বাংলাদেশ যত কম সময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, এত অল্প সময়ে স্বাধীনতা অর্জনের অভিজ্ঞতা কোনো দেশের নেই। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী প্রায় ৯৩ হাজার সৈন্য নিয়ে আত্মসমর্পণ করে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বৃহত্তম আত্মসমর্পণের ঘটনা।
ইতালির মিলানে বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে মিলানে নিয়োজিত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক রিজার্ভ পাকিস্তানের চারগুণ। উন্নয়নের সব সূচকে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। কিছু কিছু সূচকে বাংলাদেশ ভারতের চেয়েও এগিয়ে রয়েছে। তিনি সরকার কর্তৃক গৃহীত সব উন্নয়ন প্রয়াসে সবাইকে সম্পৃক্ত থাকার আহ্বান জানান।
মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও মিলানের বাংলাদেশ কনস্যুলেট মহান বিজয় দিবস উদ্যাপন করেছে। ৪৯তম বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উচ্ছ্বাসভরে অংশ নেন মিলানে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশি বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাসহ সব শ্রেণি–পেশার বাংলাদেশি নাগরিক। সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ ও প্রাণোচ্ছ্বাসে পুরো অনুষ্ঠানটি বাঙ্ময় হয়ে ওঠে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এমপি।
দিবসের শুরুতে কনসাল জেনারেল কনস্যুলেটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
দিবসের দ্বিতীয় ভাগের অনুষ্ঠান শুরু হয় ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের মাধ্যমে। প্রথমে প্রধান অতিথি ও কনসাল জেনারেলসহ কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর কমিউনিটির নেতারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী সব শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন ও দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এরপর এ দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণীসমূহ পড়ে শোনানো হয়।
অনুষ্ঠানে মিলানে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদকে কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি ফুলেল শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
মুক্ত আলোচনায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাঁদের বক্তব্যে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ ও সব মুক্তিযোদ্ধার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
মুক্ত আলোচনার পর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মিলান থেকে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের ক্রেস্ট দেওয়া হয়। ব্যক্তি পর্যায়ে চারজন ও সাংগঠনিক পর্যায়ে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননার জন্য মনোনীত করা হয়। প্রধান অতিথি তাঁদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহাসিক ক্রমবিকাশের ধারা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যেসব ব্যক্তি বা রাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও স্থায়িত্বের ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন, তাঁরাই আজকে এ দেশের ব্যাপক উন্নয়নের স্বীকৃতি দিয়ে চলেছেন। অগ্রগতির এ ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সূচিত সব উন্নয়ন কর্মসূচিকে এগিয়ে নিতে সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
মিলানে বসবাসরত সংগীতশিল্পী সুচিত্রা রোজারিও ও মুনিরুল আলমের পরিবেশনায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি