এ বছর প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য সুখবর নেই

বেস্ট অব দ্য বেস্ট পুরস্কার জিতে নেওয়া হাইড্রালুপ কোম্পানির ব্যবহার্য পানি পরিশোধনকারী হাইড্রালুপ। ছবি: লেখক
বেস্ট অব দ্য বেস্ট পুরস্কার জিতে নেওয়া হাইড্রালুপ কোম্পানির ব্যবহার্য পানি পরিশোধনকারী হাইড্রালুপ। ছবি: লেখক

এ বছর হওয়ার কথা ছিল প্রযুক্তির বিপ্লব। অন্যদিকে এবারের প্রযুক্তি মেলা টইটম্বুর থাকার কথা ছিল চোখধাঁধানো নতুন প্রযুক্তি দিয়ে। কিন্তু তা হয়নি। অতি বিস্ময়ের ব্যাপার হলেও এটাই সত্যি। নেই কোনো অতি বিস্ময়কর নতুন আবিষ্কার, নেই কোনো তাক লাগানো প্রযুক্তির খেলা। যা আছে তা পুরোনোর নতুন ভার্সন।

প্রতিবছর জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের আলোঝলমলে লাসভেগাস শহরে ‘কনজিউমার ইলেকট্রনিকস শো-(সিইএস)’ নামের প্রদর্শনী মেলায় সারা বিশ্বের টেক জায়ান্টদের নতুন আবিষ্কৃত টেকনোলজির পসরা বসে।

অনেকটা চমকহীন তিন দিনব্যাপী এ বছরের সিইএস ২০২০ নামের এই মেলার পর্দা নামে গত শুক্রবার (১০ জানুয়ারি)। প্রতিবছরের মতো এবারও মোট ১৫টি ক্যাটাগরিতে নতুন আবিষ্কৃত টেকনোলজিকে পুরস্কৃত করা হয়। এরপর ‘বেস্ট অব দ্য বেস্ট’ ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়।

এবারের বেস্ট অব দ্য বেস্ট পুরস্কারটি জিতে নেয় হাইড্রালুপ কোম্পানির হাইড্রালুপ। রেফ্রিজারেটর সাইজের এই মেশিন বাসায় ব্যবহৃত পানিকে পরিশোধন করে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে।

তবে অন্য ক্যাটাগরিতে নমিনেশন পাওয়া নতুন আবিষ্কৃত বাকি সব টেকনোলজি তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো আবিষ্কার বলে বিবেচিত হয়নি। প্রায় সবগুলোই আগের ভার্সনের পরিবর্ধন।

মোস্ট আনএক্সপেকটেড প্রোডাক্ট ক্যাটাগরিতে ইলেকট্রনিক জায়ান্ট সনি কোম্পানির ‘ভিশন এস-কনসেপ্ট কার’ অনেকের নজর কাড়ে। এটি যেহেতু কনসেপ্ট কার, তাই এটা কখনো বাজারে আসবে না এবং ক্রেতাদের জন্য উন্মুক্ত হবে না। কাজেই কারও পক্ষে কেনাও সম্ভব হবে না। তবে সনি তাদের টেকনোলজিতে কতটা এগিয়েছে, তা দেখানোর জন্য মূলত এটি প্রদর্শন করে।

প্রতিটি টেক কোম্পানি এবার বেশি নজর দিয়েছে আধুনিক রোবট ও ক্যামেরার ছবির সূক্ষ্মতায় এবং ফাইভ–জি টেকনোলোজির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর দিকে। সেই লক্ষ্যে হরেক রকম রোবট বাজারে এলেও পিবো রোবট নামের ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বা ডিজিটাল ঝাড়ু কিছুটা নজর কেড়েছে। তবে কোনো পুরস্কার জিততে সক্ষম হয়নি। এই ডিজিটাল ঝাড়ুর কাজ পুরো বাসা পরিষ্কার করা। সঙ্গে বাসায় কোনো কুকুর-বিড়াল থাকলে সেটার দিকে নজর রাখা এবং তারা বাসা নোংরা করলে সঙ্গে সঙ্গে তা পরিষ্কার করা।

