মিডলাইফ ক্রাইসিস
সাড়ে চারটা বাজতেই তুহিনের অস্থির লাগতে থাকে। উপমা বলেছে, ঠিক সোয়া পাঁচটায় ক্যাফেতে থাকবে। এক্ষুনি না বের হলে সময়মতো পৌঁছানো দায়।
এদিকে মাসুদ ভাই কী যে ভ্যাজর–ভ্যাজর শুরু করেছেন ইদানীং। সদ্য পাওয়া প্রমোশনের যোগ্যতা তিনি প্রতি মুহূর্তে বুঝিয়েই ছাড়বেন।
পাঁচ মাস খাটুনির পরে তুহিনদের চারজনের টিমের প্ল্যান করা প্রজেক্ট সবার সামনে প্রেজেন্ট করার সঙ্গে সঙ্গেই থাম্বস আপ দেখিয়ে দিয়েছিলেন বস। একটু বেশিই বুঝি প্রশংসা করে ফেলেছিলেন তিনি তুহিন আর আরাফাতের। মাসুদের ব্যাপারটা যে পছন্দ হয়নি, তা বোঝা যাচ্ছে এখন। আলগা অদ্ভুত কাজ দেখানোর উদ্ভট প্রচেষ্টা দেখে।
দুই দিন ধরে টিম মিটিংয়ের নতুন নিয়ম করেছে সে। সময় ঠিক করেছে বিকেল সাড়ে চারটা। উদ্দেশ্য অতি স্পষ্ট। কেউ যেন পাঁচটার আগে অফিস থেকে বেরোতে না পারে।
মনে মনে তুহিন কুৎসিত একটা গালি দেয় মাসুদকে। গাধার বাচ্চার জীবনে বউ নাই, প্রেম নাই; মানুষকে বিরক্ত করা ছাড়া কোনো শখও নাই। অথচ তুহিনের আজকে বের হওয়া খুবই জরুরি, খুবই।
অস্থির অসহ্যকর একটা সময় পাড়ি দিতে দিতে সে ক্লান্ত। আজকেই একটা ফয়সালা করতে চায় সে। নাবিলা একটু কষ্ট পাবে হয়তো। কিন্তু চারটি জীবন হাহাকার করা শূন্যতা নিয়ে জীবন্মৃতের মতো ঢাকার ধুলাবালি মেশানো মেঘের ফাঁকে আকাশ দেখার ব্যর্থ চেষ্টা করার চেয়ে অন্তত দুজন হাতে হাত ধরে নির্মল বাতাসে নিশ্বাস নিক।
টু চুজ দ্য লেসার ইভিল, স্যাক্রিফাইস ওয়ান টু সেভ মেনি—এগুলোই তো সারা দিন জুনিয়রদের ট্রেনিংয়ে শেখায় সে। তবে নিজের জীবনে কেন সেটাকে সে ধারণ করবে না? তারপরেও আদিবার হাস্যোজ্জ্বল মিষ্টি চেহারাটা কাঁটার মতো গলার কাছে বিঁধে থাকে তুহিনের। আদিবা ওকে আগের মতোই ভালোবাসবে তো?
আরাফাতকে ব্যাগ গোছাতে দেখে তুহিন আড়মোড়া ভেঙে প্রশ্ন করে, কিরে, ব্যাগ গোছাচ্ছিস? মিটিংয়ে থাকবি না?
আরাফাত দাঁত বের করে হাসে, খবর পান নাই? মিটিং ক্যানসেল। মাসুদ ভাইয়ের আর্জেন্ট কল আসছে আর সে ছুটে বের হয়ে গেছে অফিস থেকে।
তুহিন ঢোঁক গেলে, সত্যি? দেখিস মিথ্যে বললে কিন্তু আজকে রাতে বাসায় গিয়ে ভাতে কাঁকর পাবি!
সেই টেনশনই নাই! নিজের চোখে দেখছি আর নিজের কানে শুনছি।
কী শুনেছিস?
মাসুদ ভাইয়ের আম্মা একটা পাত্রী পেয়েছে। থাকে চট্টগ্রামে। আজকেই দেখতে হবে। কারণ, কালকে পাত্রী ভাগল বা অল দ্য ওয়ে টু চট্টগ্রাম।
তুহিন তুড়ি বাজায়, এই বুড়া দামড়াকে কে বিয়ে করবে? বলেই হকচকিয়ে যায়। মাসুদ ভাই যদি বুড়া দামড়া হয় তবে সে কী? আধ বুড়া নাকি পৌনে বুড়া? খুব বেশি হলে পাঁচ বছরের বড় তার চেয়ে মাসুদ ভাই।
আরাফাত ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে চলে যেতে যেতে বলে, এমনে বইলেন না ভাই, দোয়া করেন। বিয়ে ঠিক হলেই ব্যাটা নিজেই টিম মিটিং ক্যানসেল করবে। বিয়ে হলেই আমাদের সুবিধা। যাই ভাই, আল্লাহ হাফেজ।
তুহিন অন্যমনস্কভাবে ডেস্কে রাখা কাগজের ওপরে কলম দিয়ে অর্থহীন আঁকিবুকি কাটতে কাটতে বলে, আল্লাহ হাফেজ। মনে চলছে অন্য চিন্তা। চল্লিশ বছর কি অনেক বয়স? আদিবার স্কুলে গেলে ক্লাস টেনের মেয়েরাও তাকে ডাকে আঙ্কেল। এত দিন এসব পাত্তাই দেয়নি। কিন্তু এখন ভীষণ অপ্রতিভ লাগছে। উপমার হাতে হাত রাখলে কি রাস্তার সবাই নাক সিটকাবে?
