিথ্যা প্রশংসা করে, তোমরা সেটাও বিশ্বাস করে বসে থাকো। শোনো, তোমাকে একটা উপদেশ দিই। সব সময় স্বামীর কথা বিশ্বাস করবে। কারণ, স্বামী হচ্ছে আপনজন।

: কথা সত্য। কিন্তু তুমি তো আর স্বামী নও। তুমি হচ্ছ জোকার শ্রেণিভুক্ত একটি প্রাণী। তোমার যে কোনটা ফান আর কোনটা ফান না, সেটা বোঝা মুশকিল।

: আফসোস, এত দিনেও স্বামীরে চিনলা না। শোনো, এটা ফান না। তোমাকে আসলেই সুন্দর লাগছে। এত সুন্দর লাগছে যে তোমাকে নিয়ে এখন আমার বাইরে বের হতেই ভয় করছে।

: মানে কী!

: আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তোমাকে নিয়ে এখন রাস্তায় বের হলেই সন্ত্রাসীরা তোমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবে। এখন তুমিই বলো, আমি তো আর নায়ক না। আমি কীভাবে একা ১৫-২০ জনের সঙ্গে ফাইট দেব? তাই একটু ভয় পাচ্ছি। আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়?

টিটকারির সুরে বলল,
: কী কাজ করতে চাও, শুনি।

: আগে রাজা-বাদশাহরা যেভাবে কোমরে তলোয়ার নিয়ে বের হতো, ভাবছি আজ বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সেভাবে কোমরে বেল্টের সঙ্গে একটি বঁটি ঝুলিয়ে বের হব। রাস্তায় যে ব্যাটাই সামনে আসবে, তাকেই বঁটি দিয়ে ঘ্যাচাং করে কোপ দিয়ে দেব। আইডিয়াটা কেমন?

দেখলাম ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। থতমত খেয়ে বললাম,

: এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? আইডিয়াটা পছন্দ হয়নি?

: আচ্ছা, তুমি কি এই জীবনে কখনো সিরিয়াস হবা না। একটা ছোট্ট সাধারণ প্রশ্ন করেছিলাম। সোজা উত্তর দেবে, ভালো লাগছে বা লাগছে না। কিন্তু তুমি শুধু প্যাঁচাচ্ছ। আসলে তোমারে প্রশ্ন করাটাই আমার ভুল হয়েছে।

কথাগুলো বলে রাগ করে বউ অন্য রুমে চলে গেল। এ তো দেখি মহাসমস্যা। এত সুন্দর সুন্দর নায়িকার সঙ্গে তুলনা করলাম, তাও তার পছন্দ হলো না। তাই ঠিক করলাম এবার নেগেটিভ কিছু বলব। সাহস নিয়ে তার সামনে গিয়ে বললাম,

: শোনো, আর কোনো ফাজলামি নয়, আমি এখন খুবই সিরিয়াস। তোমাকে জেনিফার লোপেজ, মধুবালা বা শাবনূর—কারও মতোই লাগছে না। আসলে আমি এতক্ষণ তোমাকে মিথ্যা বলছিলাম।

: তাই! তা আমাকে কার মতো লাগছে?

ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করল।

: এটা খুবই জটিল প্রশ্ন। ঠিক বুঝতে পারছি না কার মতো লাগছে। আসলে কী জানো, তোমার চেহারার কাটিংটাই জানি কেমন। বোঝা যায় না।

: তাই! এতক্ষণ কতজনের সঙ্গে তুলনা করলে, আর এখন তুমি আমার চেহারার কাটিংটাই ধরতে পারছ না? ঠিক আছে, তাহলে আমি তোমাকে একটু সাহায্য করি। দেখ, ধরতে পার কি না। আচ্ছা দেখ তো আমাকে দেখতে রহিমার মায়ের মতো লাগছে কি না?

ভুরু দুটি কুঁচকে চোখ দুটিকে ছোট করে প্রশ্ন করল। রহিমার মা নামে আমি কাউকে চিনি বলে এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। ভাবলাম হয়তো রহিমার মা সুন্দরী কেউ হবে। তাই তাকে খুশি করার জন্য বললাম,

: দাঁড়াও আবার ভালো করে দেখে নিই। এই তুমি তো ঠিকই বলেছ, আসলেই তোমাকে রহিমার মায়ের মতো লাগছে।

: কী বললা! আমাকে বুয়ার মতো লাগছে?

চিৎকার করে উঠল।

: মাই গড, আমি কখন বললাম তোমাকে বুয়ার মতো লাগছে! আমি বলেছি তোমাকে রহিমার মায়ের মতো লাগছে।

স্থির দৃষ্টিতে সে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। আমি ঢোক গিলে বললাম,

: এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?

সে শান্ত স্বরে টেনে টেনে বলল,

: আমাদের বুয়ার মেয়ের নাম রহিমা।

বুঝলাম, ভেজাল অলরেডি বাধিয়ে ফেলেছি। মনে মনে বললাম, হে মাবুদ রক্ষা করো। কাঁচুমাচু হয়ে বললাম,

: তাই নাকি! বিশ্বাস করো এ তথ্য আমার জানা ছিল না। আমি তো জানি ওনার নাম সখিনা। আসলে কী জানো, খোদার দুনিয়ায় এখনো অনেক কিছু জানার বাকি আছে। আফসোস, আমাদের জীবনটা এত ছোট যে সবকিছু জেনে দুনিয়া থেকে যেতে পারব না।

: কথা ঘুরাবা না। আগে বলো তুমি কেন বললা আমাকে বুয়ার মতো লাগছে, আমাকে অসুন্দর লাগছে।

: শোনো, আমি একবারও বলিনি তোমাকে বুয়ার মতো লাগছে। আর যদি তোমাকে বুয়ার মতো লাগছে বলেও থাকি, এর মানে এই নয় যে তুমি অসুন্দর। কারণ, আমাদের বুয়া অসুন্দর না। উনি কিন্তু যথেষ্ট রূপবতী।

: তাই নাকি! দেখেছ তোমার চরিত্র কত খারাপ! তুমি এখন কাজের বুয়ার দিকেও চোখ দিচ্ছ।

: মাই গড, তুমি তো দেখছি আমাকে এখন চরিত্রহীন বানানোর চেষ্টা করছ। আমি তো শুধু...।

: খবরদার, তুমি আমার সঙ্গে কথা বলবে না। একটা মানুষ কতটা খারাপ হলে নিজের বউকে বলে বুয়ার মতো লাগছে।

: থামো, তোমার সমস্যা কী? তোমাকে এত সুন্দর সুন্দর নায়িকার সঙ্গে তুলনা করলাম, তোমার পছন্দ হলো না। আমারে ফুসলায়ে, কৌশলে আমার মুখ দিয়ে বলালে রহিমার মায়ের মতো লাগছে। আর এখন আমাকে বলছ চরিত্রহীন? শোনো, তোমাকে ভয়ে একটা কথা এর আগে কখনো বলিনি। আজ বলছি। আমি এক শ ভাগ নিশ্চিত তোমার মাথায় সমস্যা আছে।

: কী বললা, আমার মাথায় সমস্যা আছে!

: অবশ্যই সমস্যা আছে। শোনো আজ সব প্রোগ্রাম ক্যানসেল। এখন তোমাকে আমি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। আর দেরি করা ঠিক হবে না। দ্রুত তোমার চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

: কী বললা, তুমি আমার চিকিৎসা করবা? তার মানে আমি পাগল?

পুরো ঘর কাঁপিয়ে চিৎকার করে কথাগুলো বলল। আমি মাথাটাকে যথাসম্ভব ঠান্ডা রেখে শান্ত স্বরে বললাম,

: যাও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম। ডাক্তারের কাছে যাব। তবে তোমাকে দেখানোর জন্য না। আমি আমারে দেখাব। আসলে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একটা থ্রো চেকআপ দরকার। আমার ধারণা, আমার অবশ্যই কোনো না কোনো সমস্যা আছে। না হলে আমি এখনো বেঁচে আছি কীভাবে? কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে তো তোমার মতো পাগলের সঙ্গে সংসার করে বেঁচে থাকার কথা না।

: তোর এত বড় সাহস, তুই আমারে পাগল বলিস? যা, তোর সঙ্গে আমি আর সংসারই করব না। আমি এই সংসারের মুখে ঝাঁটা মারি।

: শোনো, সংসার না করলে না করবা, কিন্তু ঝাঁটা মারতে পারবা না। যদি মারতেই হয় ভালো কিছু মারবা। কারণ, ঝাঁটা একটা খুবই নোংরা জিনিস।

: ঝাঁটা নোংরা জিনিস? ঝাঁটা মারলে তোর সমস্যা হয়? যা তাহলে ঝাঁটা মারব না, অন্য কিছু মারব।

: সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। তা কী মারবা বলে ঠিক করেছ?

: গু মারব, গু।

: কোনো দরকার নেই। তুমি ঝাঁটাই মাইরো। ঝাঁটা খুবই দরকারি জিনিস। ঝাঁটা ছাড়া এই দুনিয়া অচল।

: এই, তোমার কি ধারণা আমি তোমার সঙ্গে ফাজলামি করছি? তুমি কি আমাকে তোমার মতো জোকার মনে করো? শোনো, যথেষ্ট হয়েছে, তোমার সঙ্গে আর না। আমি এই সংসারে আর থাকব না। আমি এখনই এই সংসার ছেড়ে চলে যাব।

: এটা কী বললা? তুমি তো আমাকে এভাবে ছেড়ে যেতে পারো না। আজ আমাদের শুভ বিবাহবার্ষিকী।

: তোর শুভ বিবাহবার্ষিকীতে আমি লাথ্‌থি মারি।

বলেই সজোরে দরজায় লাথি মারল এবং সঙ্গে সঙ্গে ও মাগো বলে ব্যথায় নিজের পা ধরে বসে পড়ল।

: তুমি বললা বিবাহবার্ষিকীতে লাথি মারবা। কিন্তু লাথি তো মারলা দরজায়। তুমি তো দেখি আমার দরজাটা ভাঙবা।

: কী! আমি পায়ে ব্যথা পেলাম সেটা কিছু না? তোমার কাছে দরজা বড় হলো?

: শোনো, তোমার তো পা দুইটা। একটায় ব্যথা পেলে অন্যটা আছে। কিন্তু দরজা তো একটা। এটা তো তোমাকে বুঝতে হবে।

: মাই গড, আল্লাহ এই ব্যাটারে কোন মাটি দিয়ে বানাইছে! না, এই বদমাশ ব্যাটার সঙ্গে আর এক মুহূর্তও না।

বলেই দরজা খুলে বাইরে বের হলো। আমি দৌড় দিয়ে দরজার কাছে এসে বললাম,

: এই তুমি একা একা কোথায় যাচ্ছ?

: মিরপুর যাচ্ছি। তোমার কোনো সমস্যা আছে?

: না, তা নেই। কিন্তু তাই বলে তুমি এখন চিড়িয়াখানায় যাবা! শোনো, তুমি যদি এভাবে বিবাহবার্ষিকীতে স্বামীকে বাদ দিয়ে বান্দরের সঙ্গে সময় কাটাও, তাহলে মানুষ কী বলবে?

: বান্দরের কাছে তুই যা। বান্দরের সঙ্গে তুই সময় কাটা, ব্যাটা বদমাশ। আমি চিড়িয়াখানা না, আমি বাবার বাসায় চলে যাচ্ছি।

: দাঁড়াও তোমার সঙ্গে আমিও যাব। অনেক দিন শ্বশুরের বাসায় যাওয়া হয় না। যাই একটু ভালো-মন্দ খেয়ে আসি।

: খবরদার, আমার পিছে পিছে আসবে না। আসলে ইভ টিজিংয়ের কথা বলে পাবলিকের হাতে তোমারে আমি গণপিটুনি খাওয়াব।

বলেই হন হন করে চলে গেল। আমি স্ট্যাচুর মতো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। গণপিটুনির ভয়ে তার পিছে পিছে যাওয়ার আর সাহস হলো না। কারণ, ওর পক্ষে সবই সম্ভব।

মানুষ নাকি অধিক শোকে পাথর হয়ে যায়। কিন্তু আমি অধিক শোকে লোহা হয়ে গেছি। আজব, এত সুন্দর শুভ একটা দিনকে এই নারী কীভাবে তছনছ করে দিল।

সিনেমায় দেখেছি, নায়িকা যখন নায়ককে ছেড়ে চলে যায়, নায়ক তখন দুঃখে বিরহের গান গায়। আমারও এখন একটা বিরহের গান গাইতে খুবই ইচ্ছা হচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে কেন জানি কোনো দুঃখের গানই মনে পড়ছে না। অনেক চেষ্টার পর হঠাৎ একটা গান মনে এল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে গানটা দুঃখের গান না। কিন্তু কিছুই করার নেই। যেহেতু এখন অন্য কোনো গান মনে আসছে না, তাই যেটা মনে এসেছে সেটা গাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিলাম। খোলা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দুঃখ দুঃখ কণ্ঠে, করুণ সুরে উচ্চ স্বরে গেয়ে উঠলাম,

ধিংকা চিকা ধিংকা চিকা ধিংকা চিকা রে এ এ এ

ধিংকা চিকা ধিংকা চিকা ধিংকা চিকা এ এ এ

বারা মাহিনো মে বারা তরিকাছে

তুঝকো পেয়ার জুতাওঙ্গা রে

ধিংকা চিকা ধিংকা চিকা ধিংকা চিকা রে এ এ এ...

চোখ বন্ধ করে মাথা-শরীর ঝাঁকিয়ে কোমর দুলিয়ে গানটি গাইছিলাম। গানটি গাইতে গাইতে চোখ খুলে হতভম্ব হয়ে গেলাম। দেখলাম, বউ সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আর অবাক হয়ে মুখ হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। একটু পর সে শান্ত স্বরে বলল,

: মাই গড, এটা আমি কী দেখলাম। এই বুইড়া দামড়া এটা কী করছে? আমার তো বান্দর দেখতে আর চিড়িয়াখানা যাওয়ার দরকার নেই। বান্দর তো আমার ঘরের মধ্যেই আছে।

: আসলে হয়েছে কী...

: না না, তোমার ব্যাখ্যা দেওয়ার কোনো দরকার নেই। আমি আরও ভাবলাম বিবাহবার্ষিকীর মতো এমন একটা দিনে একা রেখে চলে যাচ্ছি, বেচারা কষ্ট পাবে। তাই ফিরে আসছিলাম। কিন্তু এখন তো দেখছি এই ব্যাটা মহা আনন্দে আছে। গান গাইছে আবার কোমর দুলিয়ে নাচছে! বউ চলে গেলে মানুষ যে এত খুশি হয়, এটা আমার জানা ছিল না।

: না না, বিশ্বাস করো আমি কোনো আনন্দে নেই। তুমি চলে যাওয়ায় আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। তাই সেই কষ্ট ভোলার জন্য তোমাকে মনে করে বিরহের গান গাচ্ছিলাম।

: বদমাশ ব্যাটা ধিংকা চিকা বিরহের গান! ধিংকা চিকা কষ্টের গান? তুমি কি আমার সঙ্গে মশকরা করো? দুনিয়ার কোনো মানুষ কষ্টের মধ্যে ধিংকা চিকা গায়?

: শোনো গানের কথাগুলো আনন্দের হলেও আমি কিন্তু করুণ সুরেই গাইছিলাম। আমার গলায় কিন্তু আবেগ ছিল।

: তুমি আমারে করুণ সুর চিনাও? আর যে বান্দরের মতো নাচতেছিলা ওটা কী ছিল? শোনো, তোমার সঙ্গে আমি আর নেই। আমি চলে যাচ্ছি। আমি এবার ফাইনালি বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।

বলেই উল্টো ঘুরে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগল। আমি পেছন থেকে বলে উঠলাম,

: শোনো, যাওয়ার আগে একটা সাহায্য করে যাও প্লিজ। আমাকে একটা বিরহের গানের কলি বলে যাও। যাতে গানটা গেয়ে মনটা একটু হালকা করতে পারি। কেন জানি এই মুহূর্তে কোনো দুঃখের গানই মনে আসছে না।

আমার কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে রক্তচক্ষু নিয়ে আমার দিকে কেমন করে জানি তাকাল। ভয় পেয়ে বললাম,

: থাক লাগবে না। তুমি যাও। আমি ইউটিউবে খুঁজে বের করে নেব।

: শালা, মেন্টালের মেন্টাল।

বলেই হন হন করে চলে গেল। আমি বোকার মতো তার গমন পথে তাকিয়ে রইলাম। মনে আবার কষ্ট অনুভব করলাম। সেই মুহূর্তে আরেকটা গান মনে পড়ল। কিন্তু একই সমস্যা, এটাও বিরহের গান না। কী আর করা। দরজার সামনে দাঁড়িয়েই কোমর দুলিয়ে নতুন গান শুরু করলাম,

ধুম মাচালে ধুম মাচালে ধুম,

ধুম মাচালে ধুম মাচালে ধুম

ধুম ধুম ধু...

এ পর্যন্ত গেয়ে থেমে গেলাম। কারণ, দেখলাম সে আবারও সিঁড়ির আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে আমার কাণ্ড-কারখানা দেখছে। তার সঙ্গে চোখাচোখি হতেই চিৎকার করে বলল,

: বদমাশ ব্যাটা, তুই আবারও নাচতাছোস? আমি বুঝি না তোর মনে এত আনন্দ আসে কোথা থেকে।

আমি আসলেই বুঝতে পারিনি সে আবার ফিরে আসবে। ঘটনার আকস্মিকতায় কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। তাই লজ্জা এবং ভয়ে তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম।

বি. দ্রষ্টব্য:
ভাবছি এখন থেকে সবকিছুতেই সিরিয়াস হব। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কেন জানি সিরিয়াস হতেই ইচ্ছা করে না। আসলে একটাই তো জীবন, এত সিরিয়াস হওয়ার কী আছে?

বি. দ্রষ্টব্যের বিশেষ দ্রষ্টব্য:
এ লেখাটি মজা করার জন্য লেখা। এর মধ্যে শিক্ষণীয় কিছু খোঁজার চেষ্টা না করাই ভালো। আর সব সময় সবকিছুর মধ্যে শিক্ষণীয় কিছু খুঁজতেই হবে, তার তো কোনো মানে নেই, তাই না? শিক্ষা লাভের জন্য তো দুনিয়ায় অনেক কিছুই আছে।

* ইমদাদ বাবু, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
[email protected]