ভরা থাক স্মৃতিসুধায় বিদায়ের পাত্রখানি

প্রতীকী ছবি। ফাইল ছবি
প্রতীকী ছবি। ফাইল ছবি

ঘুরে এলাম আমার দেশ বাংলাদেশ। অক্টোবরের ২৪ তারিখ থেকে নভেম্বরের ৭ তারিখ পর্যন্ত মাত্র ১৫ দিন ছিলাম বাংলাদেশে। ফিরে আসার পর দুই সপ্তাহের জমে থাকা কাজ—কয়েকটি রিফিউজি হিয়ারিংয়ের ফাইল, এক্সপ্রেস এন্ট্রি ফাইল ওপেন করা, বিজনেস প্ল্যান সাবমিট করা, প্রভিন্সিয়াল নমিনি অ্যাপ্লিকেশন করা, স্টুডেন্ট ভিসার অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে খুব অল্প সময়ে অনেক কাজ করে ফেলতে হয়েছিল।

একটুও সময় পাইনি লেখালেখি করার। এর পরপরই টরন্টোতে আমার খুব কাছের তিনজন মানুষের মৃত্যু, তাঁদের জানাজা, সমাহিত করা, মিলাদে শরিক হওয়া, এসব নিয়ে পুরো নভেম্বর মাস চলে গেছে।

কাছের মানুষের এই মৃত্যুগুলো বারবার আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। জানান দিয়েছে আমাদের এই অনিশ্চিত নশ্বর জীবনের ক্ষণস্থায়িত্বকে। কখনো কখনো আমাদের জীবনের এই অবিরাম প্রাণপণ দৌড়কে অর্থহীন মনে হয়েছে। আমরা আমাদের স্থায়ী ঠিকানা কবর কিনে রাখার প্ল্যান করছি।

যা হোক, মরতে হবে আমাদের সবাইকেই। কিন্তু তাই বলে জীবন মাঝে মাঝে স্থবির হয়ে গেলেও একেবারে থেমে থাকে না। আর এটিই পৃথিবীর নিয়ম।

২৪ তারিখ রাত ২টায় বিমানবন্দরে এল আমার ভাই নাসিম, ওর মেয়ে জিহান আর আমার দেবর মাসুদ। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। বাসায় ফেরার পথে জিহান ঘুমিয়ে পড়েছিল। নিজের দেশে পৌঁছে খুব শান্তি লাগছিল। ওই অপার আনন্দ শুধু একান্তে অনুভব করার, ভাষায় প্রকাশ করার নয়। মনে মনে গাইছিলাম, ‘আমারও দেশেরও মাটিরও গন্ধে ভরে আছে সারা মন।’

পরদিন গুলশানে তুশান ভাইয়ের বাসায় গেলাম। ৬ নভেম্বর গুলশান ক্লাবে কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন নিয়ে আমার সেমিনার নিয়ে আলোচনা করার জন্য। অর্গানাইজার কামালও ছিল। ভাবি ও তুশান ভাইকে ওই দিন রাতেই জরুরি প্রয়োজনে মরক্কো চলে যেতে হয়েছিল। তাই আলোচনাটি ওই দিনই সারতে হয়েছিল।

গুলশান ক্লাবের সেমিনারের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন তুশান ভাই। তিনি আবার ৬ তারিখে সেমিনারের দিনই চলে এসেছিলেন। এ সবকিছুর জন্যই আমি কৃতজ্ঞ তুশান ভাইয়ের কাছে।

২৬ অক্টোবর শনিবার সকালে নরসিংদী থেকে আমার ইউনিভার্সিটির খুব কাছের বান্ধবী শোভা ফোন করল আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য। আমাদের দুজনের প্রায় ২৮ বছর পর দেখা হলো ঢাকায়। কী যে ভালো লাগল ওকে দেখে!

এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার শ্যামল মুখার্জির অফিসে গেলাম আমার বিএল কলেজের ইংরেজি বিভাগের ৯৫ ব্যাচের ঢাকায় অবস্থানরত ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দেখা করার জন্য। শ্যামল ওই ব্যাচে আমার ছাত্র ছিল।

শ্যামলের অফিস থেকে আমরা সবাই সেগুনবাগিচায় একটা সুন্দর গোছানো, ছিমছাম রেস্টুরেন্টে গেলাম দুপুরের লাঞ্চ করার জন্য। লাঞ্চ তো আসলে অছিলা মাত্র। আমরা (শ্যামল, জামান, সানজার, শারমিন, মতিউর, মাহফুজসহ আরও কয়েকজন) আসলে অনেক দিন থেকেই প্ল্যান করছিলাম একটা গেট টুগেদার করার জন্য। ওদের সঙ্গে আমার অনেক দিন একসঙ্গে দেখা হয় না।

সেই ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি বিএল কলেজ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ান গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যাই। ওই সময়েই আমার ওদের সঙ্গে শেষ দেখা হয়।

ওখানে আমরা অনেক স্মৃতি রোমন্থন করলাম। খুব ভালো লাগছিল, ওরা আমাকে এত দিনও এভাবে মনে রেখেছে।

আমার মা-বাবা খুলনায় থাকেন। তাই আমার প্ল্যান ছিল আমি ২৬ অক্টোবরেই খুলনা গিয়ে আমার কিছু ব্যক্তিগত কাজ করে, ২ নভেম্বর একবারে ঢাকা চলে আসব। এরপর ঢাকার কাজকর্ম শেষ করব। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা করব। আমার কিছু ক্লায়েন্টের সঙ্গে ৫ তারিখে গুলশানে দেখা করব। তারপর ৬ তারিখে গুলশান ক্লাবের ইনফরমেশন সেশন শেষ করে ৭ তারিখে টরন্টো রওনা দেব।

যা হোক, ওই দিন আমার যশোর যাওয়ার ফ্লাইট বিকেল সাড়ে পাঁচটায় হওয়ায় চারটার মধ্যেই আমি ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বিমানবন্দরের দিকে রওনা দিলাম। ঢাকার যানজট বলে কথা, আরও কিছুক্ষণ থাকতে পারলে ভালো লাগত।

যশোর বিমানবন্দরে দেখা হয়ে গেল আমার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন সহকর্মী, খুব ভালো মনের সদা হাস্যময় সারোয়ারের সঙ্গে। অনেক দিন পর দেখা হলো সারোয়ারের সঙ্গে। সেই ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে আমি যখন সৌদি আরবের কিং খালিদ বিশ্ববিদ্যালয়ে লিয়েন নিয়ে চলে যাই, তখনই আমার ওর সঙ্গে শেষ দেখা হয়।

যশোর থেকে খুলনা আসার পথে অনেক কথা হলো সারোয়ারের সঙ্গে। ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট ও মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজে সেন্টারের অনেক খবরাখবর পেলাম সারোয়ারের কাছ থেকে। আমার প্রাক্তন সহকর্মীরা কে কোথায়, কেমন আছেন, ছাত্রছাত্রীদের কথাও হলো। টরন্টোতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কলিগ ও ছাত্রছাত্রী আছে। তবে তারা ইংরেজি বিভাগের তেমন নয়, অধিকাংশই কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, বিবিএ, ফিশারিজ, আর্কিটেকচার—এসব বিভাগের। সারোয়ার ডিপার্টমেন্টে যেতে অনুরোধ করেছিলেন। আমিও চেয়েছিলাম যেতে। কিন্তু সময় করে উঠতে পারিনি। এর পরেরবার যাব আশা রাখি।

২৭ অক্টোবরে খুব সকাল সকাল চলে গেলাম ডিসি অফিসে আমার ব্যক্তিগত কিছু কাজকর্মের জন্য। আগের দিন ঢাকা থেকেই বিএল কলেজের ৯৫ ব্যাচের আরও দুজন স্টুডেন্ট উত্তম আর আনিসের সঙ্গে কথা হয়েছিল, সন্ধ্যায় হোটেল টাইগার গার্ডেন খুলনায় আমি ওদের সঙ্গে বসব সন্ধ্যা ৬টায়। কিন্তু ৬টায়ও আমার কাজ শেষ হলো না।

উত্তম আর আনিস আমাকে ফোন করছিল, আমি কখন যাব। আমি বললাম, আমি খুব দুঃখিত, আমি জানি সবাই অনেক দূর থেকে এসেছে কিন্তু আমিতো এখনো ডিসি অফিসের সামনে আছি, কেবল কাজ শেষ হলো, বাসায় গিয়ে তারপর আসব, একটু দেরি হবে। আনিস বলল, ‘ম্যাম আমি আপনার পাশেই আছি। একটু অপেক্ষা করেন, দুই মিনিটের মধ্যে এসে যাচ্ছি।’

প্রতীকী ছবি। ফাইল ছবি
প্রতীকী ছবি। ফাইল ছবি

আনিসের অফিস ডিসি অফিসের সঙ্গেই। ওর সঙ্গে বাসায় এসে রেডি হয়ে গেলাম হোটেল টাইগার গার্ডেনে। ৯৫ ব্যাচের প্রায় ৩০-৩৫ জন ছাত্রছাত্রী এসেছিল। খুব সুন্দর সময় কাটল ওদের সঙ্গে। খুব ভালো লাগল আমার ছাত্রছাত্রীদের সাফল্য দেখে। কেউ সাংবাদিক, কেউ পুলিশ কর্মকর্তা, কেউ শিক্ষক, কেউ প্রশাসনে আছে। ওরা সবাই অনেক ভালো মানুষ হয়েছে। আনিসের একটা কথা আমার খুব মনে পড়ছে, ‘ম্যাম, আপনি এখন আর খোঁপায় কাঁটা পরেন না?’