আকর্ষণীয় ড্রোন ক্যাটাগরিতেও বিখ্যাত রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ওটেল’-এর এইট কে ভিডিও ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ইভো টু ও ভি সেপের জিরো জিরো রোবোটিকস ভি-কপ্টার ফ্যালকন ছাড়া আসেনি কোনো নতুন চমক।

মেলায় প্রযুক্তিপ্রেমীদের ভিড়। ছবি: লেখক
মেলায় প্রযুক্তিপ্রেমীদের ভিড়। ছবি: লেখক

এদিকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ক্যাটাগরি নামে খ্যাত ‘বেস্ট ফোন বা মোবাইল ডিভাইস’ ক্যাটাগরিতে ‘স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ১০ লাইট’ পুরস্কার জিতলেও ফোনটিতে নেই কোনো ভিন্নতা। গতানুগতিক মডেলগুলোর উন্নত ভার্সন মাত্র।

স্ক্যান ওয়াচ নামের হাতঘড়িটি ছিল এবারের মেলার অন্যতম আকর্ষণ। দেখতে সাধারণ অ্যানালগ ঘড়ির মতো হলেও এটি ব্যবহারকারীর সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যের ওপর নজর রাখবে। হৃদ্‌যন্ত্রের পরিমাপ পর্যবেক্ষণ করে অস্বাভাবিক মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে ঘড়িটি অনবোর্ড ইসিজি করে ফেলবে। স্লিপ এপনিয়া বা অনিদ্রা পর্যবেক্ষণ করে অনিদ্রা–সংক্রান্ত স্বাস্থ্যের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কেও সতর্ক করবে এই ছোট্ট হাতঘড়িটি।

যৌন উত্তেজনা বা অর্গাজম প্রবলতা পরিমাপের যন্ত্রটি ছিল আমন্ত্রিত দর্শকদের জন্য কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে।

ভিশনারি ২০২০–কে টার্গেট করে প্রায় প্রতিটি কোম্পানির কমন লক্ষ্য ছিল এই বছরের মেলাতে চমক লাগানো কিছু উপহার দেওয়ার। তবে কোনো ক্যাটাগরিতেই সে রকম কিছু দেখা যায়নি। প্রযুক্তিবিশারদেরা বলছেন, সেই ভিশন পরিলক্ষিত হবে আগামী বছর।

যেহেতু বছরের শুরুতেই মেলাটি অনুষ্ঠিত হয় তাই মেলায় আগের বছরের পণ্যগুলোই দেখানো হয়। এ কারণেই এই অবস্থা। তাঁরা আশা করছেন, আগামী বছর হবে প্রযুক্তি বিপ্লবের বছর। আর তা হবে অতি উন্নততর ও বহুল প্রতীক্ষিত ফাইভ–জি নেটওয়ার্কের আগমনের মধ্যে দিয়ে।

সিইএস অ্যাওয়ার্ড। ছবি: লেখক
সিইএস অ্যাওয়ার্ড। ছবি: লেখক

তবে কেমন হবে সেই প্রযুক্তি বিপ্লব, তা এখনি ঠিক করে বলতে না পারলেও, ধারণা দিয়েছেন আধুনিক ইন্টারনেট যুগের আগের ও পরের সময়ের তুলনা দিয়ে।

ইন্টারনেট পূর্ববর্তী সময়টি কেমন ছিল আর এখন কেমন সেটা কল্পনা করে এর কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। কারণ, এখন সবকিছু ইন্টারনেটের গতির ওপর নির্ভরশীল। এমনকি মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাও। আর সেই গতি যদি দ্বিগুণ হয়ে যায়, সেটা কেমন হবে তা সহজেই অনুমেয়। সেই পরিবর্তিত অতি উন্নত প্রযুক্তি কী করে আমাদের এই চিরচেনা পৃথিবীকে বদলে দেয়, সেটা দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন প্রযুক্তিপ্রেমীরা।
–––

মাহমুদুল খান আপেল: তথ্য প্রযুক্তিবিদ।