ক্যাফের ভেতরে ঢুকে তুহিনের মনে হলো অন্য রকম একটা পৃথিবীতে ঢুকে পড়েছে সে। ক্লেদযুক্ত আর দায়িত্বভারে নুয়ে পড়া কালচে ঢাকা থেকে সে অনেক অনেক দূরে। মাত্র মিনিট দশেক হাঁটতেই তার জুতার ওপরে সাদা ধুলার আস্তরণ পড়েছে। ক্যাফের ঝাঁ–চকচকে মেঝের ওপরে তার ধুলোমাখা পাদুকা জোড়া বড্ড বেশি বেমানান।
গ্রাম থেকে আসা দরিদ্র আত্মীয় শহরের অতিরিক্ত ধনী লোকের বাসার ঝিলমিল আলোয় উদ্ভাসিত ড্রয়িংরুমের ভারী কাজের দামি সোফার এক কোনায় যেভাবে জড়সড় হয়ে বসে, সেভাবে টেবিলের নিচে পা জোড়া লুকাল তুহিন। তাতেও অবশ্য হারিয়ে যাওয়া সম্ভব হলো না।
ক্যাফেটি আসলে এক বিলাসবহুল হোটেলের অংশ। পুরো দেয়াল রুচিসম্মত পেইন্টিংয়ের ফাঁকে বড় বড় আয়নায় সজ্জিত। আয়নায় একজন মধ্যবয়সী ক্লান্ত পুরুষকে দেখা যাচ্ছে। চোখের নিচে কালচে ভাব, থুতনির পরেও আরেকটা থুতনি আর কাঁচা-পাকা চুল সমুদ্রের ভাটার মতোই ললাট থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
তুহিনের দাদি বলত, সে নাকি রাজকপাল নিয়ে জন্মেছে। প্রশস্ততা যদি ভাগ্যের সমানুপাতিক হয়, তবে তার ভাগ্য এখন অবশ্যই ভালো হওয়ার কথা। উপমা আসার আগে নিজেকে একটু গুছিয়ে নেবে কি না ভাবল একটু। কিন্তু পরমুহূর্তেই সেই চিন্তা বাতিল করে দিল। উপমা পৌনে পাঁচটায় মেসেজ করেছে যে সে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। এখন বাথরুমে গেলে হয়তো বেরোনোর আগেই উপমা চলে আসবে।
শত চেষ্টা সত্ত্বেও পেটের মেদ দূর হয় না। একটু ঢিলা স্ট্রাইপ শার্টের ইলিউশনটা বসে থাকলে বেশ বিশ্বাসযোগ্য হলেও প্রায় ছয় মিটার হাঁটাপথে তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। উপমা একবার হাত ধরে বলেছিল যে শুধু তুহিনের জন্যই তুহিন অনন্য, বাকি সব মিথ্যে। কথাটা মনে হতেই তাচ্ছিল্যের হাসিতে ঠোঁট বেঁকে যায় তার। তরুণ প্রেম আর প্রাপ্তবয়স্কের প্রেমের ফারাক যোজন যোজন মাইল।
দুজন ওয়েটার ওর দিকে তাকিয়ে আছে দেখে কপালে ভাঁজ পড়ে তুহিনের। সাড়ে পাঁচটা বাজতে চলল, এখনো উপমার দেখা নেই। অবশ্য সময়মতো কোথাও যাওয়া উপমার ধাতেই নেই। ভার্সিটি লাইফ থেকেই তুহিন দেখে আসছে।
একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভোরে তুহিন একপাল ছেলেমেয়ের সঙ্গে শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে আছে, উপমার খবর নেই। মোবাইল অফ করে ঘুমাচ্ছে। পয়লা বৈশাখে লাল শাড়ি আর পাঞ্জাবি পরে দুজনের মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেবার কথা, উপমা নিখোঁজ। নয়টার ক্লাসে তুহিনকে উপমার প্রক্সি দিয়ে দিতে হতো। দেড়টার ক্লাসেও হতো। এত ধৈর্য নেই উপমার।
জুন মাসের কড়া রোদে পোড়া মলিন দালানের ভ্যাপসা ক্লাসরুমে ঘটাং ঘটাং শব্দে নাড়া পাখার নিচে উপমার চুল উড়ত না। কোনো এক হিমশীতল ক্যাফেতে আধশোয়া হয়ে ঠান্ডা লেবু চায়ের গ্লাসে আধখোলা চোখে চুমুক দিত সে। নিখুঁতভাবে স্ট্রেট করা চুলের সেটিং একটুও এদিক–সেদিক হতো না। উপমার চুল জীবনানন্দ দাশের কবিতা ছিল না, ছিল আধুনিক ফ্যাশন ম্যাগাজিনের গ্লসি পেপার।
