বেড়ানো: কোরাল দ্বীপের হীরা-পান্না-দুই

রোদে জেলেদের মাছ শুকানো। ছবি: ডা. রোনে সুজন ক্লোদ সরকার
রোদে জেলেদের মাছ শুকানো। ছবি: ডা. রোনে সুজন ক্লোদ সরকার

হাতে করে গুনে গুনে ঠিক তিন দিন নিয়ে এসেছি। এই মহার্ঘ সময় শুয়ে-বসে নষ্ট করা যাবে না। গেস্টহাউসে বোঁচকা-বুঁচকি নামিয়ে চট করে কাপড় পাল্টে তৈরি হয়ে নিলাম।

বেরিয়ে দেখি মাঝদুপুরের রোদ ঠিক মাথার ওপর। বেচারা ডিসেম্বরের রোদটা তেজ দেখিয়ে খুব একটা কুলিয়ে উঠতে পারছে না। তার কাটা ঘায়ে আরও নুনের ছিটা দিচ্ছে হালকা একটা তিরতিরে বাতাস। মনটা চনমন করে উঠল। এই চনমন সাগরে ইচ্ছেমতো হুটোপুটি খাবার জন্য চনমন।

অবশ্য আমি এই দলে নেই। পানিভীতি আছে। দৌড় বড়জোর পা ভেজানো পর্যন্ত। হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে মিনমিনে সুরে বাকিদের তাড়া দিলাম, ‘তোমরা যাও, যাও, আমি আসছি আস্তে ধীরে...।’

কথাটা শেষ না হতেই কে যেন ধাক্কা মেরে ফেলে দিল ঝপাং! গ্লাক গ্লাক করে কিছু পানি খেয়ে ফেলব, নাকি ভুলে যাওয়া সাঁতারটা মনে করার চেষ্টা করব—বুঝে উঠতে না পেরে, যে আমাকে জলে ফেলে হাওয়া হয়ে গেছে, তাকে ধাওয়া করলাম। কয়েক সেকেন্ডের মাথায় ধরেও ফেললাম।

ধরা পড়ে রেন খিলখিল করে হেসে উঠল। চোখ-মুখ খিঁচে এক চোট ফুফুগিরি ফলাতে যাব, আর তখনই মাথায় খেলল, ওখান থেকে এখানে এলাম কী করে? সাঁতরে না তো? আরেব্বাপস্! এই আকস্মিক বিস্ময়ের সুযোগ নিয়ে আধা কলস লবণপানি বিনা চিনিতে ওরস্যালাইন সেজে গলা দিয়ে সুড়ুৎ করে পেটে চালান হয়ে গেল।

এতখানি লবণ একবারে গিলে ব্লাড প্রেশারটা বোধ হয় খানিকটা বেড়েই গেল। মনে হচ্ছে হাঙরের মতো কী যেন একটা চারপাশে ঘাঁই মারছে। ভয় পেয়ে ভড়কে যাওয়ার আগেই দেখি দুই হাতে প্লাস্টিকের ফ্লোটিং ডিভাইস লাগিয়ে ভেসে থাকা তাফসু মিয়াই হাঙর সেজে ঘাঁই মারছে।

কী ভেবে সে হঠাৎ কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলল, ‘মা, আমার না পানিতে পিপি করতে খুব ভালো লাগে।’ বলেই হাঁসের মতো পা চালিয়ে তার মামার দিকে রওনা দিয়ে দিল।

তার মানে একটু আগে লবণ পানির সঙ্গে তাহলে আরও কিছু গিলেছি! কিন্তু যা হওয়ার তো হয়ে গেছে। মুখ ভঁচকিয়ে লাভ নেই। সান্ত্বনা দিলাম নিজেকে।

সাগরে ভাটার সময় হয়ে এসেছে। খিদেটাও চাগিয়ে উঠছে। জল ছেড়ে ডাঙায় ফিরে এলাম। ছানাপোনাদের একরকম চ্যাংদোলা করে আনতে হয়েছে। সমুদ্র তাদের ভালো লেগে গেছে। তাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, আবার পানিতে নামা হবে কালকে।

ভাটায় কোরাল দ্বীপ। ছবি: ডা. রোনে সুজন ক্লোদ সরকার
ভাটায় কোরাল দ্বীপ। ছবি: ডা. রোনে সুজন ক্লোদ সরকার

পাঁচ.

সবাই মিলে খেতে বসেছি। গেস্টহাউসের চাচা লেবু-কাঁচা মরিচের বাটি নিয়ে ছোটাছুটি করছেন। একটু বাদেই সবার পাতে তাজা মাছের বড় বড় পেটিগুলো উড়ে এসে ডাল, সবজি আর সাদা ভাতকে আরেক উচ্চতায় নিয়ে গেল। আমরা কবজি, কনুই সব ডুবিয়ে গলা অবধি খেয়ে ভালুকের মতো গা ছেড়ে বসে থাকলাম কিছুক্ষণ। এই না হলে জীবন, আর এই না হলে ছুটি!

গেস্টহাউসের সামনে সুমনের চায়ের দোকানে এক প্রস্থ দেশি চা আর বার্মিজ কফি মেরে দিয়ে দ্বীপটা হেঁটে দেখব বলে পা চালালাম। ছোট্ট ঈয়াসীর আশপাশেই ছিল। এবার বাবার কাছে বায়না ধরল, আমাদের সঙ্গে যাবে বলে। সুমনও নির্বিকার সায় দিয়ে দিল।

চার পা এগোতেই দেখলাম, সে এই দ্বীপের অতিপরিচিত মুখ। ডাবওয়ালা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় খোঁজ নিয়ে গেল, তার সাইকেল ঠিক হয়েছে কিনা। আবার এক পাল গরু খেদাতে ব্যস্ত বালক রাখাল দূর থেকে হাঁক দিল, ‘কই যাস রে ঈয়াসীর?’ ঈয়াসীরও জবাবের পর জবাব দিতে দিতে এলোমেলো পায়ে রন আর তাফসু মিয়ার পাশে পাশে চলছে।

চপ্পল খুলে হাতে নিয়েছি। নরম কাদামাটিতে পায়ের ছাপ এঁকে আমাদের দলটা একটু দ্রুতই এগোচ্ছি। নইলে জোয়ারে আটকে যাব। ভাটায় সাগর সরে গিয়েছে বহুদূর। সেন্ট মার্টিনের দিগন্তজুড়ে এখন শুধু কোরাল আর কোরাল। তাদের গায়ে অসংখ্য ফুটো না থাকলে কালো পাথরের চাঁই বলে ভুল হতো। মৃত কোরালের গায়ে ক্রমে ক্রমে কাদা-বালু জমে জমে এগুলো পাথরের চেহারা নিয়েছে। আর জ্যান্ত সাদা কোরালও আছে। কিন্তু চোখে পড়ছে খুব কম।

আগে নাকি এমনটা ছিল না। ভাটায় পানি সরে গেলে সফেদ কোরালগুলো মুক্তোর মতো জেগে উঠত। তাদের গায়ে শামুক-ঝিনুক আর কত-না জলজ প্রাণী বসত। এক–আধটা সাদাটে কোরাল দেখলেই বাচ্চারা ছুটে যাচ্ছে। বড়রাও তাদের পিছু নিচ্ছি। কাঠি-কুটো দিয়ে কোরাল খুঁচিয়ে ফেললে আরেক বিপদ।

খানিক বাদে আবিষ্কার করলাম, কোরাল বাদেও অনেক অসামুদ্রিক জিনিসে দ্বীপের এদিকটা সয়লাব। একে একে মিলল নানা আকারের প্লাস্টিকের বোতল, রাবারের স্যান্ডেল, পলিথিনের ব্যাগ, সিমেন্টের খালি বস্তা ইত্যাদি ইত্যাদি। তারই মাঝে আর এক-আধটা লাল কাঁকড়া ধুঁকে ধুঁকে চলছে।

মনটাই ভেঙে গেল। কার যেন একটা লুঙ্গিও পড়ে থাকতে দেখলাম দুই কোরালের খাঁজে। গত বছর মাল্টা বলে এক দেশে ঘুরতে গিয়ে সৈকতে হাফপ্যান্ট খুঁজে পেয়েছিলাম। দেশীয় লুঙ্গিটা তাই আমাকে ঘাবড়াতে পারল না। কিন্তু বিপুল প্লাস্টিক আবর্জনার বহর দেখে কৌতূহল জাগল এত ময়লা এখানে ফেলল কারা? তারা কোন বাপের ব্যাটা? ঠিক হলো, ফিরতি পথে যত পারি সবাই মিলে যা পারি কুড়িয়ে নিয়ে যাব। হোক না সেটা ‘লিখে রেখো, এক ফোঁটা দিলেম শিশির’।

নিঃসঙ্গ লাল কাঁকড়া। ছবি: ডা. রোনে সুজন ক্লোদ সরকার
নিঃসঙ্গ লাল কাঁকড়া। ছবি: ডা. রোনে সুজন ক্লোদ সরকার

ছয়.

বিকেলের রোদটা কোমল হয়ে এসেছে। সোনালি আভার মাঝে হঠাৎ রুপালি ঝিলিক দেখলাম মনে হলো। একটু এগোতেই দেখি জাল ফেলে তোলা ছোট ছোট মাছ বালুতে শুকাতে ব্যস্ত জেলেদের দল। মাছগুলো দিনভর রোদে শুকিয়ে শুকিয়ে শুঁটকি হবে একসময়। তারপর বাজার ঘুরে কারও ঘরের হেঁশেলে ঢুকে জিভে জল আসা চচ্চড়ি হয়ে কোনো বা লোকের পাতে পড়বে। পেট পুরে ভাত খেয়ে আসার পরেও কাল্পনিক ঝোলের ধোঁয়া ওঠা সাগরে মন হারিয়ে যেতে বাঁধল না কোথাও।

প্রায় নিরিবিলি এলাকাটায় একলা দাঁড়ানো চায়ের টং দেখে আমরা অবাকই হলাম। ভাইয়া চোখ মটকে ইশারা দিলেন, ‘আরেকবার চা হয়ে যাবে নাকি?’ কথা ফুরানোর আগেই করিতকর্মা ঝুমু আপু জনপ্রতি চায়ের অর্ডার দিয়ে ফেললেন।

কাঠের নড়বড়ে বেঞ্চি আর পেতে রাখা চেয়ারগুলো দখল করে দোকানের বেড়ায় যা যা ঝোলানো আছে প্রায় সবকিছু নামিয়ে ফেলতে লাগলাম। এলাচি বিস্কুট থেকে আনারস-ক্রিম বিস্কুট, কিছুই বাদ থাকল না। এমন বুভুক্ষুর দল এই দোকানের দোকানি আর আগে দেখেননি বোধ হয়। তবে সযত্নে খোসাগুলো ময়লার ঝুড়িতে জমা দিতে ভুল হলো না।

এই দোকান যাঁরা চালান, তাঁদের একটা বিশেষত্ব আছে। তার বিশদ বিবরণটা সামনে টাঙানো কার্ডবোর্ডে লাল হরফে হাতে লিখে রাখা হয়েছে। ডায়বেটিস ঘটিয়ে দেওয়ার মতো মারাত্মক মিষ্টি শরবত-চায়ের কাপে খুব সাবধানে চুমুক দিয়ে লেখাটা পড়লাম। বানান সামান্য এদিক-ওদিক আছে যদিও।

কার্ডবোর্ডে লেখা—‘ছেঁড়াদ্বীপের একটি পরিবার মো. হোসেন আলী। হোটেল মৌসুমি। এইখানে সকালের: BRACK PAST তেকে দুপুরের খাবার পায়া যায়।’

মৌসুমি হোটেল। ছবি: লেখিকা
মৌসুমি হোটেল। ছবি: লেখিকা

তার মানে সেন্ট মার্টিনের আসল দ্বীপটা থেকে দূরে জনমানবহীন এই ছেঁড়াদ্বীপে হোসেন আলীরাই একমাত্র অধিবাসী। সে তার বউ কিংবা মেয়ের নামের এই হোটেল অবলিক চায়ের দোকান চালায়।

সংকোচে জানতে চাইনি। বাঁশের বেড়ার ওপাশেই তাদের বাড়িঘর চোখে পড়ল। গোয়ালে দুটো গরু বাঁধা আর উঠানে এক ডজন হাঁস-মুরগি ছাড়া। এমন নির্ঝঞ্ঝাট, নির্বিবাদ জীবন দেখে হোসেন আলীদের হিংসাই হলো আমাদের।

নাশতা-পানি পেটে পড়ে সবার ফুয়েল ট্যাংকি ফুল। আবারও পদব্রজে রওনা দিলাম। দূরে যুদ্ধজাহাজ ভাসছে মনে হলো। চোখ কচলে আবার তাকিয়ে দেখি আসলেই তাই। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অতিকায় টহল জাহাজ। জল সীমানার অতন্দ্রপ্রহরী।

ওপাশে সারি সারি পাহাড় ডাঙায় ভেসে আসা তিমির মতো শুয়ে স্থির। দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে ঝুমু আপু উৎসাহী আঙুল উঁচিয়ে দেখালেন, ‘ওই যে মিয়ানমার। আর ওই যে আরাকান। নাম শুনেছ তো?’

শুনব না মানে? আরাকান-আলাওল-পদ্মাবতী, নামগুলো বিদ্যুতের মতো মগজে খেলে গেল। সেই আরাকান! কত শত বছর আগে হঠাৎ একদিন আলাওল নামে খ্যাপাটে এক বাঙালি তরুণ আরাকানের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হাজির। আস্তে আস্তে জানা গেল, মার-মার তলোয়ার চালাতে পটু এই সৈন্য কাট-কাট কলম চালাতেও ওস্তাদ। লোকে আলাওলের কবিতা পড়ে অস্থির হয়ে শেষে তাঁকে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামিয়ে সোজা রাজসভার কবি বানিয়ে দিল। তিনিও মহানন্দে ঢাল-তলোয়ার ফেলে হুলুস্থুল সব কবিতা লিখে শোরগোল বাঁধিয়ে দিতে থাকলেন। আরাকানের সবুজ পাহাড়ে কান পাতলে এখনো হয়তো মধ্যযুগের সেরা কবি আলাওলের কবিতা শোনা যায়। ঘুরে আসা গেলে মন্দ হতো না।

ছেঁড়াদ্বীপে মৌসুমি হোটেলের কার্ডবোর্ড। ছবি: ডা. রোনে সুজন ক্লোদ সরকার
ছেঁড়াদ্বীপে মৌসুমি হোটেলের কার্ডবোর্ড। ছবি: ডা. রোনে সুজন ক্লোদ সরকার

সাত.

অনেকটা পথ এসে হাঁপ ধরে গেছে। পায়ের গোড়ালিও গোঙাচ্ছে। সমতল একটা কালো কোরাল দেখে জিরাতে বসে পড়লাম সবাই। এ জায়গাটায় প্রচুর লোকের আনাগোনা। রীতিমতো হইহুল্লোড় চলছে। কেয়া গাছ থেকে বাঁদর ঝোলা হয়ে ঝুলছে কয়েকজন। ফটো খেঁচাও চলছে দেদার। উৎসব উৎসব ভাব। এরই মাঝে হদিস মিলল বাপের ব্যাটাদের।

আট-দশজনের দল। তারা কোরালে বসে হাত-পা ছড়িয়ে প্যাকেটের পর প্যাকেট বিরিয়ানি খেয়ে প্লাস্টিকের বাক্সগুলো মিসাইলের মতো তাক করে দশ দিগন্তে ছড়িয়ে দিল নিখুঁতভাবে। তারপর পাঁচ লিটারের গোটা তিনেক বোতল ঢকঢক করে গিলে সেগুলোকে ফুটবল বানিয়ে অদৃশ্য কোনো গোলপোস্ট বরাবর লাথি মেরে পাঠিয়ে দিল। বেচারাদের আকৃতি গোল না হয়ে সিলিন্ডার বলে কিছু দূর গড়িয়ে ব্রেক কষল।

