অস্ট্রেলিয়ার নতুন ভিসার হালনাগাদ তথ্য

সিডনি শহরের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
সিডনি শহরের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ায় গত ১৬ নভেম্বর থেকে চালু হয়েছে দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজের সুযোগ নিয়ে আসা নতুন দুটি ভিসা। এই নতুন স্কিলড রিজিওনাল প্রভিশনাল ভিসাগুলোয় দক্ষ অভিবাসীরা দেশটিতে প্রথমে অস্থায়ী ও পরে স্থায়ীভাবে অভিবাসী হতে পারবেন।

অস্ট্রেলিয়ার রাজ্যভিত্তিক বিভিন্ন শর্তপূর্ণ এই ভিসা দুটির সাবক্লাস ৪৯১ ও ৪৯৪। আর এই দুই ভিসাধারীরা অন্তত তিন বছর আঞ্চলিক শহরে বসবাসের পর স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন সাবক্লাস ১৯১ স্থায়ী ভিসাতে।

প্রথমটি ৪৯১ ভিসা পয়েন্ট টেস্টভিত্তিক অর্থাৎ শিক্ষা, বয়স, অভিজ্ঞতা, ইংরেজিতে দক্ষতা ও বৈবাহিক অবস্থা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়। কমপক্ষে ৬৫ পয়েন্ট হলে এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্টে (ইওআই) আবেদন করা যাবে। তারপর রাজ্য তার শর্ত পূরণ হলে আমন্ত্রণ জানাবে মূল ভিসায় আবেদন করার জন্য।

স্বভাবতই বেশি পয়েন্ট অর্জনকারী ভিসা আবেদনের জন্য আমন্ত্রণ পেয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে সমসাময়িক আমন্ত্রণ যাঁরা পাচ্ছেন, তাঁরা পেশার ওপর নির্ভর করে ৮৫ থেকে ১০০ পয়েন্টের অধিকারী। আমন্ত্রণ পাওয়া মানেই ভিসা হয়ে গেছে এমনটি না হলেও, তথ্য সঠিক থাকলে ভিসা মঞ্জুর মোটামুটি নিশ্চিত থাকে। তবে পয়েন্ট যত বেশিই হোক, এই ভিসায় আবেদন করতে মূল কিছু শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হবে। অর্থাৎ বয়স সর্বোচ্চ ৪৫, ইংরেজি জানার দক্ষতা প্রতি ক্ষেত্রে কমপক্ষে আইইএলটিএসের ৬ সমপরিমাণ ও পেশাগত স্কিল অ্যাসেসমেন্ট অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পেশাগত মূল্যায়ন সনদ থাকতে হবে।

এসব নিয়ে ইতিমধ্যে বিস্তারিত লেখা হয়েছে তাই নতুন করে রাজ্য ঘোষিত স্পনসর শর্ত নিয়ে কিছু আলোচনা করি।

১৬ নভেম্বর এই নতুন ভিসাগুলো চালু হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার কিছু রাজ্য সাময়িক স্পনসর করা বন্ধ করে দেয়। তারা ঘোষণা দিয়েছিল, নতুন শর্তজুড়ে জানুয়ারি মাসে স্পনসর চালু করবে। যদিও ভিক্টোরিয়া রাজ্য চাকরি নিশ্চিতপত্র থাকা শর্তে স্পনসর প্রদানের ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছিল।

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

এর মধ্যে ৯ ডিসেম্বর নিউ সাউথ ওয়েলস (এনএসডব্লিউ) রাজ্য বিভিন্ন শর্তসহ তাদের স্পনসর খুলে দিয়েছে। পেশা সীমিত করে দুটি তালিকা প্রবাহ ১ ও প্রবাহ ২ প্রকাশ করেছে। এই দুটি প্রবাহের মধ্যে একটিতে যাঁরা নিউ সাউথ ওয়েলসের আঞ্চলিক শহরে ইতিমধ্যে ১২ মাস ধরে থাকছেন বা থাকবেন এবং কাজ করছেন বা করবেন তাঁদের জন্য।

অন্যটি হচ্ছে যাঁরা নিউ সাউথ ওয়েলসের আঞ্চলিক শহরে কমপক্ষে ১২ মাসের পড়াশোনা শেষ করেছেন কিংবা করবেন আর অফশোর অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার বাইরে থেকে যাঁরা আবেদন করবেন তাঁদের জন্য।

ফলে নিউ সাউথ ওয়েলসের স্পনসর সুবিধাটি এত সহজ হবে বলে মনে হয় না। তবে যাঁরা সিডনির আশপাশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ওলংগং, নিউ ক্যাসেলে পড়াশোনা করেছেন বা করছেন তাঁদের জন্য সুবিধা হবে। কারণ, এই শহরগুলোকে নতুন করে আঞ্চলিক শহর হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।

তবে এই জটিলতার মধ্যেও দেশটির আঞ্চলিক শহরে ইতিমধ্যে যেসব অভিবাসী বসবাস করছেন, তাঁরা রাজ্য মনোনয়ন ছাড়াও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের স্পনসর করতে পারবেন আলাদাভাবে। এ ক্ষেত্রে মা-বাবা, চাচা-খালা, নানা-দাদি, ভাগনে-ভাতিজিসহ মামাতো-চাচাতো ভাইবোনেরাও স্পনসর করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে এত নিয়মকানুনের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে না।

উল্লেখিত পরিবারের সদস্যরা আবেদনকারীকে স্পনসর করলেই অনেকটা সহজে আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে রাজ্যের মতো পেশা তালিকা নিয়ে এত ভাবতে হবে না।

মোটামুটি আবেদনযোগ্য পয়েন্ট হলেই এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্টে আবেদন করা ফেলা ভালো। যদিও এই ভিসার প্রতিযোগিতামূলক প্রকৃতির কারণে আমন্ত্রণের নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। বছরের সময়, প্রার্থীর সংখ্যা ও আমন্ত্রণের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে ভিসা আবেদনের আমন্ত্রণপত্র পাওয়া না পাওয়া।

অন্যদিকে, সাবক্লাস ৪৯৪ ভিসাটি পয়েন্টের ওপর নির্ভর করে না। অস্ট্রেলিয়ার কোনো আঞ্চলিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এই ভিসায় কাউকে মনোনীত করলে অর্থাৎ কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চাকরি প্রদান করলেই এই ভিসায় আবেদন করতে পারা যাবে। শর্তেও অনেক শীতলতা রয়েছে। বয়সের সীমাবদ্ধতা থাকলেও ইংরেজি জানার দক্ষতা আইইএলটিএসের ৬ সমপরিমাণ হলেও আবেদন করা যায়।

এ ভিসার আরও হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যাবে অভিবাসন বিভাগের ওয়েবসাইটে।
---

কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ই–মেইল: <[email protected]>