কবিতা তুহিন এমনিতেও পছন্দ করে না। ফ্যাশন ম্যাগাজিনের দূর সাগরের পারের রাজকন্যাদের ওর ভালো লাগত। আর ভালো লাগত উপমার হাসি। আনন্দের হাসি উপমা হাসতে জানে না। তাচ্ছিল্য মেশানো অবজ্ঞার হাসি উপমার লাল কিংবা ম্যাজেন্টা রঙে রাঙানো ঠোঁটের এক পাশে ঝুলে থাকত। উপমার কী যেন বলে, অ্যাটিচিউড ছিল। ভার্সিটির সিনিয়র জুনিয়র সবাই দীর্ঘশ্বাস ফেলত। কেমন করে যে উপমা তুহিনকে ভালোবাসল, খোদায় জানে। কিংবা ভালোবাসার ভান করল। কিছু একটা।
ঘড়ির কাঁটা যত পথ পাড়ি দিচ্ছে, তুহিনের হৃৎস্পন্দন তত দ্রুত হচ্ছে। উসাইন বোল্ট বোধ হয় ফিনিশ লাইনের দুই সেকেন্ড দূরত্বে এ রকমই কিছু অনুভব করে। তুহিন খেলাধুলা বিশেষ করেনি। তবে ক্রিকেটে বাংলাদেশের যখন চার বলে সাত রান দরকার হয় জেতার জন্য, তখন এ রকমই ফিল করে তুহিন। শেষ করার তীব্র ইচ্ছা, কিন্তু অনিশ্চয়তার অজানা ভীতি।
আজকে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তার জীবনটা বদলে যাবে। শেষ মুহূর্তে এসে দ্বিধায় দ্বিখণ্ডিত তুহিনের মনে হয় তার হৃৎপিণ্ড এখন বুকের ছাতি ফেটে বেরিয়ে আসবে। চমৎকার নির্ভরতা আর ধীরস্থির জীবনকে হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে অন্ধকার অনিশ্চয়তাকে বেছে নেয় কে?
তবে এখানেই আসল সমস্যাটা। বড্ড বেশি ধীরস্থির তুহিনের জীবন। এককথায় ম্যাটমেটে আলু আর বেগুনের তরকারি। অযত্নে প্রায়ই তাতে ঠিক পরিমাণে নুন পড়ে না। ক্ষুধা পেটে কোঁত করে খাবার গিলে ফেলা তুহিন যেন ভুলেই গেছে হাসিমুখে অল্প অল্প করে খাবার মুখে দিয়ে তৃপ্তভাবে রসনার স্বাদ নেওয়ার স্মৃতি।
তবুও কোথায় জানি কিন্তু কিন্তু ঠেকে। আলু-বেগুন তুহিন চোখ বন্ধ করে রাঁধতে পারে, নতুন রসনার রেসিপি জানা আছে কি? জোর অ্যাড্রেনালিন রাশ অনুভব করায় তুহিন ঢক ঢক করে পানি খায়। বহু আগে পড়া এক বইয়ের লাইন মনে পড়ে—একজন অসুখী মানুষ সুখের সন্ধান করবেই, এতে দোষের কিছু নেই। তুহিন অন্তত এই মুহূর্তে একজন অসুখী মানুষ।
মাস ছয়েক আগেও তুহিন অন্ততপক্ষে কাগজে–কলমে সুখী মানুষ ছিল। নাবিলা সহধর্মিণী হিসেবে চমৎকার। বিয়ের প্রথম বছরে একটু ঠোকাঠুকি হলেও নাবিলা দ্রুত তাকে বুঝে নিয়েছে। তুহিনও আন্তরিকভাবেই নাবিলার পাশে সব সময় থাকতে চেয়েছে। আদিবা হওয়ার পর আবার একটু সংসারে অশান্তি হয়েছিল, কে বেশি কাজ করে আর কে কম। মেয়ে যত বড় হয়েছে, তত ভুল–বোঝাবুঝি কমেছে।
ক্লাস ওয়ানে পড়া আদিবা সকল মন খারাপের মহৌষধ। বাসায় সারাক্ষণ গায়ের কাছে লেপ্টে থাকে মেয়ে। রাত্তিরে ঘুমানোর আগে তুহিনকে প্রতিদিন বই পড়ে শোনাতে হয়। শুক্রবার সকালে আদিবা তার ছোট ছোট হাতে তুহিনের মাথায় তেল মালিশ করে। মালিশের কিছুই হয় না, চুল ধরে টানাটানি। তা–ও বড্ড আরাম। সকালে আদিবাকে স্কুলে নামিয়ে অফিসে আসা, দুপুরে নাবিলার রুটিন ফোনে অভ্যস্ততার কথা বলা আর সন্ধ্যায় জাম ঠেলে বাসায় ফিরে আরেকটি দিনের প্রস্তুতি নেওয়া।
একটা জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে টুক টুক করে টাকা জমানো। মেয়েকে ভালো স্কুলে দিতে হবে, ঢাকার কোনো এক কোণে ছোট্ট একটা ফ্ল্যাট বুকিং দিতে হবে, আগামী ম্যারেজ ডেতে আদিবাকে নানির বাসায় রেখে পাঁচ দিনের জন্য কোথাও যাওয়া হবে—থাইল্যান্ড নাকি ইন্দোনেশিয়া? সুন্দরবন নাকি কক্সবাজার?
