ভালো নেই বেইজিং

বেইজিংয়ের প্রকৃতি। ছবি: লেখক
বেইজিংয়ের প্রকৃতি। ছবি: লেখক

রঙিন ঝকমকে আলোর বেইজিং হঠাৎই যেন ঢেকে গেছে গাঢ় অন্ধকারে। সবুজ পাতা ধীরে ধীরে হলুদে পরিণত হওয়া, অবশেষে শুকনো হয়ে গাছ শূন্য করে ঝরে পড়া, সাদা মেঘের স্নোফল—প্রতিটি রূপের পর এ যেন এক অপরূপে বেইজিংকে দেখছি। চীনা নববর্ষের আলোকে পুরো শহর যেখানে আনন্দ–উৎসবে মেতে ওঠার কথা, সেখানে সর্বত্র এক অজানা ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বেইজিংয়ের প্রকৃতি। ছবি: লেখক
বেইজিংয়ের প্রকৃতি। ছবি: লেখক

বেইজিংয়ের ডর্মে বসে যখন এ লেখা লিখছি, সে সময় শুধু চীনেই করোনাভাইরাস কেড়ে নিয়েছে প্রায় ২০০ প্রাণ। আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ছাড়িয়েছে সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি। পুরো শহর, পুরো দেশ ভীতসন্ত্রস্ত। গত ৩১ ডিসেম্বর প্রথম এ ভাইরাস শনাক্ত করা হয় হুবেই প্রদেশের উহান শহরে। তবে প্রথম থেকেই পূর্ণ সতর্কতা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে চীন সরকার।

স্কলারশিপ নিয়ে ছয় মাস আগে যখন প্রথম শহরটায় পা রাখলাম, অন্য রকম ভালো লাগা-মুগ্ধতা ছিল। এত পরিচ্ছন্ন–ডিসিপ্লিন একটা শহর যেন কালো মেঘে ঢেকে আছে। একধরনের আতঙ্কে সবাই।

বেইজিংয়ের প্রকৃতি। ছবি: লেখক
বেইজিংয়ের প্রকৃতি। ছবি: লেখক

এই বেইজিংয়েই রয়েছে ৭০টি বিশ্ববিদ্যালয়। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ডর্মগুলোয় আমরা থাকি, সেখানে প্রতিদিনই নিয়ম করে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আসছেন। রুটিন চেকআপ করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় চলছে শীতকালীন ছুটি। কিন্তু শহর ছাড়তে বারণ করে দেওয়া হয়েছে সবাইকে। প্রতিটি শহর লকড ডাউন হয়ে আছে। এক শহরের সঙ্গে অন্য শহরের যোগাযোগব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। ডর্মের জানালায় বসে মুষড়ে পড়া বেইজিংকে দেখা ছাড়া এ মুহূর্তে কোথাও যাওয়ার উপায় নেই।

ছোট দোকানপাটগুলো বন্ধ এখানে। তবে সুপারশপ ও ক্যানটিন খোলা রয়েছে বেইজিংয়ে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এ মহামারির বিকাশকে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিহত করা, সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সংহত নেতৃত্বের অধীনে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রাদেশিক সরকার ও পৌরসভা সম্মিলিতভাবে মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে এবং জনসাধারণকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করছে।

ছোট দোকানপাটগুলো বন্ধ রয়েছে। ছবি: লেখক
ছোট দোকানপাটগুলো বন্ধ রয়েছে। ছবি: লেখক

দূর দেশে বসে প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমগুলোয় চোখ পড়েছে, প্রিয় মাতৃভূমির কী অবস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, কোনো দেশই আতঙ্কের বাইরে নয়।

ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, সবাই যেন সুস্থ থাকেন। ভালো থাকুক প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। ভালো থাকুক আমার ভালো লাগার শহর বেইজিং।

তথ্যসূত্র: চায়না হেলথ অথোরিটি।