কানাডার ক্যালগেরিতে প্রবাসীদের পিঠা উৎসব

উৎসবে রকমারি পিঠা। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত
উৎসবে রকমারি পিঠা। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত

কথায় বলে, বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ বাংলাদেশ। আর শীত মানেই চারদিকে কেমন জানি একটা উৎসব আর আনন্দের আমেজ। পিঠা খাওয়া আর বনভোজনের যেন ধুম লেগেছে।

কনকনে শীতের সকালে রাস্তার ধারের নতুন চালের ভাপা পিঠার গন্ধের কথা সবারই মনে থাকার কথা। কিংবা সরিষাবাটা দিয়ে চিতই পিঠা খাননি এমন লোক খুব কমই পাওয়া যাবে।

উৎসবে রকমারি পিঠা। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত
উৎসবে রকমারি পিঠা। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত

ছেলেবেলায় উনুনের পাশে বসে পিঠা খাওয়া। ইস, সে কী আনন্দের। যে খেয়েছে শুধু সেই বুঝবে। পিঠা ও শীতের মধ্য কেমন যেন একটা সম্পর্ক রয়েছে। একে অন্যকে ছাড়া সত্যিই জমে না।

কানাডায় এখন শীত জেঁকে বসেছে। তাপমাত্রা মাইনাসে। যদিও আমরা এতে সয়ে গেছি। তবু শীতের এই সময়টাতে সুদূর প্রবাসে বসে দেশকে খুব মনে পড়ে। মনে পড়ে পিঠা খাওয়ার দিনগুলো। আর তারই ধারাবাহিকতায় বৃহত্তর রংপুরিয়ানরা কানাডার আলবার্টা প্রদেশের ক্যালগেরি শহরে এক হয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল সবাই একে অপরকে জানব, আনন্দ করব আর পিঠা খাব।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত

সাপ্তাহিক ছুটির দিন আর হল ভাড়ার প্রাপ্যতার জন্য ১৪ ডিসেম্বর শনিবার দিনটাকে আমাদের বেছে নিতে হলো পিঠা উৎসবের জন্য। সময় বেঁধে দেওয়া ছিল বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। আর একটি কথা না বললেই নয়। এই দিনটি আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। তাই অনুষ্ঠানের শুরুতেই এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

অনুষ্ঠানটি ছিল পটলাক; অর্থাৎ আমরা সবাই নিজেরা খাবার নিয়ে যাব এবং সবাই মিলে খাব। এর মধ্যে একটা অন্য রকম আনন্দ আছে। একদিকে যেমন রকমারি খাবারের স্বাদ একসঙ্গে পাওয়া যায়, অন্যদিকে এর সঙ্গে ফ্রিতে আনন্দ ও আড্ডা তো আছেই। আমাদের অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকেল ৪টায়। প্রথমে বাচ্চাদের নিয়ে একটি ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা পর্ব। আর এই অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন নুরে আলম ভাই।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত

এরই মধ্যে সবাই হাজির পিঠা নিয়ে। বিকেল ৫টায় শুরু হলো পিঠা খাওয়া। ধন্যবাদ সব ভাবিকে। কারণ, আপনাদের পরিশ্রম ছাড়া আমাদের সেদিন পিঠা খাওয়া হতো না। কত রকম পিঠা যে ছিল। ভাপা পিঠা, নুনাশ পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, তেল পিঠা, দুধ পিঠা, ফুলঝুরি ছাঁচের পিঠা, পাকন পিঠা, ঝাল পিঠা, নারকেল পুলি পিঠা ইত্যাদি।

ভেবে দেখুন, এক দিনে এত রকম পিঠার স্বাদ এমন পটলাক পিঠা উৎসবেই সম্ভব। ঘণ্টাখানেক চলল আমাদের পিঠা খাওয়া আর পিঠার ফটোসেশন।

বাচ্চাদের ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত
বাচ্চাদের ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত

পিঠা খাওয়ার পর শুরু হলো পরিচিতি পর্ব। এর দায়িত্বে ছিলেন আমাদের প্রিয় মুখ জুয়েল ভাই। তাঁর প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠান এতই মজার হয়ে উঠেছিল যে দুই ঘণ্টা কীভাবে চলে গেল তা আমরা বুঝতেই পারলাম না। এই উৎসবের মূল লক্ষ্যই ছিল সবার সঙ্গে পরিচিত হওয়া। অনেকেই নিজের অনেক স্মৃতি শেয়ার করাতে পর্বটি আরও উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল। মনে হচ্ছিল কানাডায় যেন একখণ্ড রংপুর।

অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত
অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত

এরপর ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যার পরিচালনায় ছিলেন আমাদের সবার পরিচিত সদা মিষ্টভাষী অমিয় ভাই। শুরুতেই তিনি কবিতা পড়ে শ্রদ্ধা জানালেন আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। এরপর ছিল নাচ, গান, কবিতা, ছড়া ও দলীয় সংগীত। ছোটদের নাচ, গান ও ছড়ায় ছিল মুনতাহা, রাহমা, সুমাইতা, নাশোয়ান। বড়দের নাচ ও গানে ছিলেন লাবিবা, নক্ষত্র, অমিয়, রুবিনা, ওয়াহিদ এবং আমাদের রংপুরের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী খালিদা নাছরিন বাণী। সবাই প্রাণভরে উপভোগ করলাম চমৎকার অনুষ্ঠানটি।

অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত
অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত

এরপর বাঙালি বলে কথা। ভাত না খেলে ঘুম হবে না। তাই ডিনার শুরু হলো রাত প্রায় ১০টায়। মেনু ছিল মুরগি ও গরুর মাংস, ভেজিটেবল, সালাত আর সঙ্গে ছিল খেজুর গুড়ের পায়েস। খেতে খেতে প্রায় রাত ১১টা। এবার বিদায় নেওয়ার পালা।

কবির ভাষায়, ‘যেতে নাহি দেব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়’। পরিশেষে আমাদের বৃহত্তর রংপুরিয়ানদের প্রাণভোমরা সবার শ্রদ্ধেয় মইনুল ভাই রংপুরের সব সদস্যকে অনুষ্ঠানে আসার জন্য ধন্যবাদ জানালেন। ধন্যবাদ দিতে ভুললেন না মিডিয়া পার্টনার নন্দন টিভিকে, স্পনসর নিক্কন ভাই ও ইকবাল ভাইকে সঙ্গে থাকার জন্য এবং আগত সব অতিথিকে; যাঁদের উপস্থিতি আমাদের অনুষ্ঠানটিকে নিয়ে গেছে একটি ভিন্নমাত্রায়।

উৎসবে উপস্থিতি। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত
উৎসবে উপস্থিতি। ছবি: লেখকের মাধ্যমে প্রাপ্ত

মো. সাঈদ চৌধুরী, ই-মেইল: <[email protected]>