বিয়ের পর নাবিলাকে হানিমুনে নিতে পারেনি মাসে ত্রিশ হাজার টাকা বেতন পাওয়া তখনকার তুহিন। তিন বছর ধরে ভালো রোজগার করছে সে। নাবিলারও প্রমোশন হয়েছে। এখন একটু বিলাসিতা শান্তির নিশ্বাস ফেলেই করা যায়। এমন স্বস্তির কাব্যে ছন্দপতনের মতো উপমার আবির্ভাব।
সকাল থেকে বৃষ্টি থাকায় মেয়েকে আর স্কুলে পাঠায়নি সেদিন নাবিলা। অফিসে নাবিলার জরুরি কাজ থাকায় ছুটি তুহিনই নিয়েছিল। দুপুরে বাপ-বেটি তুহিনের আনাড়ি হাতে করা খিচুড়ি, ডিম আর বেগুন ভাজা খেয়ে সোফায় গড়িয়ে আদিবার প্রিয় কার্টুন দেখছিল। হঠাৎই ফেসবুকের মেসেঞ্জারে মেসেজ রিকোয়েস্ট।
তুহিন খুলে দেখে তাতে একটিমাত্র শব্দ লেখা, ‘আছ?’
তুহিন প্রথমে বুঝতে পারছিল না, কেন তার কোনো অনুভূতি হচ্ছে না। দশ বছর পর হারিয়ে যাওয়া উপমা মেসেজ করেছে, কেন সে এত নির্লিপ্ত? উত্তর না দিয়ে উপমার প্রোফাইল চেক করে সে। প্রোফাইল পিকচার দেখে বুকে রক্ত ছলাৎ করে ওঠে। সেই উপমা। শরীর ভারী হয়েছে, জিনস আর টি–শার্টের পরিবর্তে হলুদ লাল শাড়ি। নিখুঁতভাবে লিপস্টিকে মোড়া ঠোঁটের এক কোণে সেই ঝুলন্ত হাসি। তারপরেও সে উপমা। রাগ আর হতাশায় গা শিরশির করে ওর, কবে আনব্লক করল? ফেসবুক-টুইটার-ইনস্টাগ্রাম তোলপাড় করেও সে কখনো উপমাকে খুঁজে পায়নি।
আর আজ উপমা চাইলেই তুহিনকে খুঁজে পাবে? মোবাইল সরিয়ে রেখে মেয়ের সঙ্গে কার্টুনে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল সে। তবে মিনিট দশেকের বেশি পারেনি। তীব্র কৌতূহলের কাছে পরাজয় স্বীকার করে উপমার প্রোফাইল যতটুকু পাবলিক আছে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখে। উপমার বরকে দেখে হিংসার নীল শিখায় দগ্ধ হয় তুহিন। পৃথিবীর কেউ কেউ সবকিছু পায়। চেহারা, স্বাস্থ্য, টাকা, মেধা আর উপমা—সব! আর তুহিনকে সিগারেট পোড়াতে হয় বছর ধরে। মায়ের চেকআপ করানোর জন্য ডাক্তারের চেম্বারে ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করতে হয়, পুরোনো জিনস রোল করে হাঁটু পর্যন্ত তুলে কাদার মাঝে দাঁড়িয়ে সপ্তাহের বাজার করতে হয়। ইচ্ছে হয় লোকটার গলার টুঁটি চেপে ধরতে। উপমার প্রতি ভালোবাসায় নয়, উপমার বরের প্রতি তীব্র ঈর্ষায় তুহিন উত্তর লেখে, ‘আছি তো। তা তুমি হঠাৎ? মারা যাবে নাকি শিগগিরই?’