পরদিন ২৮ অক্টোবর আমার খুলনার সব কাজকর্ম ফেলে রেখে আবার ঢাকা চলে যেতে হলো। বাংলাদেশ ব্যাংকে কিছু জরুরি কাজ আর বাংলা ভিশনে মোস্তফা ফিরোজ ভাইয়ের লাইভ অনুষ্ঠান প্রবাস কথায় অংশ নেওয়ার জন্য। পরদিন ২৯ তারিখেই আবার খুলনা গেলাম খুলনার অসমাপ্ত কাজকর্ম শেষ করার জন্য।

যশোর বিমানবন্দর থেকে যখন খুলনা যাচ্ছিলাম, ফারুখ ভাইয়ের ফোন পেলাম। ফারুখ ভাই বিএল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক, আমাদের জাহাঙ্গীরনগরের সিনিয়র ভাই। আমি টরন্টো থাকতেই তিনি আমাকে দাওয়াত দিয়েছিলেন। নভেম্বরের ১ তারিখে যশোরের নওয়াপাড়ায় জাহাঙ্গীরনগরের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের মিলনমেলায় যাওয়ার জন্য।

ফারুখ ভাই ওই দিনই সন্ধ্যায় স্বপন ভাইয়ের বাসায় যেতে বললেন। এর পরপরই স্বপন ভাইও ফোন করলেন। স্বপন ভাই পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি। তিনিও জাহাঙ্গীরনগরের, আমার হাসবেন্ডের খুব কাছের বন্ধু।

বিকেলে স্বপন ভাইয়ের সুন্দর, বিশাল বাংলোতে ঘোরা, ময়ূর, হরিণ, পাখি আর সুন্দর সুন্দর ফুলবাগানের মাঝে আমার প্রিয় সব খাবার—আমড়া মাখানো, লেবু মাখানো, কতবেল, পেয়ারা, তালের পিঠা, রসগোল্লা আরও হাজার রকমের পিঠা পুলির আয়োজনে আমি বিমোহিত হয়ে গেলাম। আমাদের স্বপন ভাইয়ের রুচির প্রশংসা করতেই হয়। ১ তারিখের মিলনমেলা নিয়ে অনেক আলোচনা হলো।

নভেম্বরের ১ তারিখে আমাদের ১৭তম ব্যাচের কুতুব আর গফ্ফারসহ রওনা দিলাম নওয়াপাড়া। দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। ১২০০ জনের ওপরে আয়োজন ছিল। সবাই আমাদের জাহাঙ্গীরনগরের। আমাদের প্রাক্তন ভিসি স্যার, নাট্যব্যক্তিত্ব সেলিম ভাই ও রোজি ভাবি, কাইজার ভাই-ভাবি, আমাদের ইয়ারমেট গণেশ, কণ্ঠী আপা, স্বপন ভাই, ইন্দু দিদি, মাসুদ ভাই, ছোট ভাই রাহাত, ছোট বোন মনিরা আরও কত জনের সঙ্গে যে কত দিন পরে দেখা হলো।

সেই ১৯৯৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছি। তারপর এ রকম আর কোনো বড় গ্যাদারিংয়ে যাওয়া হয়নি। হই হুল্লোড়, হাসি আর আনন্দের মধ্যে চোখের নিমেষে কেটে গেল সারাটা দিন। মনে হচ্ছিল জাহাঙ্গীরনগরের সেই দিনগুলোতে চলে গেছি। ২ তারিখে গেলাম সৈয়দ মহল্লা, আমার শ্বশুরবাড়িতে আমার আব্বা-আম্মা, ভাবি আর দুই ননদকে নিয়ে। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আর বড় ভাশুরের কবর জিয়ারত করলাম।

৩ নভেম্বর খুলনার সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে একবারে ঢাকা চলে গেলাম। ঢাকায় আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী শিখার শান্তিনগরের বাসায় গেলাম। ভেবেছিলাম ওকে নিয়ে একটু শপিং করতে বেরোব। কিন্তু খালি গল্প আর গল্প, শপিংয়ের কথা ভুলেই গেলাম। ৪ তারিখে গুলশানের ধানমন্ডির বাসায় আমার স্কুলের বান্ধবীদের সঙ্গে বসলাম। ইতি এল ব্যাংকে ওর চাকরি থেকে, রত্না আর স্বপন ভাই, চন্দন ভাই আর গুলশানকে নিয়ে আমাদের আড্ডা জমেছিল খুব।

ওখান থেকে আবার বাংলা ভিশনে গেলাম প্রবাস কথার আর একটি লাইভ প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য। ৫ তারিখ ধানমন্ডির সন্তুর রেস্টুরেন্টে আমাদের জাহাঙ্গীরনগরের ১৭তম ব্যাচের সবার সঙ্গে সন্ধ্যা থেকে দুপুর রাত পর্যন্ত আড্ডা হলো। কুতুব, মাসুদ, সাবেরা, রাজু, পপি, মিতু, রিয়া, মাহফুজ, রাজুর ছেলে অন্য রাজু, রুনু, কোহিনূর, সাইফ, তুষার, দুই আলমগীর, আলম, নজরুল, মনির ও আজাদসহ আরও কয়েকজন মিলে অনেক দিন পর আড্ডা হলো।

৬ নভেম্বর গুলশান ক্লাবে কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন নিয়ে আমার সেমিনার ছিল। তুশান ভাই, আসিফ ভাই, হারুন ভাই, মহিদ স্যার, ইসমাইল জাবিউল্লাহ, আলমগীর ভাইসহ কামাল, মাসুদ, মিঠুন ও মিথিলের অক্লান্ত পরিশ্রমে হলভর্তি দর্শকদের মাঝে সেমিনার খুবই প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল।

এখানেও একই কথা, আইইএলটিএস ছাড়া ইমিগ্রেশন হবে কি না, জব অফার নিয়ে যাওয়া যাবে কি না, স্টুডেন্ট ভিসা আইইএলটিএস ছাড়া হবে কি না? এখানেও বোঝাতে হলো, কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন একটি প্রসেস। এর জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে আর এ জন্য সময় ও শ্রম দিতে হয়।

লেখিকা
লেখিকা

ওখান থেকে আবার ইউটিউব ভয়েস বাংলায় মোস্তফা ফিরোজের রেকর্ডিংয়ের জন্য গেলাম বাংলা ভিশন অফিসে। ৭ নভেম্বর সকালে এনটিভিতে শুভ সন্ধ্যা প্রোগ্রামে আলাপচারিতা অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং হলো। সব টিভি চ্যানেলেই আমি মূলত কানাডিয়ান ভিসা ও ইমিগ্রেশন পলিসি নিয়ে কথা বলেছি। অনেক দিন পর আবার অনুষ্ঠানের পরিচালক আমাদের জাহাঙ্গীরনগরের হ‌ুমায়ূন দুই হাজার টাকার চেক দিলেন। ভালোই লাগল। এনটিভির মোস্তফা আর শ্যামল মুখার্জি আমাকে আবারও টিভির অনুষ্ঠানে ফিরিয়ে নিয়ে গেল। কথা ছিল চ্যানেল আই, ডিবিসি নিউজ ও আরেকটি টিভিতে প্রোগ্রাম করার। সময়ের অভাবে করতে পারিনি।

ওই দিনই বিকেল পাঁচটায় বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দিলাম টরন্টো ফিরে আসার জন্য। একদম আসতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল আরও কয়েকটা দিন থাকতে পারলে মন্দ হতো না। আর কবে আসতে পারব!

এবার বাংলাদেশে খুব অল্প সময় থেকেছি কিন্তু কাজকর্ম করতে পেরেছি খুব দ্রুত। দেখা হয়েছে অনেকের সঙ্গে। অনেক প্রিয় মানুষের সঙ্গে। অনেক দিন পরে।

সবচেয়ে ভালো লেগেছে আমার ছাত্রছাত্রীদের দেশে খুব ভালো মানুষ হিসেবে দেখে। বিভিন্ন বড় পদে দেখতে পেয়ে। গর্বে আমার বুক ভরে গেছে।

শিক্ষকতা করার এই এক আনন্দ। টরন্টোতে যেমন আমি ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ, বিএল কলেজ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও সৌদি আরবের কিং খালিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে এবং আমার জাহাঙ্গীরনগরের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইবোনদের সঙ্গে বছরে কম করে হলেও দুবার বসি, এবার বাংলাদেশ গিয়েও আমার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে, স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে সময় দিতে পেরেছি।

ধন্যবাদ তাদের সবাইকে আমাকে সময় দেওয়ার জন্য। টরন্টোতে আসার পর থেকেই আবার দিন গুনছি, কবে যাব বাংলাদেশে। বাংলাদেশে আমার এবারের স্মৃতিগুলো রবি ঠাকুরের ভাষায় বলি ‘ভরা থাক স্মৃতিসুধায় বিদায়ের পাত্রখানি’।

বিজয় দিবস ও আসন্ন নতুন ইংরেজি বছরের শুভেচ্ছা আর শুভ কামনা রইল সবার জন্য।

মাহমুদা নাসরিন: টরন্টো, কানাডা। ইমেইল: <[email protected]>