কানাডার টরন্টোর আবৃত্তি সংগঠন ‘অন্যস্বর’-এর কর্ণধার আহমেদ হোসেন একজন ব্যতিক্রমী মানুষ। ব্যতিক্রমী কারণ তিনি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখেন। তাঁর এমনই একটি স্বপ্ন ‘দ্রোহ এনেছে বিজয় ১৯৭১’ আলোর মুখ দেখল এবারের বিজয়ের মাসে।
ডিসেম্বরের ১ থেকে ১৬ পর্যন্ত টানা ১৬ দিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে হয়ে গেল আমাদের বিজয়ের গৌরবগাথা, কিছু গান ও কবিতার এক মহামিলন।
আহমেদ হোসেনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ, হাতে হাত মিলিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন একঝাঁক তারকা। না, এঁরা সবাই শিল্পী নন—কেউ কর্মী, কেউ সহায়তাকারী, কেউবা শুধুই দর্শক। স্থানীয় মিজান কমপ্লেক্সের শায়লা রহমানের ছোট্ট দোকানটিই হয়ে গেল একটি স্টুডিও কাম অডিটরিয়াম।
একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যে নির্দিষ্ট সময়ের বাউন্ডারির মধ্যেও করা সম্ভব, তা প্রমাণ করে দেখাল অন্যস্বর। দর্শক হিসেবে এই শহরে এটি একটি নতুন অভিজ্ঞতা। শিল্পীদের পারফরম্যান্সের ব্যাপারে একটি কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়—প্রতিটি শিল্পী তাঁর সেরা পরিবেশনাই উপহার দিয়েছেন এই অনুষ্ঠানে। শিল্পীরা অনুষ্ঠানে পরিবেশনের জন্য যে যথেষ্ট অনুশীলন করেছেন তা সহজে বোধগম্য ছিল তাঁদের পরিবেশনায়। যেটা সাধারণত দেখা যায় না।
দ্রোহ এনেছে বিজয় ১৯৭১-এর জাদুর ছোঁয়ায় উপস্থিত দর্শকেরাও যেন হয়ে যান সুবোধ বালক। পিনপতন নীরবতার মধ্য দিয়ে উপস্থিত দর্শকদের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে দেখা গেছে প্রতিদিন। কমিউনিটিতে দর্শকদের মান নিয়ে আমাদের যে ধারণা রয়েছে, তা যে কতটা ভুল তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল এই অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানটি ছোট্ট পরিসরে হলেও এর শব্দ নিয়ন্ত্রণের মান ছিল নিঃসন্দেহে অনেক উঁচুতে। আলোক নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আরেকটু যত্নবান হলে ভালো হতো। বাজেটের স্বল্পতার কারণে, নাকি স্থানসংকুলানের কারণে অনুষ্ঠানে কোনো হ্যান্ডস রাখা হয়নি তা জানা যায়নি। তবে কিছু হ্যান্ডস রাখলে যে আরও অনেক ভালো হতো তা বলাই বাহুল্য।
সব শিল্পীর পরিবেশনা যে পেশাদারি মানের ছিল, তা দাবি করা নিশ্চয় সমীচীন হবে না। তবে প্রত্যেকের আপ্রাণ চেষ্টার যে কোনো ত্রুটি ছিল না, তা নিশ্চিতে বলা যায়। সব শিল্পীকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই।
দ্রোহ এনেছে বিজয় ১৯৭১-এর আলোয় আমরা অনেক আলোকিত মানুষকেও দেখতে পেলাম। আশ্চর্য লাগে, যখন দেখি একজন দর্শক শিল্পীদের জন্য, অন্য দর্শকদের জন্য সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে নিজ হাতে খাবার রান্না করে নিয়ে আসেন। একটি অনুষ্ঠান কত সফল হলে এমনটি হতে পারে তা একবার ভেবে দেখুন!
দ্রোহ এনেছে বিজয় ১৯৭১ যেন এক আলোর মিছিল। এই আলো ছড়িয়ে পড়ুক সবার মধ্যে, সবখানে—আলোকিত হোক প্রতিটা মানুষ, আলোকিত হোক গোটা কমিউনিটি, এই প্রত্যাশা করি একজন সাধারণ দর্শক হিসেবে।