কাতারে চুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা

মিলনমেলায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
মিলনমেলায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সুবর্ণজয়ন্তীর বর্ণাঢ্য আনন্দ মিছিলের সূচনা হয়েছিল ৬ ডিসেম্বর। চট্টগ্রামে ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্সের চত্বর থেকে। তারই ঢেউ বুঝি এবার এসে আছড়ে পড়ল কাতারের উপকূলে। এই দেশে বসবাসরত চুয়েটের প্রকৌশলীরা শামিল হলেন সেই আনন্দে।

চুয়েট সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উপলক্ষে কাতারে তাঁরা আয়োজন করেন মিলনমেলার।

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার সবুজ বনারণ্যে ১৭১ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত চুয়েট ক্যাম্পাস। ১৯৬৮ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নামে যাত্রা শুরু করে ১৯৮৬ সালে বিআইটি। আর এখন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা চুয়েট।

মিলনমেলায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যরা
মিলনমেলায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যরা

তবে সময় কিংবা নাম যাই হোক না কেন, চুয়েট ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে আসা সবার শুধু একটি পরিচয়, আর তা হলো—‘একই সুতোয় বাঁধা আমরা চুয়েটিয়ান’।

গত শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) দোহা শহরের অভিজাত এলাকার একটি আবাসিক কম্পাউন্ড প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় চুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দিনব্যাপী সাজানো হয়েছে অনুষ্ঠান। প্রাতরাশ সেরে সুবর্ণজয়ন্তীর থিম সং বাজিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় দিনের আয়োজন। সকাল ১০টার মধ্যেই পরিবার-পরিজন নিয়ে হাজির কাতারে বসবাসরত চুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।

কাজের তাগিদে কাতারের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন চুয়েটিয়ানরা। অনেকে দুই দশক ধরে কাতারে আছেন। অথচ সতীর্থ কোনো চুয়েটিয়ানের মুখোমুখি হননি কখনো। কিন্তু সুবর্ণজয়ন্তীর এই আয়োজন ক্যাম্পাসের হারিয়ে যাওয়া বহু চেনা মুখ ও দুর্লভ মুহূর্তগুলো আবার যেন ফিরিয়ে দিল। পুরোনো বন্ধুদের সান্নিধ্যে এসে খুনসুটিতে মেতে উঠেছিলেন সবাই। বিস্মৃতির জলকণা সরিয়ে দেখছিল হাসি-কান্নার ধূসর অ্যালবাম।

অনুষ্ঠানে সব বয়সীর জন্য ছিল মজার মজার আয়োজন। শিশুরা ব্যস্ত ছিল ছবি আঁকায়। নারীদের জন্য ছিল থিম সংয়ের তালে তালে বালিশ খেলা। কাতারে এখন চলছে ফিফা বিশ্বকাপ ক্লাব ফুটবল প্রতিযোগিতা। তারই ধারাবাহিকতায় পুরুষদের পেনাল্টি কিক প্রতিযোগিতা বিশ্বকাপের উত্তাপ ছড়িয়ে দিয়েছিল চারদিকে।

অনুষ্ঠানে সব বয়সীর জন্য ছিল মজার মজার আয়োজন। শিশুরা ব্যস্ত ছিল ছবি আঁকায়
অনুষ্ঠানে সব বয়সীর জন্য ছিল মজার মজার আয়োজন। শিশুরা ব্যস্ত ছিল ছবি আঁকায়

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ ফোরাম কাতারের সভাপতি প্রকৌশলী ইফতেখার আহমদ। এ ছাড়া গালফ অঞ্চলের প্রতিনিধি হিসেবে দুবাই থেকে এই মিলনমেলায় যোগ দেন প্রকৌশলী শামীম।

সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব ছিল চুয়েটিয়ানদের স্মৃতিচারণা। শিক্ষকদের চোখে ধুলো দিয়ে সার্ভে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ কাজে ফাঁকি দেওয়া, শীতকালে ক্যাম্পাসের আশপাশের গ্রাম থেকে আনা হাঁড়িভর্তি খেজুরের রস খাওয়া, হোস্টেলে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে গোলাগুলির মধ্যে রাত কাটানো, সেশনজটের জন্য জীবনের সোনালি দিনগুলো হারিয়ে যাওয়ার মতো বহু অম্লমধুর ঘটনা উঠে আসে স্মৃতিকথায়।

স্মারক হিসেবে কাতারের সব চুয়েটিয়ানকে সুবর্ণজয়ন্তীর লোগো আঁকা টি-শার্ট, কফি মগ ও নিজের নাম খোদই করা ক্রেস্ট উপহার দেওয়া হয়। এ ছাড়া সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের থিম সংয়ের গীতিকার ও সহযোগী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে সম্মানিত করে আবদুল্লাহ আল মামুনকে।

মিলনমেলায় প্রাক্তন চুয়েটিয়ানরা আশা প্রকাশ করেন, গত পাঁচ দশকে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়েছেন হাজারো কীর্তিমান প্রকৌশলী। যাঁরা সাফল্যের সঙ্গে প্রযুক্তি ও প্রকৌশল খাতে অনন্য অবদান রেখে চলেছেন। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপসহ বিশ্বের দেশে দেশে ছড়িয়ে আছেন বহু চুয়েটিয়ান। কাতারেও চুয়েটিয়ানরা সাফল্যের সঙ্গে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে বাংলাদেশের পতাকাকে সমুন্নত করে রেখে চলেছেন। অতীতের ঐতিহ্যবাহী পথ বেয়ে চুয়েট থেকে বেরিয়ে আসবে অগণন কীর্তিমান প্রকৌশলী। চুয়েটের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক।