যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ আকর্ষণীয় গন্তব্য

সেমিনারে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন
সেমিনারে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন

যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য। লন্ডনে ‘ইনভেস্টিং ইন ডিজিটাল বাংলাদেশ: ফিনটেক টু হাইটেক’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি–বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ কথা বলেন।

যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ হাইকমিশন গত সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই সেমিনার আয়োজন করে।

প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ বলেন, বিগত এক দশকে বাংলাদেশ অনুন্নত দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এ অর্থনৈতিক উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এই অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এবং তাঁর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি–বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে।

সেমিনারে দেশটির ডিজিটাল, কালচারাল, মিডিয়া অ্যান্ড স্পোর্টসমন্ত্রী ম্যাট ওয়ারম্যান, লর্ড রণবীর সিং সুরি, লর্ড ডেবিড হাওয়েল, লর্ড জিতেস গাডিহা, ভ্যালিরি ভাজ এমপি, স্টিফেন ম্যাটক্লিপ এমপি ও স্টিফেন টিমস এমপিসহ প্রায় ১৫০ জন ব্রিটিশ ও বাংলাদেশি-ব্রিটিশ উদ্যোক্তা এবং বাংলাদেশি-ব্রিটিশ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তি অংশ নেন।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দিচ্ছেন হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দিচ্ছেন হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন

অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত সম্পর্কে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করে এ সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় জানতে চান। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ও দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম তাঁদের এসব প্রশ্নের জবাব দেন এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

প্রতিমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, বর্তমানে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশাল দক্ষ কর্মশক্তির উত্থান ঘটেছে।

আইসিটি খাতে গত এক দশকে বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং ২০২৫ সালের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের খাত হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এর জন্য ইতিমধ্যেই সারা দেশে ফাইবার অপটিক লাইন স্থাপন ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। নাগরিকদের জন্য ৬০০টি ই-সার্ভিস চালু হয়েছে। প্রায় ১০ কোটি লোক এখন বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, যাদের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ আইটি পেশাজীবী রয়েছেন।

জুনাইদ আহমেদ বলেন, এ ছাড়া পরিকল্পনা করা হয়েছে ই-গভর্নমেন্টের, স্থাপন করা হয়েছে স্টার্টআপ বাংলাদেশ কোম্পানি এবং ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি তহবিলের মাধ্যমে বিভিন্ন স্টার্টআপ কোম্পানিকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী জানান, এ বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপনে ১০০টি স্টার্টআপকে বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্রান্ট দেওয়া হবে। তিনি এ বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায় ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এবং ২০২১ সালে ওয়ার্ল্ড আইটি কংগ্রেস অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা জানিয়ে ব্রিটিশ ও বাংলাদেশি-ব্রিটিশ উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।

সেমিনারে উপস্থিতির একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন
সেমিনারে উপস্থিতির একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন

দেশটির বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের বিশাল সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাঁরা যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সুদৃঢ় বিনিয়োগ সম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি উভয় দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেন।

স্বাগত বক্তব্যে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম দেশটির বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে তথ্যপ্রযুক্তির রপ্তানি মাত্র ১৬ শতাংশ। এর পরিমাণ ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে তিনি ব্রিটিশ ও বাংলাদেশি-ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

হাইকমিশনার বঙ্গবন্ধু স্টার্টআপ ইনোভেশন গ্রান্টের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশি-ব্রিটিশ তরুণ উদ্যোক্তাদের তাঁদের উদ্ভাবনী স্টার্টআপ প্রকল্পের প্রস্তাব আইসিটি বিভাগে পাঠানোর আহ্বান জানান।

হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম ও এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটালের চেয়ারম্যান ইফতি ইসলাম সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন ও সম্ভাবনার ওপর দুটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। Leveraging ICT for the Employment and Growth of the IT-ITES Industry-এর পরামর্শক সামি আহমেদ সেমিনারটি পরিচালনা করেন। বিজ্ঞপ্তি