করোনাভাইরাস নিয়ে আমাদের এখনই ভাবতে হবে

করোনাভাইরাস। ছবি: allnurses.com
করোনাভাইরাস। ছবি: allnurses.com

ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ে আমাদের বেশ ধকল গেল। এখনো অনেক পরিবার ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, তার রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ডেঙ্গু নিয়ে ভাবতে ভাবতেই আমাদের সামনে হাজির হয়েছে আর একটি মরণঘাতী ভাইরাস। এই ভাইরাসের নাম ‘করোনাভাইরাস’ (coronavirus)।

করোনাভাইরাসের কারণে চীনে মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও চিকিৎসাক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া চীন এখনো এই ভাইরাস মোকাবিলায় কিছুই করতে পারেনি। এ পর্যন্ত চীনে ৮০ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

করোনাভাইরাসের সবচেয়ে কঠিন দিক হলো এর মাধ্যমে কেউ আক্রান্ত হলে ওই আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে শত শত মানুষ সংক্রমিত হতে পারে। আর যেহেতু এই ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক তৈরি হয়নি তাই প্রতিরোধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

ইতিমধ্যে চীন সংশয় প্রকাশ করেছে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা কঠিন হবে। হাজার হাজার মাইল দূরের যুক্তরাষ্ট্র এই ভাইরাস মোকাবিলায় ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। আর বাংলাদেশ তো চীনের অনেক কাছে। তা ছাড়া ব্যবসা ও পড়াশোনার জন্য প্রচুর বাংলাদেশি চীনে যাতায়াত করছে। যেকোনো সময় তাই বাংলাদেশে এই করোনাভাইরাস ঢুকে যেতে পারে।

ঠান্ডা–কাশি বা শ্বাসজনিত সমস্যা নিয়ে বিশেষ করে চীন থেকে কেউ বাংলাদেশে প্রবেশ করলে দরকার তার প্রতি আলাদা নজরদারি করা। শুনেছি বিমানবন্দরে চীন থেকে আগত যাত্রীদের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আমার পরামর্শ থাকবে চীন থেকে আসা সব যাত্রীর ব্লাড ও ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে ডেটাবেইস তৈরি করার। মনে রাখতে হবে একবার বাংলাদেশে এই ভাইরাস প্রবেশ করলে এটা ডেঙ্গুর চেয়েও মহামারি আকার ধারণ করবে।

চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। ছবি: রয়টার্স
চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। ছবি: রয়টার্স

বাংলাদেশে সব সময় আমরা ধীরে সবকিছু বুঝি এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তা ছাড়া এ ধরনের সমস্যা সমাধানে আমরা অতটা গুরুত্বও দিই না বা আমরা বুঝি না। আমাদের লোকবল আছে। সমস্যা হলো আমাদের সচেতনতার অভাব। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকায় আমরা সবাই এ মুহূর্তে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। তাই আমাদের করোনাভাইরাস নিয়ে ভাবার মতো সময় আছে কি না, তা নিয়েও আমি শঙ্কিত।

বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে দ্রুত করোনাভাইরাস নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক করা। আইসিডিডিআরবি ও অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্রুত কথা বলতে হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এই ভাইরাস মোকাবিলা করতে এখন থেকেই কাজ করতে হবে এবং এটিকে যেকোনো কিছুর চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে একমাত্র সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা দেশের মানুষকে ভয়াবহ এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।
–––

ড. মো. ফজলুল করিম: পোস্টডক্টরাল রিসার্চ ফেলো, পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র।