ব্রাইটনে বেদের মেয়ে জোছনার পরিবেশনা ১৫ ফেব্রুয়ারি

‘বেদের মেয়ে জোছনা’ যাত্রাপালার কলাকুশলীরা। ফাইল ছবি
‘বেদের মেয়ে জোছনা’ যাত্রাপালার কলাকুশলীরা। ফাইল ছবি

ব্রিটেনে সাড়াজাগানো ও দর্শকনন্দিত বাংলা যাত্রাপালা ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ এবার ব্রাইটনের ব্রাইটহেম সেন্টারে মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাতটায়।

পূর্ব লন্ডনের রিচমিক্স ও লিডসের সেভেন আর্টস সেন্টারে উপচে পড়া দর্শকদের উপস্থিতি ও করতালিসহ দাঁড়িয়ে সম্মান জানানো সম্মোহনী এই পরিবেশনা এর আগে কার্ডিফ শহরে ও ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিসের ব্রুনেই গ্যালারিতেও প্রদর্শিত হয়।

টি এম আহমেদ কায়সারের পরিচালনায় জনপ্রিয়তম এই যাত্রাপালার ইংরেজি নাম ‘ক্লাস কনফ্লিক্ট’।

সহকারী পরিচালকের ভূমিকায় রয়েছেন শামীম শাহান ও শাহীন মিতুলি। পালা নিয়ে সংক্ষিপ্ত ভূমিকা ও বিশেষ বয়াতির ভূমিকায় রয়েছেন সোয়াস সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের শিল্প পরিচালক, ইতিহাসবিদ ড. সংযুক্তা ঘোষ।

পূর্ব সাসেক্সভিত্তিক বর্ণবাদবিরোধী সংগঠন ডাইভার্সিটি লুইস ও রাধারমণ সোসাইটির প্রযোজনায় এই বিনির্মাণবাদী পরিবেশনায় গল্পকথক বা বয়াতির ভূমিকায় রয়েছেন কায়সার নিজেই। নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন সোনিয়া সুলতানা, রাজার চরিত্রে কবি ও সাংবাদিক সারওয়ার ই আলম, যুবরাজ চরিত্রে সোহেল আহমেদ।

এ ছাড়া কি–বোর্ড ও কণ্ঠ সহযোগিতায় আছেন শিল্পী অমিত দে। তবলায় তানিম আহমেদ। অন্য চরিত্রে রাহেল চৌধুরী ও শিশুশিল্পী লুজান প্রমুখ। পালার বিভিন্ন সিকোয়েন্সে সংগীত পরিবেশন করবেন জেসি বড়ুয়া।

বেদের মেয়ে চরিত্রে সোনিয়া সুলতানা। ফাইল ছবি
বেদের মেয়ে চরিত্রে সোনিয়া সুলতানা। ফাইল ছবি

ডাইভার্সিটি লুইসের কর্ণধার ও ব্রাইটন বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন প্রভাষক অ্যান্থনি কালুমে বলেন, ‘আমি সোয়াসে এই পরিবেশনা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখেছি। বিশেষ করে হৃদয়স্পর্শী বাংলা লোকগান, অভিনয় ও নাচে বিনোদনমুখর এই কাহিনির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সামন্তবাদী ও পুঁজিবাদী সমাজে শ্রেণিসংগ্রামের রাজনৈতিক চিত্রই প্রতিফলিত হয়েছে। আমি যারপরনাই অভিভূত। আশা করছি, ব্রাইটনের এই মঞ্চায়নে অবাঙালি দর্শকদের পাশাপাশি বাঙালি দর্শক, বিশেষ করে তরুণ ব্রিটিশ বাঙালি দর্শকেরাও যোগ দেবেন।’

পরিচালক টি এম আহমেদ কায়সার বলেন, ‘নয়নাভিরাম সমুদ্রের শহর ব্রাইটনে এসে বাংলা যাত্রাপালা মঞ্চায়ন করতে পারা খুব আনন্দের। আমরা বাংলার এই লোকগাথাকে আজকের বিশ্বরাজনীতির এলিগরি হিসেবে উপস্থাপন করছি। বাইবেলে ইভের মন্ত্রণাদাতা ইডেন গার্ডেনের সেই সর্প, মেসোপটেমিয়ার বীর গিলগামেশের পরমায়ু হরণ করে নিয়ে যাওয়া সেই একই সর্পই নতুন মুখোশ নিয়ে নেহাত এই বাংলা লোকগাথার যুবরাজকে ছোবল হানতে দেখি। তাতেই প্রকট হয়ে উঠতে দেখি শ্রেণিবৈষম্যের রাজনীতি।’

কায়সার আরও বলেন, ‘যাত্রাপালাটি এক অর্থে এর চিরন্তন লোকসাংগীতিক ঐতিহ্য নিয়ে তো হাজির হবেই; উপরন্তু এতে যুক্ত হবে বৈশ্বিক মিথ ও নানামাত্রিক মেটাফর, এলিগরিসহ এক গভীর বিনির্মাণবাদী উন্মোচন। আমরা অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। ব্রাইটনের বিভিন্ন প্রান্তের দর্শকেরাও ধারণা করি, এই নতুন ধরনের নাট্য-সংগীত দেখতে হাজির হবেন যথারীতি।’

উল্লেখ্য, বাংলার প্রাচীনতম গ্রামীণ থিয়েটার হিসেবে পরিচিত এই যাত্রাপালাকে নানা রকম মিথের সঙ্গে যুক্ত করে বাঙালি ও অবাঙালি দর্শকদের জন্য ইউরোপে এক সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী পরিবেশনার সূচনা করেছেন পরিচালক আহমেদ কায়সার ও তাঁর সংগঠন রাধারমণ সোসাইটি। এটি ব্রিটেনের কার্ডিফ ও ব্রাইটনে মঞ্চায়নের জন্য যথাক্রমে ইতিমধ্যেই আর্ট কাউন্সিল ওয়েলস ও চক ক্লিফ ট্রাস্ট গ্রান্ট পেয়েছে।