এই অপমান দেখে ফিরে আসা জোয়ারের পানি তাদের সাগরে টেনে নিতে ছুটে এল। একটা বোতল তো ভেসেও গেল চোখের সামনে দিয়ে। কিন্তু বাপ কা ব্যাটারা তখনো ব্যস্ত। যে ঝুড়িতে করে তারা তাদের আখেরি খানাদানা নিয়ে এসেছিল, সেটাকে একজন জুতো দিয়ে মাড়িয়ে মট মট করে ভাঙল। তারপর পুরো ধ্বংসযজ্ঞের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি নিয়ে বাড়ির পথ ধরল।

অবাক রেন আর আমি নিঃশব্দে তাদের পিছু নিলাম। ‘এই যে ভাই, শুনছেন?’ ভাই-বেরাদারেরা আমাদের দুই পয়সার দাম না দিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে এগোতেই থাকল। পিছু নেওয়া বন্ধ করে তাদের পাশেই হাঁটছি এখন। ‘বোতল-বাক্সগুলো কি সাথে নেওয়া যেত না ভাই।’

এবার চরম বিরক্ত এক ভাই আকাশ থেকে পড়ল, ‘ময়লা সাথে নিব ক্যান?’

ষোলোই ডিসেম্বরের সূর্যাস্ত। ছবি: ডা. রোনে সুজন ক্লোদ সরকার
ষোলোই ডিসেম্বরের সূর্যাস্ত। ছবি: ডা. রোনে সুজন ক্লোদ সরকার

তেড়ে মারতে আসছে না দেখে সাহস খুঁজে নরম সুরে বললাম, ‘দেশটা তো ভাই আপনারই। এই দ্বীপটাও আপনার। নিজের ঘরে কি ময়লা ফেলা যায়? না পারেন তো আমরা নিয়ে যাই। সাথে লোকজন আছে’ (কথাটা ভুল। সাথের লোকেরা সামনে এগিয়ে বিন্দু হয়ে গেছে)

তবে আমাদের ভাইকে বিচলিত দেখাল। সে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটায় চোখ বুলিয়ে ইতস্তত করে জবাব দিল ‘অ্যা...আচ্ছা, মানে আমরাই নিব নে। আপনারা হাঁটেন’।

বিকেলের আলো কমে আসছে। আমরা আর দাঁড়ালাম না। বিশ্বাস করে নিতে চাইলাম, লোকগুলো সত্যি বলছে। আশাহত হই, এই ভয়ে পিছে তাকালাম না আর।

আমাদের দলটা আবার সেই মৌসুমি হোটেল-কাম-চায়ের টংয়ে ফিরে এসেছি। সঙ্গে করে পথে যত চটি, বোতল, ছিপি আর যা যা আবর্জনা পেয়েছি দুই হাত ভরে নিয়ে এসেছি। বিরাট ময়লার ঝুড়িতে সেগুলোকে সঁপে দিয়ে ছেলেমানুষি একটা আনন্দ পাচ্ছি। যদিও আনন্দ পাওয়ার কারণ শূন্য। খুব শিগগিরই এই অনিন্দ্যসুন্দর কোরাল দ্বীপ আবর্জনার স্তূপে ঢাকা পড়ে যাবে। এটাই বাস্তব।

যা হোক, হোসেন আলী চা চড়িয়েছে। চিনি দিতে মানা করার পরেও সে এক কৌটা কন্ডেন্সড মিল্কের পুরোটাই কেতলিতে গুলে দিয়েছে। তৈরি হচ্ছে সুইট ডেথ। আমরা বিনা আপত্তিতে হাসি মুখে চা নিলাম।

সেদিন ষোলোই ডিসেম্বরে মৌসুমি হোটেলের সামনে পতাকা গেঁড়ে রাখা হয়েছে সযত্নে। সোনার থালার মতো সূর্যটা পতাকার লাল-সবুজকে সাক্ষী রেখে আজকের মতো ডুবে গেল কালকে আবার জাগবে বলে। সব কটা বাচ্চা-কাচ্চা সঙ্গে আছে কিনা মাথা গুনে আমরাও ফিরে চললাম পরদিন আরেক গন্তব্যে ছুটব বলে। (চলবে)
---

ড. রিম সাবরিনা জাহান সরকার: গবেষক, ইনস্টিটিউট অব প্যাথোলজি, স্কুল অব মেডিসিন, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি মিউনিখ, জার্মানি।

ধারাবাহিক এ ভ্রমণকাহিনির আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন