বেড়ানো: ট্যুর ডি টোকিওর টোকিও যেতে যেতে

বালুর ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা ঢাকার বিখ্যাত তারা মসজিদ ও স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা। ছবি: সাইফুল ইসলাম
বালুর ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা ঢাকার বিখ্যাত তারা মসজিদ ও স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা। ছবি: সাইফুল ইসলাম

কর্মমুখর মানুষের দেশ জাপান। বছরে মাত্র দুটো লম্বা ছুটি। একটি মে মাসে গোল্ডেন উইকের ছুটি, আরেকটি ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ১০ দিনের শীতের ছুটি।

ছুটি পেলেই মানুষ এখানে বেরিয়ে পড়ে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনে ভরপুর জাপান। আমাদের মতো যাদের জাপান জীবন সীমিত সময়ের জন্য, তারাও এই সুযোগটা হাতছাড়া করে না। এই তো সুযোগ জাপানকে আরেকটু ভালোভাবে দেখার।

শীতের ছুটির প্রথম দিনেই, গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর রাত ১১টায়, জাপানের দক্ষিণাংশের ফুকুওকা থেকে শুরু করি এক লম্বা যাত্রার। চূড়ান্ত গন্তব্য হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাজধানী টোকিও।

জাপান সাগরের বুক থেকে তোলা রোলার কোস্টারখ্যাত এশিমা-ওহাশি ব্রিজ। ছবি: সংগৃহীত
জাপান সাগরের বুক থেকে তোলা রোলার কোস্টারখ্যাত এশিমা-ওহাশি ব্রিজ। ছবি: সংগৃহীত

আমাদের পরিকল্পনা সর্ব পশ্চিমে জাপান সাগরের তীরবর্তী মরুর শহর তত্তরি হয়ে উত্তর দিকে এগোনোর। তাতে হয়তো দূরত্ব কিছুটা বাড়বে। তবে সাগর, দ্বীপ আর সবুজ পাহাড়ের জাপানে মরুর বৈচিত্র্য উপভোগ করতে এটুকু কষ্ট করাই যায়।

মাঝেমধ্যে হাইওয়েতে বিরতি দিয়ে সারা রাতের যাত্রা শেষে পৌঁছাই শিমানের মাৎসু শহরে। বৃষ্টিস্নাত রাতের হিমশীতল আবহাওয়ায় (তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) আমরা পেরিয়ে গিয়েছি প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার।

ভোরের আলো না ফুটতেই চোখে পড়ে রোলার কোস্টার ব্রিজ নামে খ্যাত এশিমা ওহাশি ব্রিজ। শিমানে ও তত্তরি প্রিফেকচারের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী এই সেতু দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন আকাশ থেকে নেমে এসেছে।

মরু শহর তত্তরির বালিয়াড়ি। ছবি: সাইফুল ইসলাম
মরু শহর তত্তরির বালিয়াড়ি। ছবি: সাইফুল ইসলাম

২০০৪ সালে নির্মাণকাজ সমাপ্ত হওয়া ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার লম্বা এই সেতু মূলত বিশ্বের সবচেয়ে খাঁড়া সেতু বলে পরিচিত।

জাপান সাগরের একটা বিশেষ স্থান থেকে তোলা ছবিতে সবচেয়ে ভয়ংকরভাবে ফুটে ওঠে এই সেতুর সৌন্দর্য। আপাতদৃষ্টিতে বিপজ্জনক এই সেতুর ওপর দিয়েই আবার যাত্রা শুরু তত্তরির উদ্দেশে।

তত্তরিতে গিয়ে প্রথমবারের মতো বালুর সুনিপুণ ভাস্কর্য দেখার সুযোগ হলো। বছরে বছরে মিউজিয়ামের থিম পরিবর্তিত হয়। আমাদের ভ্রমণকালে থিম ছিল দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস ও সংস্কৃতি।

