টরন্টোয় দক্ষিণ এশিয়ার সংকট নিয়ে বৈঠক

টরন্টোয় দক্ষিণ এশিয়ার সংকট নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক। ছবি: পিডিআই, কানাডা
টরন্টোয় দক্ষিণ এশিয়ার সংকট নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক। ছবি: পিডিআই, কানাডা

সাম্প্রদায়িকতা ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশে দেশে বর্তমান সামাজিক, রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংকট নিয়ে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক উদ্যোগ (পিডিআই) কানাডা আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকের বক্তারা এ কথা বলেন।

গত ২৫ জানুয়ারি স্থানীয় সময় বিকেলে টরন্টোর হোপ ইউনাইটেড চার্চে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গোলটেবিলে দক্ষিণ এশীয় দেশ ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিত্বমূলক বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুল মালিক। তিনি আলোচনার শুরুতে বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে চতুর্দিকের ঘটনাবলির সঙ্গে নিজেদের সংযুক্ত করা ও আন্দোলনে অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজেই সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সমস্যাগুলো মোকাবিলায় অংশগ্রহণ করতে পারি।’

এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন অপর যুগ্ম আহ্বায়ক বিদ্যুৎ রঞ্জন দে। তিনি সংক্ষেপে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।

বৈঠকে ইন্ডিয়া সিভিল ওয়াচ কানাডার পক্ষে ড. অপর্ণা সুন্দর ভারতের সাম্প্রতিক রাজনীতি, এনআরসি, সিএএ, সাম্প্রদায়িকতা ও কাশ্মীরে বিজেপি সরকারের অগণতান্ত্রিক নানাবিধ পদক্ষেপ প্রসঙ্গে বক্তব্য দেন।

মিয়ানমার বিষয়ে বলেন রোহিঙ্গা অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডার সভাপতি আনওয়ার আরাকানি। তিনি মিয়ানমারের স্বৈরশাসকদের হাতে তার বাবাকে হারিয়েছেন। তিনি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা নির্যাতনের মর্মস্পর্শী ঘটনাবলি তুলে ধরেন।

অ্যালায়েন্স অব প্রগ্রেসিভ কানাডিয়ানস ব্রাম্পটন চ্যাপটারের হারপার মিন্দারজিৎ সিং আলোচনা করেন ভারতের বিজেপি সরকার কর্তৃক সংখ্যালঘুদের ওপর চাপানো আইনি প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে।

শ্রীলঙ্কা নিয়ে বলেন বালা সিথামপারা পিল্লাই। তিনি সেখানে বিদ্যমান সিংহলিজ ও তামিলদের মধ্যে রাজনৈতিক বিবাদ বিষয়ে আলোকপাত করেন।

পাকিস্তান প্রসঙ্গে বলেন দ্য কমিটি অব প্রগ্রেসিভ পাকিস্তানি-কানাডিয়ানস কিচেনার চ্যাপটারের ওমর লতিফ। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অত্যাচারের জন্য পাকিস্তানি হিসেবে বাংলাদেশিদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

কানাডিয়ানস ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস ইন কাশ্মীরের পক্ষ থেকে সাংবাদিক জুবায়ের দার আহমেদ কাশ্মীরের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন।

বৈঠকে আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য দেন ডাকসুর সাবেক এজিএস ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি নাসির উদ দুজা। তিনি বলেন, এই উদ্যোগ সবে শুরু। এটাকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিতে হবে। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় সব দেশে গণতান্ত্রিক অবক্ষয়, ক্ষমতার বলয়ে দুর্নীতির বিস্তার ও সাম্প্রদায়িকতার রাজনৈতিক ব্যবহারের বিপক্ষে প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

বক্তারা আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রদায়িক বিভীষিকা ও অশান্তি ওই অঞ্চলের জাতীয় অর্থনীতি ধ্বংস, শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের প্রতি অর্থনৈতিক শোষণের মাত্রা বৃদ্ধি ও বিশ্ব পুঁজিবাদের থাবা সম্প্রসারণে সহায়তা করছে।

আলোচনার পর আলোচকেরা প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন। উপস্থিত সবাই দক্ষিণ এশীয় প্রবাসীদের নিয়ে এই ধরনের উদ্যোগের স্বাগত জানান এবং এই ধারা অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আলোচনা সঞ্চালনা করেন আয়োজক সংগঠনের সমন্বয়ক মাহবুব আলম।

বৈঠকে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক প্রবাসী অংশ নেন।