যুদ্ধকবলিত ত্রিপোলিতে বিজয় দিবস উদ্যাপন

আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচির প্রথম পর্বের সূচনা হয়। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, ত্রিপোলি
আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচির প্রথম পর্বের সূচনা হয়। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, ত্রিপোলি

যুদ্ধকবলিত ত্রিপোলিতে উৎসাহ-উদ্দীপনায় মহান বিজয় দিবস উদ্‌যাপন করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সেখ সেকেন্দার আলী কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচির প্রথম পর্বের সূচনা হয়। এ পর্বে বিজয় দিবসের প্রেক্ষাপটের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভা ও মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ত্রিপোলির বাংলাদেশ কমিউনিটি স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রীসহ সব স্তরের প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনসহ উপস্থিত ছিলেন।

বিজয় দিবসের আলোচনা সভা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, ত্রিপোলি
বিজয় দিবসের আলোচনা সভা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, ত্রিপোলি

এ পর্বে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

বক্তারা দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ ও মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

আলোচনার একপর্যায়ে কর্মকর্তারা ত্রিপোলিতে চলমান যুদ্ধে অভিবাসী বাংলাদেশিদের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে দূতাবাস কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে ধারণা দেন। তাঁরা বলেন, বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেও দূতাবাসের পক্ষ থেকে যুদ্ধে হতাহত ও ভূমধ্যসাগর থেকে বাংলাদেশিদের উদ্ধার করে দেশে প্রেরণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় উপস্থিতির একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, ত্রিপোলি
বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় উপস্থিতির একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, ত্রিপোলি

এ ছাড়া ত্রিপোলিতে চলমান ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দূতাবাসের কর্মকর্তারা সব অভিবাসীর কনস্যুলার সেবা ও কল্যাণমূলক সেবা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চলানো হচ্ছে বলে তাঁরা জানান। ত্রিপোলির চলমান যুদ্ধের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলসমূহ আইনজারা, ক্বাসর বেনগাসির, ওয়াদি রাবিয়া, সোয়ানি, আজিজিয়াসহ যুদ্ধকবলিত এলাকাসমূহ বাংলাদেশি নাগরিকদের এড়িয়ে চলার আহ্বান জানানো হয়।

উল্লেখ্য, এ বছরের ৪ এপ্রিল দেশটির পূর্বাঞ্চলের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল খলিফা হাফতার কর্তৃক রাজধানী ত্রিপোলি দখলের উদ্দেশ্যে শুরু করা যুদ্ধ বর্তমানে প্রায় ৯ মাস হতে চলেছে। এই যুদ্ধে দুই পক্ষ ভারী অস্ত্রশস্ত্র, রকেট-মর্টার ও স্বল্পপাল্লার মিসাইল ব্যবহার করছে।

এ ছাড়া প্রতিনিয়ত একে অন্যের অবস্থানের ওপর বিমান ও ড্রোন হামলার ফলে এই যুদ্ধ বর্তমানে সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। এ যুদ্ধে সাধারণ মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ বাড়িঘর, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন অবকাঠামো প্রতিনিয়ত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে।

বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় উপস্থিতির একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, ত্রিপোলি
বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় উপস্থিতির একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, ত্রিপোলি

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী ত্রিপোলির এই যুদ্ধে ১২ জন বাংলাদেশিসহ ১ হাজার ২০০ জনের বেশি সামরিক-বেসামরিক লোক নিহত ও হাজার হাজার নাগরিক আহত হয়েছেন। এ ছাড়া লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।