অনেকগুলো হাসতে হাসতে কান্নার ইমোজি আসে স্ক্রিনে। মারা তো যেতেই পারি, তবে কবে যাব জানি না। এ রকম বিশ্রী প্রশ্ন করার কারণ কী?
এত দিন পর হঠাৎ। ভাবলাম হয়তো মারা–টারা যাচ্ছ, পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার আগে সরি বলতে এসেছ।
সরি? সরি বলব কেন? কী করেছি আমি?
ঘসেটি বেগমের মতো পিঠে ছুরি ঢুকিয়ে সেটা আমার বুক ফুঁড়ে বের করেছ। তারপরে হাতের রক্ত মুছে ফেলেছ অন্য কারও টাকায়।
বেশ কিছুক্ষণ স্ক্রিনে তিনটি বিন্দুর দেখা পাওয়া যায় না। প্রায় বিশ সেকেন্ড পরে উত্তর আসে, ফালতু ছ্যাঁচড়া কাব্য করার অভ্যাস তোমার এখনো যায়নি দেখছি। গ্রো আপ তুহিন। ইফ ইউ ক্যান, দেন নক মি অ্যাগেইন। ইফ নট, ডোন্ট বদার।
দীর্ঘ সাত বছর পরে তুহিন সিগারেট ধরিয়েছিল। মেয়ের মুখ দেখে সিগারেটের প্যাকেট জানালা গলিয়ে যে গলির রাস্তায় ফেলেছিল, সেই গলির মোড়ের দোকানেই আবার তুহিন ধোঁয়া ছড়ায়। রাগে গা চিড়বিড় করছিল ওর, গ্রো আপ? তবে রাত যত বাড়ে, তত রাগ ঘনীভূত বাষ্প থেকে জল হয়। শয়নকক্ষে আদিবাকে ধরে নাবিলা নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ নাবিলাকে জাপটে ধরে উন্মত্ত হতে ইচ্ছে করে। সম্পূর্ণ রক্ত-মাংসের একজন নারী তার অধিকারে। উপমাকে গিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, দ্যাখ তুই, তোকে ছাড়াও আমাকে ভালোবাসার মানুষ আছে। তুই না বুঝলেও আমার মূল্য অন্য কেউ ঠিকই বুঝেছে। নাবিলাকে ডাকতে গেলে নাবিলা বিরক্ত হয়ে তুহিনকে সরিয়ে দেয়। রাত দুইটায় তুহিন মেসেজ পাঠায়, অনেক আগেই বড় হয়েছি উপমা। কেন এত দিন পরে নক করেছ সেটা বলো।
অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে উত্তর আসে ওপাশ থেকে, মাঝে মাঝে ঘুমের বড্ড সমস্যা হয়। তোমার একঘেয়ে গল্পগুলো মিস করি। তোমার ভারসাচির পারফিউমের গন্ধ মিস করি। এখনো সেটাই ব্যবহার করো কি?
বুকের ভেতর শিরশিরে এক অনুভূতি একটু একটু করে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। নিজেকে প্রাণপণে শাসন করতে গিয়ে হাল ছেড়ে দেওয়া তুহিন কাঁপতে কাঁপতে উত্তর লেখে। অফিসে, বাসায়, মেয়ের স্কুলের সামনে অথবা কাঁচাবাজারের মাছের উৎকট গন্ধ—সর্বত্রই কেবল উপমা ভাসে।
সরি, একটু দেরি হয়ে গেল। তুমি কতক্ষণ হলো এসেছ? যাক, বুদ্ধি করে কফিটা অর্ডার করেছ, থ্যাংকস।
ভাবনায় হারানো তুহিন চমকে তাকায়। আজকে উপমা পড়েছে সবুজ জাম্প স্যুটের ওপরে কালো ব্লেজার। এলোমেলো করে বাঁধা চুলের ফাঁকে দেখা যাচ্ছে বড় গোলাকৃতির গোল্ডেন কানের দুল। এগুলোকে কী বলে তুহিন মনে করতে পারে না। আগে জানত। উপমা তার জীবন থেকে চলে যাওয়ার পর থেকে এসব অর্থহীন তথ্য মনে রাখার ব্যস্ততাও ফুরিয়েছে।
হেসে উত্তর দেয়, ঠিক পাঁচটায়। তোমাকে দারুণ দেখাচ্ছে। যাকে বলে গড ড্যাম সেক্সি।
হাত দিয়ে কপালে চুল সরিয়ে উপমা একটি ভুরু উঁচু করে, থ্যাংকস। কিন্তু কতটা সেক্সি?
তুহিন থতমত খায়, কতটা মানে? এটা কি মাপার কোনো ব্যবস্থা আছে নাকি?
ওয়েল, ব্যবস্থা করলেই আছে। আমাকে কি শুধু চোখ দিয়ে দেখার মতো সেক্সি লাগছে, নাকি এখনই এই হোটেলের একটা রুম বুক করার মতো সেক্সি লাগছে?
আবারও বুকের মাঝে সেই তিরতিরে অনুভূতি। তুহিনের মুখে কথা সরে না। আহ্, কী ভীষণ উদ্ধত আর উচ্ছল উপমা। সেই আগের মতোই। একবার বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে মাঝ রাস্তায় শুয়ে পড়েছিল। আর একবার রাত এগারোটায় তুহিনের হোস্টেলের সামনে এসে বলেছিল, চলো পালাই! মধ্যবিত্তের আজন্ম সংস্কারে জবুথবু তুহিন পালাতে পারেনি। কাঁদো কাঁদো মুখে বুঝিয়ে–শুঝিয়ে উপমাকে বাসায় পাঠিয়েছিল সে। তার পরের মাসেই তুহিনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তাকে না জানিয়েই সেন্ট মার্টিন পালিয়ে গিয়েছিল উপমা বন্ধুদের সঙ্গে। মনে হতেই বুকে আবার ঈর্ষার শেল বেঁধে তুহিনের। তার জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ হচ্ছে, সেদিন উপমার হাত না ধরা।
তুড়ি বাজায় ওর মুখের সামনে উপমা, এই যে হ্যালো, কী হলো? বোবা হয়ে গেলে নাকি? তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় উপমা, তোমাকে এই প্রশ্ন করাই ভুল হয়েছে। এত মেদামার্কা তুমি!
তুহিনের কপালের শিরা বিস্ফোরিত হয় যেন। কীভাবে আঘাত করলে তুহিন সবচেয়ে বেশি ছোট হবে নিজের কাছে, তার পুরো চ্যাপটার যেন উপমার মুখস্থ।
উপমা যেন বুঝতে পেরেই কাছে ঘন হয়ে বসে হাতে হাত রাখে, এই রাগ করছ? আহা, এমনি বললাম তো! আমি কি আর জানি না তুমি কত রোমান্টিক?
উপমার পারফিউমের গন্ধ তুহিন বুক ভরে নেয়। তিন দিন আগেও ঠিক এই সুগন্ধ নিয়েই উপমা কাছে এসেছিল, কিংবা বলা ভালো আগুনের শিখা নিয়ে মোমের কাছে এসেছিল। তাতে ভীত তুহিন একটু একটু করে হারিয়ে গেছে। ক্রোধ, ভীতি, আবেগ, রোমাঞ্চ আর কামের কী তীব্র বহিঃপ্রকাশ। মনে হতেই তুহিনের মাথা ঝিমঝিম করে। সব হারানোর যত ভয়, তত বেশি উদ্দামতা—এটাই নিরামিষ তুহিন বরাবর এড়িয়ে গেছে। সারা জীবন সেফ সাইডে খেলা তুহিন কখনো অনুভব করেনি জুয়ার টেবিলে সর্বস্ব বাজি ধরার নেশা। মাদকের মতো এই ভয়ংকর নেশার স্বাদ যে এক জুয়াড়ি একবার পেয়েছে, সে বারে বারে ফিরে আসে আলো-আঁধারির রুলেট টেবিলে।
এতই যখন জানো, তবে তুমি আমার হও। তোমাকে আমার চাই।
টেবিলের নিচে তুহিনের ঊরুতে হাত রাখে উপমা, সারপ্রাইজ ডার্লিং। আমি ওপরে একটা রুম বুক করে রেখেছি। আমিও তো শুধু তোমাকেই চাই।
তুহিন আঁকড়ে ধরে উপমার হাত। ব্যাকুল গলায় বলে, আমি তোমাকে আমার করে চাই উপমা। আমি আজকে সবকিছু ছেড়ে এসেছি শুধু তোমার জন্য।
উপমার অন্য হাতে ধরা কফির কাপ থেকে চলকে কিছু কফি টেবিলে পড়ে। উপমা হতভম্ব গলায় বলে, সবকিছু ছেড়ে এসেছ মানে? প্লিজ ইলাবোরেট তুহিন।
বুক ভরে দম নেয় তুহিন, আমি নাবিলাকে সব জানিয়ে দিয়েছি।
হোয়াট? চেঁচিয়ে ওঠে উপমা, প্লিজ টেল মি ইউ আর জোকিং।
তুহিন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, আমি জোক কেন করব? তুমি কি আমাকে চাও না? এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে আর কত দিন? তোমার কি ইচ্ছে হয় না ভিড়ের মধ্যে আমার হাত ধরে হাঁটতে?
