অস্টিনে ভালো লাগার আবহে বিজয় দিবস

শিশুশিল্পী ও কলাকুশলীরা। ছবি: বাগা
শিশুশিল্পী ও কলাকুশলীরা। ছবি: বাগা

দেশমাতৃকার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, দেশপ্রেম ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের অস্টিনপ্রবাসী বাংলাদেশিরা উদ্‌যাপন করেছেন মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল এই দিনকে ঘিরে গত রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সারা দিনই অস্টিনে ছিল উৎসবের আমেজ।

এ বছর বিজয় দিবসটি অস্টিনের বাংলাদেশিদের জন্য নিয়ে এসেছিল একটি অন্য রকম ভালো লাগার আবহ। বিজয় দিবস সামনে রেখে অস্টিন সিটি কাউন্সিল এ বছরের ১৫ ডিসেম্বরকে বাংলাদেশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে; যা অস্টিনপ্রবাসী সব বাংলাদেশির জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের।

মুক্তিযোদ্ধার সাজে স্থানীয় বাংলাদেশিরা। ছবি: বাগা
মুক্তিযোদ্ধার সাজে স্থানীয় বাংলাদেশিরা। ছবি: বাগা

অনুষ্ঠানের শুরুতে অস্টিন সিটি কাউন্সিলের সদস্য মাইক ফ্ল্যানাগান আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণাপত্র হস্তান্তর করেন স্থানীয় বাংলাদেশিদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রেটার অস্টিনের (বাগা) সভাপতির হাতে।

এই অনুষ্ঠান সামনে রেখে বাগা নিয়েছিল মাসব্যাপী প্রস্তুতি। বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপস্থিতিতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। এ সময় অডিটরিয়ামে উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন।

নৃত্যের তালে তালে। ছবি: বাগা
নৃত্যের তালে তালে। ছবি: বাগা

এরপর বাগার সভাপতি জসীম চৌধুরী আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে সব প্রবাসী বাংলাদেশিকে অভিনন্দন এবং স্বাধীনতার চেতনা অক্ষুণ্ন রাখার প্রয়াসে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। এ সময় তাঁর সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাগার বোর্ড অব ডিরেক্টররা।

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল স্থানীয় শিল্পী ও শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শতাধিক কলাকুশলী গান, নৃত্য, নাটক ও ফ্যাশন শোর মাধ্যমে বিজয়ের আনন্দ ও চেতনা তুলে ধরেন অনুপম ভঙ্গিমায়। বাঙ্‌ময় ও নান্দনিক এই পরিবেশনা দর্শকেরা প্রাণভরে উপভোগ করেন। অডিটরিয়ামজুড়ে বিজয়ের আবহ ছড়িয়ে পড়ে এ সময়।

ফুয়াদ অ্যান্ড ফ্রেন্ডসের পরিবেশনা। ছবি: বাগা
ফুয়াদ অ্যান্ড ফ্রেন্ডসের পরিবেশনা। ছবি: বাগা

এর পাশাপাশি ছিল স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্যোগে তৈরি করা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, শিশু-কিশোরদের হাতে আঁকা স্বাধীনতার চিত্রকর্ম, অস্টিনের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে ধারণ করা বিজয় দিবসের বিশেষ মিউজিক ভিডিও ও ১৯৭১ নিয়ে ডকুমেন্টারি ইত্যাদি। বিপুল আগ্রহ নিয়ে দর্শকেরা এসব পরিদর্শন করেন এবং গৌরবময় বিজয়ের অনুপ্রেরণায় নিজেদের ঋদ্ধ করেন।

দ্বিতীয় পর্বে দর্শকদের মনোরঞ্জন করতে মঞ্চে আসে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড ফুয়াদ অ্যান্ড ফ্রেন্ডস। এই পর্বকে ঘিরে অস্টিনের সবার মধ্যে ছিল ব্যাপক উত্তেজনা ও উৎসাহ। প্রবাসের মাটিতে দেশের জনপ্রিয় একটি ব্যান্ডের পরিবেশনা উপভোগ করতে পুরো হলরুম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় দর্শকে। ফুয়াদ ও শুভ ব্যান্ডের বাকি সদস্যদের নিয়ে পরিবেশন করেন ‘নিটোল পায়ে’, ‘বসন্ত বাতাসে ও ‘বন্য’সহ আরও অনেক জনপ্রিয় গান।

ফুয়াদ অ্যান্ড ফ্রেন্ডসের পরিবেশনা। ছবি: বাগা
ফুয়াদ অ্যান্ড ফ্রেন্ডসের পরিবেশনা। ছবি: বাগা

পরিবেশনাজুড়ে মঞ্চের সামনে নেচে-গেয়ে আনন্দ করেন দর্শকেরা। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এক অনাবিল আনন্দে মেতে থাকেন অস্টিনের প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশে কাটানো শৈশব-কৈশোর-যৌবনের অগণিত কনসার্টের স্মৃতি যেন ফিরে ফিরে আসে তাঁদের মনে। কনসার্ট শেষে শুরু হয় ব্যান্ডের সদস্যদের সঙ্গে ছবি তোলার পর্ব। বিপুল দর্শকদের সেলফির চাহিদা খুব সুন্দরভাবে পূরণ করেন ফুয়াদ ও তাঁর দল।

স্পনসরদের সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রেটার অস্টিনের সদস্যরা। ছবি: বাগা
স্পনসরদের সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রেটার অস্টিনের সদস্যরা। ছবি: বাগা

পরিশেষে একটি আনন্দমুখর দিনের স্মৃতি নিয়ে বাড়ি ফেরেন সবাই। দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে থেকেও সবাই যেন দেশের খুব কাছাকাছি ছিলেন আয়োজনজুড়ে। এই সফল ও পরিপূর্ণ আয়োজনের শেষে বাগা ধন্যবাদ জানায় সব দর্শক, কলাকুশলী, স্পনসর, ভেন্ডর ও স্বেচ্ছাসেবককে।

দর্শকদের একাংশ। ছবি: বাগা
দর্শকদের একাংশ। ছবি: বাগা