আদ্দিস আবাবায় আনন্দমুখর বিজয় উৎসব

অনুষ্ঠানে সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, আদ্দিস আবাবা
অনুষ্ঠানে সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, আদ্দিস আবাবা

ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য ও আনন্দমুখর পরিবেশে উদ্‌যাপিত হয়েছে মহান বিজয় দিবস। এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় বিজয় উৎসবের।

বিজয় দিবসের দিন (১৬ ডিসেম্বর) সাপ্তাহিক কার্যদিবস হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে বিজয় উৎসবের সূচনা ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে শুরু করা হয়।

বিজয় উৎসবের মূল অনুষ্ঠানে দেশটিতে নিয়োজিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাস-প্রধান, স্থানীয় ও বিদেশি অতিথি এবং দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত জনপ্রিয় সব গানের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় আনন্দঘন বিজয় উৎসবের স্বাগত সংগীত।

বিশিষ্ট অতিথিরা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, আদ্দিস আবাবা
বিশিষ্ট অতিথিরা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, আদ্দিস আবাবা

এর আগে আগত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত এবং দেশ ও দেশবাসীর সুখ-সমৃদ্ধির জন্য মোনাজাত করা হয়। এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবার এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

পরে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রদত্ত বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। বাণী পাঠ করেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা।

বাণী পাঠের আনুষ্ঠানিকতার পর আগত দর্শনার্থীদের জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাফল্য ও সম্ভাবনা তুলে ধরার পাশাপাশি আইসিটি বিভাগ কর্তৃক নির্মিত একটি জনসচেতনতামূলক তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী প্রবাসীদের একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, আদ্দিস আবাবা
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী প্রবাসীদের একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, আদ্দিস আবাবা

এ ছাড়া বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে করা দূতাবাস অ্যাপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই অ্যাপ ব্যবহারে উৎসাহিত এবং দূতাবাস অ্যাপ ইনস্টলেশন ও রেজিস্ট্রেশনের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়। এরপর দর্শক-শ্রোতাদের উদ্দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ওপর একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

পরবর্তী পর্বে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা। বিদেশি অতিথি, মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে কয়েকজন এই পর্বে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিসংগ্রামের কথা স্মরণ করেন। তাঁরা বাঙালি জাগরণে বঙ্গবন্ধু ও দেশের আপামর জনসাধারণ বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও শাহাদতবরণকারী সব শহীদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।

বাংলাদেশি বক্তারা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা রূপায়ণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ২০৪১-এর লক্ষ্য অনুযায়ী ভবিষ্যতের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কর্মকাণ্ডে যথাযথ আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন।

আলোচনা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, আদ্দিস আবাবা
আলোচনা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, আদ্দিস আবাবা

অনুষ্ঠানে দেশটির জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির ওই দেশীয় প্রতিনিধিসহ অন্য অতিথিরা বক্তব্য দেন এবং বাংলাদেশের বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিজয় উৎসবের প্রতি অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন।

উৎসাহী বাংলাদেশি অংশগ্রহণকারীরা মুক্তিযুদ্ধ ও মহান বিজয় দিবসের ওপর রচিত কবিতা, সংগীত, নাটিকা, নৃত্য ও কৌতুক পরিবেশন করেন।

সমাপনী বক্তব্যে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মনিরুল ইসলাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং আমাদের মুক্তিসংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল কীর্তি ও উন্নয়ন সম্ভাবনা শ্রোতাদের কাছে তুলে ধরেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও সাফল্যের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন। সবার সঙ্গে সৌহার্দ্য বজায় রেখে শান্তিপূর্ণভাবে উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি প্রবাসীদের যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে অবদান রাখার জন্য অনুরোধ জানান।

আলোচনা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, আদ্দিস আবাবা
আলোচনা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, আদ্দিস আবাবা

শেষে উপস্থিত অতিথিদের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়।

পরদিন সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সমবেত বাংলাদেশিদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে দিবসটির সূচনা করা হয়। রাষ্ট্রদূত মো. মনিরুল ইসলাম পতাকা উত্তোলন করেন।

জাতীয় সংগীতের সঙ্গে পতাকা উত্তোলনের পর আনন্দঘন পরিবেশে বিজয়ের বার্তা ছড়িয়ে দিতে এ সময় স্বাধীনতার চেতনাসমৃদ্ধ সংগীতের মূর্ছনা চলতে থাকে। যা আগত বাংলাদেশিদের মনে বিজয় উদ্‌যাপনের আনন্দ সঞ্চার করে। বিজ্ঞপ্তি