না, হয় না।
তুহিন অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকায়, হয় না? তাহলে তুমি আমার সঙ্গে এত দিন কী করছ উপমা? ডোন্ট ইউ লাভ মি?
উপমা দুই হাতে মাথা চেপে ধরে। অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করে বলে, ওকে, লেটস হ্যাভ আ প্রোপার ডিসকাশন তুহিন। তুমি আমাকে ভালোবাসো?
হ্যাঁ, বাসি। আর ভেবেছি তুমিও আমাকে ভালোবাসো।
ঠিক আছে। তাহলে নাবিলা? নাবিলা কি তোমাকে ভালোবাসে?
দ্বিধাযুক্ত কণ্ঠে বলে তুহিন, মনে তো হয়। অন্তত এত দিন সংসার তো করছে।
তোমার কি মনে হয় না তুমি নাবিলার সঙ্গে অন্যায় করবে যদি তুমি এখন ওকে ছেড়ে চলে যাও? ওর কী দোষ?
তুহিন হতাশায় চেঁচিয়ে ওঠে, কিন্তু আরেকজনকে ভালোবেসে বউকে মিথ্যা বলা জঘন্য অপরাধ। ওর কোনো দোষ নেই, কিন্তু আমাদের কী করার আছে? প্রেম কোনো সময় আর নিয়ম দেখে না উপমা। আর আমি নাবিলার সঙ্গে হ্যাপি না।
উপমা বিদ্রূপের হাসি দেয়, বাহ্, চমৎকার বাংলা সিনেমার ডায়ালগ দিলে দেখি! এনিওয়ে, কেন তুমি হ্যাপি না?
কারণ, ও বোরিং। রোজকার একই ঘ্যান ঘ্যান। ভাত খেয়েছ? আদিবাকে স্কুল থেকে নিয়ো। আসার সময় টুথপেস্ট নিয়ে এসো। সন্ধ্যায় গিফট কিনতে যেতে হবে, কাজিনের বিয়ে। তুমি জানো কত দিন আমরা এক বিছানায় ঘুমাই না? ওর কোনো ফ্যাশন সেন্স নেই। হঠাৎ রুক্ষ স্বরে তুহিন বলে, কিন্তু মোদ্দা কথা হচ্ছে, আমি তোমাকে সব সময় ভালোবেসেছি। তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছ বলেই নাবিলাকে আমি বিয়ে করেছি।
আর আদিবা? তোমার মেয়ে বুঝবে এই সব? তোমার কি মনে হয় নাবিলা আদিবাকে যতটা ভালোবাসে আমি ততটা বাসব?
মেয়ের কথা উঠতে তুহিনের মুখে বেদনার ছাপ পড়ে। ও একসময় বুঝবে। আর তা ছাড়া আমি তো ওর জীবনে সব সময় থাকব।
না, সে বুঝবে না তুহিন। সে কোনো দিনও বুঝতে চাইবে না কেন তার বাবা তার মাকে ছেড়ে আরেকজনের সঙ্গে চলে গেল। সে কোনো দিনও আমাকে মেনে নিতে পারবে না।
হরহামেশা ডিভোর্স হচ্ছে না? সেসব বাচ্চা কীভাবে মেনে নেয়?
তাদের অনেকেরই ভয়ংকর মানসিক কষ্ট হয়। তুমি পারবে তোমার মেয়েকে এই কষ্ট দিতে?
তুহিন ফিসফিস করে বলে, আর আমি কীভাবে বাঁচব উপমা? আমি কীভাবে একটা নারীর সঙ্গে সারা জীবন থাকব, যাকে আমি ভালোবাসি না?
ওয়েল, ছয় মাস আগে তো ভালোবেসেছিলে!
তুহিন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায়, মানে?
তোমার সঙ্গে যখন প্রথম কথা শুরু হয়, আমার মনে আছে তুমি বলেছিলে নেক্সট ম্যারেজ ডেতে দিল্লি না হনুলুলু কোথায় যেন হানিমুনে যাবে। সেটা কীভাবে হচ্ছিল?
কারণ, তখন তুমি ছিলে না!
আমি এখনো নেই তুহিন। বোঝার চেষ্টা করো, আমি কোনো দিনও অমিয়কে ছেড়ে তোমার কাছে আসব না। হি ইজ আ পারফেক্ট হাজব্যান্ড। প্লাস, আমার চার বছরের একটা ছেলে আছে। আমার মাথা খারাপ হয়নি যে আমি আমার ছেলেকে ছেড়ে তোমার সঙ্গে চলে যাব। আমার ছেলের তার বাবা আর মা, দুজনকেই লাগবে।
তুহিন হতভম্ব গলায় বলে, তোমার ছেলে আছে? কখনো বলোনি?
