বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিসমাস পার্টিতে বাঙালি সংস্কৃতি

ক্রিসমাস পার্টিতে লেখক ও তাঁর বন্ধু
ক্রিসমাস পার্টিতে লেখক ও তাঁর বন্ধু

ছোটবেলা থেকেই আমি ক্লাব, দল, স্কাউটস—এসব করে এসেছি। কলেজ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। সত্যি বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সময় থেকে আর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে থাকিনি। তবে শেষ সময়ে এসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের পক্ষ থেকে বিজয় দিবসে পুষ্পস্তবক অর্পণে ছিলাম।

এখন আমি জার্মানিতে। পড়াশোনা করছি টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখে। প্রবাসে আমাদের বিজয় দিবসের উচ্ছ্বাসের কমতি আনতে পারেনি সাড়ে চার হাজার মাইলের দূরত্ব। সেই উচ্ছ্বাস থেকে বিজয় দিবসের সকালটা শুরু করেছিলাম জাতীয় সংগীতের সঙ্গে নিজ দেশের পতাকা উড়িয়ে।

এরপর ছোটবেলায় যেসব দেশাত্মবোধক গান শুনতাম, সেসব গান শুনতে শুনতে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকি। দেশ থেকে শখ করে কিনে আনা পতাকাখচিত গেঞ্জি পরে বের হই।

বাংলাদেশের বিজয় দিবসের দিন আমি আর বন্ধু ক্যাম্পাসে ছবি তুলছি। একজন নিজে থেকে এসেই আমাদের দুজনের ছবি তুলে দিলেন এবং আমাদের পোশাকের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। তখন আমি তাঁকে আমাদের বিজয় দিবসের কথা বলি। আমাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি তাঁর কাজে চলে গেলেন।

দুজন কি তিনজন শিক্ষকও জিজ্ঞেস করেছিলেন। তাঁদেরও আমরা আমাদের বিজয় দিবসের কথা বলি এবং তাঁদের সঙ্গে আমাদের শুভেচ্ছা বিনিময় হয়।

সেদিন সন্ধ্যায় আমাদের ব্যাচের ক্রিসমাস পার্টি ছিল। আগের CartoCafe (কো-অর্ডিনেটরের সঙ্গে ব্যাচের পাক্ষিক বৈঠক)-এ আলোচনা হয়েছিল পার্টিতে যে যার দেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরবে। আমরা জানালাম ঠান্ডায় মারা যাব, যদি এ রকম কিছু পরি। পরবর্তী সময়ে অবশ্য এটা যার যার পছন্দের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়।

পার্টিতে নেওয়া খাবার
পার্টিতে নেওয়া খাবার

আমরা দুজন ঠিক করি আমাদের দেশের ঐতিহ্যকে ধারণ করে, এমন কিছুই পরব। মাথায় এল হাফ হাতা সাদা গেঞ্জি (মাঠে কাজ করার সময় কৃষক যা পরেন) আর লুঙ্গি পরার কথা। পরে গামছাও যোগ হয়েছে।

কিন্তু এ সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পড়লাম বিপদে। আমাদের দুজনের কারও হাফহাতা সাদা গেঞ্জি নেই। তাই পাঞ্জাবি বেছে নিলাম। যদিও পাঞ্জাবি কিংবা লুঙ্গির কোনোটাই আমাদের দেশীয় নিজস্ব উৎপত্তি নয় (আমার জানার ভুল থাকতে পারে)। তা–ও যেহেতু এটা আমার বাপ-দাদারা পরে এসেছেন ধরে নিয়েছি, এখন আমার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।

আমাদের পোশাকে মোটামুটি সবাই মুগ্ধ হয়েছেন। কিছু বন্ধুবান্ধবী ছবিও তুলেছেন আমাদের সঙ্গে। আর আমাদের কো-অর্ডিনেটর খুশি হয়েছেন আমাদের বাংলাদেশি পোশাক পরার কারণে।

পার্টিতে নেওয়া খাবার
পার্টিতে নেওয়া খাবার

আমরা ১৮টি দেশের ২৫ জন ছাত্রছাত্রী এক ব্যাচে। সেখানে আমরা একেকজন একেক পদের রান্না করে নিয়েছিলাম। আমি নিয়েছি আমাদের ঈদুল ফিতরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পদের একটি। যার নাম দিয়েছিলাম স্পেশাল সেমাই পোলাও। যাতে আমাদের দেশের খাবার সম্পর্কে অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের ভালো ধারণা হয়।

যদি আমরা বিখ্যাত কেউ হতাম, হয়তো আগে বা পরে আমাদের পোশাক নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠত এই বলে যে আমরা পাঞ্জাবি পরে ‍‍ক্রিসমাস পার্টি করেছি।

যারা এখন আমাদের সমালোচনা করতে ইচ্ছুক, আমি তাদের বলব করুন। তবে আমাকে একটি সঠিক বাঙালিয়ানা পোশাকের সন্ধান দিন, যেখানে অন্য কোনো সংস্কৃতির কোনো ছিটেফোঁটা নেই।