ঢাবি অ্যালামনাই রিয়াদের অভিষেক ও সংবর্ধনা

রিয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন রিয়াদ চ্যাপ্টারের অভিষেক ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মঞ্চে অতিথি ও বক্তারা। ছবি: আবু আফনানের মাধ্যমে প্রাপ্ত
রিয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন রিয়াদ চ্যাপ্টারের অভিষেক ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মঞ্চে অতিথি ও বক্তারা। ছবি: আবু আফনানের মাধ্যমে প্রাপ্ত

‘এখন দেশের বিদ্যালয়গুলোতে মানবিক দিক সম্পর্কে তুলে ধরা হয় না। অন্যদিকে আমরা বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করি, প্রতিষ্ঠিত হও। এই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রতিযোগিতায় হারিয়ে যাচ্ছে তারা।’

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন রিয়াদ চ্যাপ্টারের অভিষেক ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ এ কথা বলেন।

গোলাম মসিহ আরও বলেন, ‘আজকাল বাচ্চারা বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে তেমন জানে না। ইতিহাস পড়ার কোনো আগ্রহও নেই তাদের। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এটা একটা বিরাট ব্যর্থতা।’ তিনি বলেন, ‘আমি এখনো ইন্টারনেট খুললে বাংলাদেশের ইতিহাস জানার চেষ্টা করি। এখন আমাদের সবাই প্রতিযোগিতা করি কীভাবে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হব, কীভাবে টাকা কমাব। ধর্ম-কর্ম, ইহকাল-পরকাল ভুলে গিয়ে ছুটছি টাকার পিছে। সুনামের জন্য নয়, আমাকে পরকালে অ্যাম্বাসেডর হিসেবে হিসাব দিতে হবে, সে জন্য কাজ করি।’

অনুষ্ঠানে অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াদ চ্যাপ্টারের সদস্যদের কোটপিন ও পরিচয়পত্র তুলে দেন প্রধান অতিথি ও সংবর্ধিত অতিথি। ছবি: আবু আফনানের মাধ্যমে প্রাপ্ত
অনুষ্ঠানে অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াদ চ্যাপ্টারের সদস্যদের কোটপিন ও পরিচয়পত্র তুলে দেন প্রধান অতিথি ও সংবর্ধিত অতিথি। ছবি: আবু আফনানের মাধ্যমে প্রাপ্ত

গোলাম মসিহ আরও বলেন, ‘আমি ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাই। আমার বাবাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি যে ইউনিক দিকটা ছিল তা হলো, তাঁদের মধ্যে সততা, একটা ভিশন বা একটা কমিটমেন্ট ছিল। সে যে দলেরই হোক। আগেকার শিক্ষকেরা হিউম্যান ভ্যালুজ কী হওয়া উচিত, সেটা তুলে ধরতেন।’

গত বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে রিয়াদের একটি অডিটরিয়ামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াদ চ্যাপ্টারের অভিষেক ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথি ছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াদ চ্যাপ্টারের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক, রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসের মিশন উপপ্রধান ও বাহরাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে সদ্য নিয়োগ পাওয়া ড. মো. নজরুল ইসলাম।

রিয়াদ চ্যাপ্টারের সহসভাপতি কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার সৈয়দ এস এম আনিসুল হক, প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাঈদ সিদ্দিকী, কাউন্সেলর (শ্রমকল্যাণ) মো. মেহেদি হাসান, রিয়াদ বাংলা স্কুল পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ, অধ্যক্ষ আফজাল হোসেন, অ্যাসোসিয়েশনের পৃষ্ঠপোষক আ ক ম রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াদ চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক কবি ও সাহিত্যিক শাহজাহান চঞ্চল।

অনুষ্ঠানে অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াদ চ্যাপ্টারের সদস্যদের কোটপিন ও পরিচয়পত্র তুলে দেন প্রধান অতিথি ও সংবর্ধিত অতিথি। ছবি: আবু আফনানের মাধ্যমে প্রাপ্ত
অনুষ্ঠানে অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াদ চ্যাপ্টারের সদস্যদের কোটপিন ও পরিচয়পত্র তুলে দেন প্রধান অতিথি ও সংবর্ধিত অতিথি। ছবি: আবু আফনানের মাধ্যমে প্রাপ্ত

সংবর্ধিত অতিথি মো. নজরুল ইসলাম তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘আমি বরিশালের ছেলে। অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আগ্রহ ছিল না। আমি বলেছিলাম, পড়লে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ব, না হয় বরিশালেই থেকে যাব। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইকোনমিকসে ভর্তির সুযোগ পাই।’

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিসিএস দেব—এমন কোনো ধারণাই আমার ছিল না। আমার যাঁরা শিক্ষক ছিলেন, তাঁরা আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। তাঁরা বলতেন ফার্স্টক্লাস পেলে এখানেই শিক্ষকতা করতে পারবে। কিন্তু ২ মার্কসের জন্য ফার্স্টক্লাস পাইনি। যেহেতু আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিতে পারব না, তখন আমার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য একমাত্র পথ হলো বিসিএস। পরে ১৫তম বিসিএসে ফরেন সার্ভিসে সুযোগ পাই। আমার বাবা বরিশাল বারের আইনজীবী ছিলেন। তিনি আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন আর বলেছেন, “তুমি ফরেন সার্ভিসে জয়েন করো। রাষ্ট্রদূত হলে অন্ততপক্ষে দেশের জন্য কাজ করতে পারবে। পয়সাকড়ি কী হবে না–হবে, সেটা আমি জানি না। কিন্তু দেশের জন্য কিছু কাজ করতে পারবে।”’

টাকা নয়, দেশসেবার জন্যই চাকরি করছেন জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পরিচালক হওয়ার পর একটা সময় চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। তখন আব্বা জীবিত ছিলেন। তিনি আমাকে নিষেধ করে বলেছেন, “তুমি অন্ততপক্ষে রাষ্ট্রদূত হও, তারপর যদি চাকরি ছেড়ে দিতে চাও, তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।” আব্বা ২০০৯ সালে ইন্তেকাল করেন। তখনো আমি পরিচালক ও কাউন্সেলর হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় ছিলাম। পরবর্তী সময়ে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেহেতু তিনি আমার মুরব্বি এবং তিনি যেটা বলে গেছেন, সেটা আমি মাথা পেতে নিলাম। আমার বাবা টাকার জন্য রাষ্ট্রদূত হতে বলেননি। রাষ্ট্রদূত হয়ে দেশের জন্য কাজ করা যায়, এ জন্য বলেছিলেন। আমি আমার বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিও কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে বাহরাইনে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের প্রতিও কৃতজ্ঞ আমার প্রতি আস্থা রাখার জন্য।’

আলোচনা। ছবি: আবু আফনানের মাধ্যমে প্রাপ্ত
আলোচনা। ছবি: আবু আফনানের মাধ্যমে প্রাপ্ত

অনুষ্ঠানে অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াদ চ্যাপ্টারের সদস্যদের কোটপিন ও পরিচয়পত্র তুলে দেন প্রধান অতিথি ও সংবর্ধিত অতিথি। এর আগে অনুষ্ঠানে আসা সব অতিথিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন সংগঠনের সদস্যরা। ক্রেস্ট প্রদান করেন নির্বাহী সদস্য সানজিদা বেগম ও আক্তার জাহান। সংবর্ধিত অতিথিকে দেওয়া মানপত্র পাঠ করেন কোষাধ্যক্ষ মো. মাহবুবুর রহমান।

উল্লেখ্য, দেশের বাইরে প্রথম আত্মপ্রকাশ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কর্মকার স্বাক্ষরিত রিয়াদ চ্যাপ্টারের অনুমোদিত কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হলেন রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ, পৃষ্ঠপোষক রফিকুল ইসলাম, সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সহসভাপতি ড. রেজাউল করিম, কোষাধ্যক্ষ মো. মাহবুবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান চঞ্চল, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মো. আফজাল হোসেন।

উপস্থিতি। ছবি: আবু আফনানের মাধ্যমে প্রাপ্ত
উপস্থিতি। ছবি: আবু আফনানের মাধ্যমে প্রাপ্ত

নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন ড. মো. নজরুল ইসলাম, মো. সারোয়ার আলম, মো. মেহেদি হাসান, শেখ শহীদুল ইসলাম, কাজী নুরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. রেদওয়ানুর রহমান, আইনজীবী মোহ. সাঈদ আহমেদ, মামুনুর রশিদ, মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, সানজিদা ইসলাম, আক্তার জাহান ও নিষাদ আঞ্জুমান।

অভিষেক ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংগঠনের কর্মকর্তারা জানান, অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াদ চ্যাপ্টার সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করবে। তহবিল গঠন করে সৌদি আরবের বিভিন্ন স্কুলে অধ্যয়নরত মেধাবী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অর্থ-সহায়তার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশেও সমাজ ও জনকল্যাণমূলক কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তাঁরা।