মাদার তেরেসা, মহাত্মা গান্ধী, শাহজাহান-মমতাজের সঙ্গে তাঁদের ভালোবাসার তাজমহল, গৌতম বুদ্ধ, গঙ্গাপাড়ের জীবনসহ নানা স্থাপনার পাশাপাশি স্থান পেয়েছে উনিশ শতকে স্থাপিত পুরান ঢাকার তারা মসজিদের বালুর স্থাপনা।

সোনালি সাছির প্রহরায় পাঁচ শতাব্দী পুরোনো ওসাকা ক্যাসল। ছবি: মাসুদা সম্পা
সোনালি সাছির প্রহরায় পাঁচ শতাব্দী পুরোনো ওসাকা ক্যাসল। ছবি: মাসুদা সম্পা

ভিনদেশি শিল্পীর হাতে মসজিদের পাশাপাশি রিকশা, মুরগিওয়ালা, নির্মাণশ্রমিকসহ স্থানীয় মানুষের কর্মচাঞ্চল্য সুনিপুণভাবে ফুটে উঠেছে। বালুর জাদুঘরের কাছাকাছি সমুদ্রতীরে জাপানের একমাত্র মরুভূমি। সেখানে গিয়ে মরুর জাহাজখ্যাত উটেরও দর্শন মিলল।

তত্তরিতে এক রাত অবস্থানের পর আমাদের পরবর্তী গন্তব্য মাউন্ট ফুজি। ফুজিনোমিয়া যাওয়ার পথে অনির্ধারিতভাবে নেমে গেলাম জাপানের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেট্রোপলিটন শহর ওসাকায়।

ওসাকার ল্যান্ডমার্ক স্কয়ারে চারপাশে উঁচু উঁচু অত্যাধুনিক ভবনের মাঝে রয়েছে প্রায় পাঁচ শতাব্দী পুরোনো ওসাকা ক্যাসল। তৎকালীন জাপানের সেরা এই স্থাপনার চূড়ায় রয়েছে সাছি নামক এক কাল্পনিক চরিত্রের ভাস্কর্য। বাঘের মাথা আর কার্প মাছের শরীরযুক্ত সোনালি সাছি এই ক্যাসলকে আগুন থেকে রক্ষা করে বলে জাপানিদের বিশ্বাস।

মাদাম তুসোর মোমের মূর্তির সামনে। মাদাম তুসোদস, টোকিও। ছবি: সাইফুল ইসলাম
মাদাম তুসোর মোমের মূর্তির সামনে। মাদাম তুসোদস, টোকিও। ছবি: সাইফুল ইসলাম

ওসাকা থেকে আবার যাত্রা শুরু। পথে ভুল করে একবার নেমে গেলাম সুজুকা নামক এক জায়গায়। সেখানেও পেয়ে গেলাম চা–বাগানসদৃশ ফটোসেশনের জন্য ভীষণ উপযোগী এক জায়গা।

রাতে যখন ফুজিনোমিয়ায় পৌঁছাই, মাউন্ট ফুজির আকৃতি বোঝা গেলেও তখনো ফুজির প্রকৃত সৌন্দর্য আমাদের অজানা; যদিও আমাদের থাকার জায়গাটা ছিল ফুজির নিকটতম গেস্টহাউস ফুজি ওয়াইল্ড অ্যাডভেঞ্চারে। সফরের বাকি দিনগুলো আমরা প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্যে থাকার ইচ্ছা থেকে এখানেই অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগেই।

স্ট্যাচু অব লিবার্টির রেপ্লিকার সামনে। ওদায়বা পার্ক, টোকিও। ছবি: মাসুদা সম্পা
স্ট্যাচু অব লিবার্টির রেপ্লিকার সামনে। ওদায়বা পার্ক, টোকিও। ছবি: মাসুদা সম্পা

ফুজি না দেখেই পরদিন টোকিওর উদ্দেশে যাত্রা করি। মাদাম তুসো জাদুঘরের কথা আগে কেবল পত্রিকায় পড়েছি। এবার নিজের চোখে দেখার সুযোগ হলো।

বিশ্বজুড়ে ২৪টি মাদাম তুসো জাদুঘরের একটি টোকিওতে। জাপানের বিখ্যাত ব্যক্তিদের পাশাপাশি নেলসন মেন্ডেলা, মেসি, উসাইন বোল্ট, ডায়ানা, মাইকেল জ্যাকসনসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিদের মোমের মূর্তি স্থান পেয়েছে টোকিওর এই মোমের জাদুঘরে।

মাদাম তুসো জাদুঘর থেকে হাঁটা দূরত্বে টোকিওর আরেক দর্শনীয় স্থান ওদায়বা পার্ক। যেখানে রয়েছে বিখ্যাত স্ট্যাচু অব লিবার্টির রেপ্লিকা। ১৯৯৮-৯৯ সালে জাপান-ফ্রান্সের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নমুনা হিসেবে সাময়িকভাবে এই ভাস্কর্য স্থাপন করা হলেও জনপ্রিয়তার কারণে পরে তা স্থায়ীভাবে স্থান পায়।

আইকনিক সিনড্রেলার ক্যাসলের সামনে। ডিজনিল্যান্ড, টোকিও। ছবি: সাইফুল ইসলাম
আইকনিক সিনড্রেলার ক্যাসলের সামনে। ডিজনিল্যান্ড, টোকিও। ছবি: সাইফুল ইসলাম

ছবিতে দেখে যেকারও ভুল হতে পারে, এটি যেন নিউইয়র্কের মূল সেই ভাস্কর্য। যদিও ৪০ ফুট লম্বা এই স্থাপনা মূল স্থাপনার সাত ভাগের মাত্র এক ভাগ। স্ট্যাচু অব লিবার্টির পেছনে রেইনবো ব্রিজ যেন এর সৌন্দর্যে অন্য মাত্রা যোগ করেছে।

২০১৯ সালের শেষ দিনটি আমাদের কাটে বিখ্যাত থিমপার্ক টোকিও-ডিজনিল্যান্ডে। লম্বা ট্রাফিক পেরিয়ে ঢুকে অল্প এগোতেই চোখে পড়ে আইকনিক সিনড্রেলার ক্যাসল। একটু ঘুরতেই মনে হলো শিশুদের স্বর্গরাজ্য এ থিম পার্ক বড়দের জন্যও ভীষণ উপযোগী।

এক দিনে সব রাইড নেওয়া অসম্ভব হওয়ায় বেছে বেছে যতটা বেশি নেওয়া যায়, সেভাবেই কৌশলী হলাম। বেলা বাড়তেই মিকি মাউস, সিনড্রেলা, ডোনাল্ড ডাক, এলসা, আলাদিনসহ অধিকাংশ ডিজনি ক্যারেক্টারের চিত্তাকর্ষক প্যারেড দেখা শেষ হলো।

বিখ্যাত কার্টুন চরিত্রগুলো সত্যি হয়ে ঘুরে বেড়ায় ডিজনিল্যান্ডে। ছবি: সাইফুল ইসলাম
বিখ্যাত কার্টুন চরিত্রগুলো সত্যি হয়ে ঘুরে বেড়ায় ডিজনিল্যান্ডে। ছবি: সাইফুল ইসলাম

ডিজনিল্যান্ড ঘুরে যাত্রাপথে একনজর দেখে নিলাম ২০২০ অলিম্পিকের ভেন্যু টোকিও ন্যাশনাল স্টেডিয়াম। অলিম্পিকে জাপান কী কী চমক নিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে হাজির হবে, তার জন্য আর মাত্র কয়েক মাসের অপেক্ষা।

এরপর টোকিওকে বিদায় দিয়ে আবার ফিরে আসি ফুজি ওয়াইল্ড অ্যাডভেঞ্চারে। বছরের প্রথম সকালে সৌভাগ্যবশত দেখা হয়ে যায় ফুজিসানের সঙ্গে (জাপানিরা মাউন্ট ফুজিকে ফুজিসান বলেই ডাকে)।

টোকিও থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত মাউন্ট ফুজিকে বিবেচনা করা হয় জাপানের অন্যতম প্রতীক হিসেবে। ১২ হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতার এই পর্বতকে বিশেষত্ব দিয়েছে তার সিমেট্রিক আকৃতি, যা বছরে প্রায় পাঁচ মাস বরফে ঢাকা থাকে।

ফুজির যে প্রকৃত সৌন্দর্য, তা যেন কেবল ফুজির মুখোমুখি হয়ে অনুধাবন করা সম্ভব। মূলত আমরা মাউন্ট ফুজিকে দেখি মোতোসু লেকের ধার থেকে। অনিন্দ্যসুন্দর নীল জলরাশির এই লেকসহ ফুজির ভিউ স্থান পেয়েছে জাপানের ১০০০ ইয়েনের নোটেও।

মোতোসু লেকের পাড়ে। পেছনে মেঘের আড়ালে উঁকি দিচ্ছে মাউন্ট ফুজির চূড়া। ছবি: সাইফুল ইসলাম
মোতোসু লেকের পাড়ে। পেছনে মেঘের আড়ালে উঁকি দিচ্ছে মাউন্ট ফুজির চূড়া। ছবি: সাইফুল ইসলাম

ফুজিদর্শনের সুখস্মৃতি নিয়ে যাত্রা করি জাপানের প্রাচীন রাজধানী কিয়োটোর পথে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ কিয়োটো এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ছিল জাপানের রাজধানী।

লম্বা পথ পেরিয়ে যখন কিয়োটোর গোল্ডেন টেম্পলে পৌঁছাই, তখন দিনের পরিদর্শন সময়সীমার মাত্র ৩০ মিনিট বাকি। হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকে যখন ঐতিহাসিক গোল্ডেন টেম্পল দেখি, সব ক্লান্তি যেন এক নিমেষেই উধাও। ১৪০৮ সালে মন্দির ঘোষিত স্থাপত্যশিল্পের অপূর্ব নিদর্শন এই তিনতলা ভবনের ওপরের দুটি তলা সম্পূর্ণরূপে স্বর্ণ দ্বারা আবৃত।

বিখ্যাত স্বর্ণমন্দির। কিয়োটো। ছবি: তাসরিন সুলতানা
বিখ্যাত স্বর্ণমন্দির। কিয়োটো। ছবি: তাসরিন সুলতানা

কৃত্রিম লেকের মাঝে সোনালি এই মন্দিরের ছায়া যেকোনো পর্যটকদের মন ভোলানোর জন্য যথেষ্ট। পরে কিয়োটো টাওয়ার ও কিয়োটো ইমপিরিয়াল প্যালেস ঘুরে ফেরার পথ ধরি। এবার কোবে হয়ে হিরোশিমার দিকে।

হিরোশিমা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত হিরোশিমা। আমাদের এবারের সফরের শেষ স্পট ছিল হিরোশিমা পিস পার্ক ও হিরোশিমা পিস মিউজিয়াম। হিরোশিমা প্রিফেকচারাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন হলের ভগ্নাংশ এখনো দাঁড়িয়ে আছে পিস পার্কের পাশে। মাত্র ২০০ ইয়েন এন্ট্রি ফি দিয়ে ঢুকলাম মিউজিয়ামে।

বাইরে রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশের সঙ্গে কোনোই মিল নেই ভেতরের ভাবগম্ভীর পরিবেশের। ৬৫ বছর আগের ঘটনা এতটাই হৃদয়স্পর্শীভাবে উপস্থাপনা করা হয়েছে, যেন মনে হচ্ছে কয়েক দিন আগেই শতাব্দীর ভয়াবহতম এই পারমাণবিক হামলা করা হয়েছে।

আহত আর নিহত ব্যক্তিদের রক্তমাখা কাপড়, ব্যবহার্য জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনা খুব যত্ন করেই এখনো রাখা হয়েছে হিরোশিমার এই পিস মিউজিয়ামে।

অরিগ্যামি নির্মিত পাখি (যার গায়ে বড় করে লেখা ‘No more Hiroshimas) হাতে হিরোশিমা পিস মিউজিয়ামে। ছবি: সাইফুল ইসলাম
অরিগ্যামি নির্মিত পাখি (যার গায়ে বড় করে লেখা ‘No more Hiroshimas) হাতে হিরোশিমা পিস মিউজিয়ামে। ছবি: সাইফুল ইসলাম

পারমাণবিক বোমার আফটার-ইফেক্টের (লং-টার্ম ইফেক্ট অব আয়োনাইজিং রেডিয়েশন) কারণে সাদাকো সাসাকি নামক লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত এক কিশোরী, যে এক হাজার কাগজের পাখি বানিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল, তার মর্মান্তিক মৃত্যুকাহিনি তো যেকারও চোখে জল আনতে বাধ্য।

তার স্মরণে আজও হিরোশিমায় বানানো হচ্ছে সেই পাখি। মিউজিয়ামের প্রবেশপথেই কোমলমতি দর্শনার্থীদের হাতে অরিগ্যামি এই পাখি তুলে দিতে দেখা গেছে।

মিউজিয়ামজুড়েই যেন একটাই বার্তা—‘No more Hiroshimas’. পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত পৃথিবী গড়ার উদাত্ত আহ্বান হিরোশিমার পথেপ্রান্তরে।

হাইওয়েতে পোষা কুকুরের বিশ্রামস্থল, যেখানে তাদের জন্য শাওয়ার আর টয়লেটের ব্যবস্থাও আছে। ছবি: সাইফুল ইসলাম
হাইওয়েতে পোষা কুকুরের বিশ্রামস্থল, যেখানে তাদের জন্য শাওয়ার আর টয়লেটের ব্যবস্থাও আছে। ছবি: সাইফুল ইসলাম

জাপানের হাইওয়ের কথা আলাদা করে বলতে হয়। সাত দিনের এই সফরে ছোট-বড় প্রায় ১৫টি শহর আর তিন হাজার কিলোমিটারের ওপরে ভ্রমণ করতে হয়েছে। হাইওয়েতে কিছু দূর পরপরই সার্ভিস এরিয়া, যেখানে খাবার, বিশ্রাম, ফুয়েলিং—সবকিছুরই খুব ভালো ব্যবস্থা রয়েছে।

তবে শুধু মানুষের জন্য নয়, পোষা প্রাণীদের জন্য একই ব্যবস্থা। দীর্ঘ ভ্রমণে তারাও তো ক্লান্ত হয়!

টোকিওর বিখ্যাত রেইনবো ব্রিজের সামনে ট্যুর ডি টোকিও টিম। ছবি: সাইফুল ইসলাম
টোকিওর বিখ্যাত রেইনবো ব্রিজের সামনে ট্যুর ডি টোকিও টিম। ছবি: সাইফুল ইসলাম

যোগাযোগব্যবস্থাকে সহজ করার জন্য তারা বানিয়েছে শত শত টানেল, কখনো পাহাড়ের মধ্য দিয়ে, কখনোবা সমুদ্রের নিচে। কেউ চাইলেই টোলযুক্ত এসব হাইওয়ে পরিহার করে সাধারণ রাস্তা ব্যবহার করেও এক শহর থেকে আরেক শহরে পাড়ি দিতে পারেন। শুধু গতির সীমাবদ্ধতা ছাড়া বাকি সব সুযোগ-সুবিধা একই।

লম্বা সফরের শেষ দিকে সবার মধ্যে ফুকুওকায় ফেরার যে আকুলতা, তাতে মনে হয়েছে সময়ের প্রয়োজনে মানুষ ঘর থেকে বহুদূরে ঘর বানিয়ে নেয়। আসলে নিতে হয়। ২ জানুয়ারি যখন ঘরে ফিরি, তখন শারীরিক ক্লান্তির সঙ্গে সঙ্গে যোগ হয়েছে জাপান সম্পর্কে একরাশ মুগ্ধতা।

প্রকৃতি ও প্রযুক্তির মেলবন্ধন আর নিজেদের ইতিহাস–ঐতিহ্যকে লালন করার সর্বাত্মক চেষ্টা জাপানকে করেছে অনন্য।


লেখকেরা ফুকুওকার কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গবেষক। ই–মেইল: <[email protected]>