এটা বলার মতো কিছু না, তাই বলিনি।
প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে উপমার হাত চেপে ধরে তুহিন, উপমা ককিয়ে উঠতে সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দেয় সে। সরি, আ’ম রিয়েলি সরি উপমা। তোমাকে ব্যথা দিতে চাইনি। কিন্তু তাহলে এত দিনের সম্পর্ক, কথা বলা—সেসব কি ছিল? এতই যখন তোমার হাসবেন্ড আর ছেলের প্রতি ভালোবাসা, আমাকে নক করেছিলে কেন?
উপমা কাঁধ ঝাঁকায়, আমার জাস্ট মিডলাইফ ক্রাইসিসের মতো কিছু একটা হচ্ছিল। অনেক দিন ধরে মনে হচ্ছিল জীবনে কোনো অ্যাডভেঞ্চার নেই, ফান নেই। অমিয় আমাকে আগের মতো ভালোবাসে না। সারা দিন ছেলের পিছে ছোটাছুটি, নিজেকেই হারিয়ে ফেলছিলাম। আমি আমার জীবনে একটা স্পার্ক চাচ্ছিলাম তুহিন। আর তোমাকে আমি সত্যিই ভালোবাসতাম। তোমাকে বিয়ে করিনি; কারণ, তোমার আর আমার চিন্তায় অনেক ফারাক। এ রকম মধ্যবিত্ত স্টাইলে জীবন কাটানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সেটা একটা ভালো সিদ্ধান্ত ছিল, দুজনের জন্যই। কিন্তু এর জন্য আমি মোটেই আমার সংসার ছাড়ব না।
দাঁতে দাঁত ঘষে তুহিন, আর যদি তোমার জামাই টের পেয়ে যায়?
চুল ঝাঁকিয়ে কপালের সামনে আনে উপমা, তাহলে আর কী করা। যা কপালে আছে তাই হবে। যত যা–ই হোক, অপরাধ তো আমি জেনে বুঝেই করেছি। শাস্তির ভয় পেলে চলবে কেন?
তুহিনের দিশেহারা দৃষ্টি দেখে উপমা গলা নরম করে, তুমি নাবিলাকে ভালোবাসো তুহিন। আমি ছিলাম তোমার ক্ষণিকের অ্যাডভেঞ্চার। ভেবে দেখো, তোমার খুঁত দেখে আমি তোমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। আর সেই খুঁতগুলোকেই নাবিলা আপন করে নিয়েছে কতগুলো বছর। সংসারের অভ্যস্ততার মাঝে রোমাঞ্চ প্রায়ই চাপা পড়ে যায়। সেটা অন্য আরেক ধরনের স্বস্তি। আই অ্যাম রিয়েলি সরি। আমি কাজটা ঠিক করিনি তোমার সঙ্গে। যা–ই হোক, শুনে নাবিলা কী বলল?
তুহিন ভরসা হারানো গলায় বলে, জানি না।
উপমা অবাক হয়, জানো না? কেন?
একটা চিঠি লিখে এসেছি, মুখে বলার সাহস হয়নি। নাবিলা অফিস থেকে বাসায় ফিরলে চিঠি পাবে, বেড সাইড টেবিলে রেখেছি।
উপমা মুখ শক্ত করে বলে, নাবিলা কখন বাসায় যাবে?
আজকে আদিবাকে ও আমার শাশুড়ির বাসা থেকে তুলবে। রাত আটটা নাগাদ?
তাহলে আমার পরামর্শ হচ্ছে, তুহিন, তুমি দৌড়াও।
তুহিন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায়, কী?
উপমা তার হাত ধরে শক্ত ঝাঁকুনি দেয়, এখন বাজে পৌনে সাতটা। দৌড়াও তুমি তুহিন। অন্যায় তুমি করেছ, চাইলে তুমি সেটা নাবিলাকে বলবে। কিন্তু এভাবে নয়। সত্যিকারের মানুষের মতো সামনে বসে অপরাধ স্বীকার করবে। তুমি এখন দৌড়াও তুহিন, নাবিলা বাসায় যাওয়ার আগে তোমাকে বাসায় পৌঁছাতেই হবে।
ঢাকার জনবহুল রাস্তায় একজন মানুষ পাগলের মতো সবাইকে ধাক্কা দিয়ে ছুটে যাচ্ছে ফুটপাত দিয়ে। বাসস্টপে দাঁড়ানো পঁয়ষট্টি বছর বয়সী ভদ্রলোক করিম সাহেব হতাশায় মাথা নাড়েন। যেকোনো সময় ছেলেটি ফুটপাতের ওপরে চলা বাইকের নিচে চাপা পড়বে। তিনি ছেলেটিকে আটকানোর জন্য প্রস্তুতি নেন। একটা সিএনজিতে ছেলেটিকে তুলে দেবেন। আহা রে, কে জানে তার এত কিসের তাড়া।
–––