দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা
দক্ষিণ কোরিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের শহর হিসেবে পরিচিত ঐতিহাসিক জঞ্জু শহরে হয়ে গেল বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ইন কোরিয়ার (বিএসএকে) দুই দিনব্যাপী ১৮তম শীতকালীন মিলনমেলা।
বিএসএকে ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বছরজুড়ে করে থাকে নানা অনুষ্ঠান। এর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মনে স্থান করে নিয়েছে সংগঠনটি। দেশটিতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের কাছে এই সংগঠন এক আস্থার নাম।
বিএসএকে বছরজুড়ে ছাত্রছাত্রীদের নানাভাবে সহযোগিতা ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেতুবন্ধ তৈরির পাশাপাশি বাংলাদেশে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষাবিষয়ক তথ্য দিয়েও সহযোগিতা করে। সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন আকর্ষণীয় শহর ও দর্শনীয় স্থানে বছরে দুটি করে মিলনমেলার আয়োজন করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত শনি ও রোববার (২৫-২৬ জানুয়ারি) জঞ্জু শহরে আয়োজন করা হয় সংগঠনের ১৮তম শীতকালীন মিলনমেলা। প্রায় দেড় শ ছাত্রছাত্রী ও বিভিন্ন পেশাজীবী বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এই মিলনমেলা।
প্রথম দিন জনবুক ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়ামে মধ্যাহ্নভোজের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ ভবনের অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ ও কোরিয়ার জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল কার্যক্রম।
এবারও অনুষ্ঠানে কোরিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী ও দুই দেশের সম্মানিত ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের নির্বাহী সদস্য মিনারুল ইসলাম। এরপর সংগঠনের সার্বিক কার্যক্রম উপস্থাপন করেন নির্বাহী সদস্য তাহমিনা বিলকিস। উপস্থাপনা করেন তাহমিনা তাসনীম ও মো. ইমতিয়াজ উদ্দিন ভূঁইয়া।
মিলনমেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন জনবুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডেপুটি ভাইস প্রসিডেন্ট শিম জেউ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রোকনুজ্জামান, কেবিসিসির এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান কিয়ংইন ওহ, বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়ার (বিসিকে) সভাপতি এম জামান ও সাবেক সভাপাতি হাবিল উদ্দিন, টিকন সিস্টেমের সিইও এম এন ইসলাম এবং প্রাইম ট্রাভেলের সিইও আবু বক্কর সিদ্দিক প্রমুখ।
আরও উপস্থিত ছিলেন কিয়ংদোং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. নুর আলম ও ঘানাইয়ান স্টুডেন্টস ইন কোরিয়া অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের প্রেসিডেন্ট ডেলা।
অনুষ্ঠানে অতিথিরা নবীন ও ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের হাতে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট তুলে দেন।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। তিনি এ ধরনের ছাত্রসংগঠনের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বিএসএকের প্রশংসা করেন। তিনি দেশটিতে অবস্থানরত ছাত্রছাত্রী ও বিভিন্ন পেশাজীবী বাংলাদেশিদের নানাবিধ অবদানের কথা উল্লেখ করেন।
বিশেষ অতিথিরা তাঁদের বক্তব্যে পড়াশোনা শেষ করার এখান থেকে গবেষণালব্ধ জ্ঞান কীভাবে নিজ দেশে প্রয়োগ করা যায় সেই বিষয়ে আলোকপাত করেন। তাঁরা লেখাপড়ার চাপের পরও এত সুন্দর একটা মিলনমেলা আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
নবীন ও ডিগ্রিপ্রাপ্তদের পক্ষে বক্তব্য দেন যথাক্রমে জেসমিন আক্তার ও শামসুদ্দিন আহমেদ। বিদায়ী ইটিআরটি সদস্যদের পক্ষে স্মৃতিচারণা করেন মিলন চৌধুরী। বাংলাদেশি গবেষকদের পক্ষ থেকে সংগঠনের ব্যাপারে অভিমত ব্যক্ত করেন ড. মোহাম্মদ শামসুদ্দিন আহমেদ। সাবেক ইটিআরটি সদস্যদের পক্ষে বক্তব্য দেন জনবুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডিতে অধ্যয়নরত মো. আফজাল হোসেন। সমাপনী বক্তব্য দেন সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. গোলাম রাব্বানী।
আলোচনার পর তাহমিনা বিলকিস ও জান্নাত ঊর্মির উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। এ পর্ব সাজানো হয় কোরিয়াতে পড়াশোনা করতে আসা ছাত্রছাত্রীদের গান, নাচ, কবিতা ও কোরীয় ভাষায় কুইজ প্রতিযোগিতা দিয়ে।
প্রথম দিনের মিলনমেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল ই-বুক প্রকাশ। ই-বুকে প্রকাশ করা হয় ১৮টি গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনি নিয়ে সাজানো এ বারের ১২তম সংখ্যা। এর মোড়ক উন্মোচন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিম জেউ। উপস্থাপনা করেন হাসানুল বান্না।
এরপর অতিথিরাসহ সবাই রাতের খাবারে অংশগ্রহণ করেন। রাতের খাবার শেষেই শুরু হয় ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট। এতে ১৬টি দল অংশগ্রহণ করে। বিজয়ী হয় জঞ্জু দল।
ব্যাডমিন্টনের পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয় মেয়েদের বালিশ খেলা, সুই-সুতা, লুডু, ছেলেদের বেলুন নিয়ে দৌড়, কাঠি দিয়ে চিপস সংগ্রহসহ নানা ধরনের মজার মজার খেলা, যা চলে মধ্যরাত অবধি।
শেষ পর্বে ছিল সবার সঙ্গে পরিচিতি পর্ব। এ পর্বে কোরিয়ার বিভিন্ন শহর থেকে আগত শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার সুযোগে মেতে ওঠেন খোশগল্পে। নিজের অব্যক্ত কথাগুলো নিয়ে চলতে থাকে পরিচয় পর্ব।
মিলনমেলার শেষ দিন তিনটি বাসে করে সবাই শহরের বিখ্যাত সব আকর্ষণীয় ও মনোরম স্থানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বেরিয়ে পড়েন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল কোরিয়ার ঐতিহ্যবাহী জুয়েলারি মিউজিয়াম পরিদর্শন। দুপুর পর্যন্ত চলে এই সৌন্দর্য উপভোগ। ছবি তোলার পাশাপাশি সবাই মনভরে উপভোগ করেন দর্শনীয় নানা কিছু।
ভ্রমণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিনন্দন আজুং লেকের পাড়ে সবাই অংশগ্রহণ করেন মধ্যাহ্নভোজে। এরপর অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। বিজয়ীরা অতিথিদের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। বিকেলে সবাই একসঙ্গে জঞ্জুর বিখ্যাত হানুক ভিলেজ পরিদর্শনের মধ্যে দিয়ে মিলনমেলার কার্যক্রম সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
মো. হাসানুল বান্না: পিএইচডি শিক্ষার্থী, ফটোনিক ন্যানো ম্যাটেরিয়ালস ল্যাবরেটরি, দক্ষিণ কোরিয়া।