করোনাভাইরাসের আতঙ্ক: চীন থেকে দক্ষিণ কোরিয়া
গোটা বিশ্বে এখন আতঙ্কের একটাই নাম করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসের ক্ষমতা কেমন আর মানুষ কত সহজেই দ্রুত মারা যেতে পারে, সেটা দেখিয়ে দিয়েছে এই করোনা। দিন দিন ক্রমেই ছড়িয়ে পড়তে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস।
করোনা একটি ভাইরাসই নয়, মনে হচ্ছে বিশ্বের কাছে মৃত্যুকূপের একটি চ্যালেঞ্জ। অনেক দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও এখনো কোনা টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যেখানে এক দিনেই মরতে হলো ৯৭ জনকে।
গত বছরের ডিসেম্বরে শনাক্ত হওয়ার পর এরই মধ্যে চীনের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজারেরও বেশি। মৃত্যুর সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়েছে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।
এমনই এক পরিস্থিতিতে ৮ ফেব্রুয়ারি আমাকে দেশ থেকে যেতে হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। এদিকে চলছে করোনাভাইরাসের ভয়ংকর আতঙ্ক।
আমার ট্রানজিট ছিল চীনের গুয়াংজু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় গুয়াংজু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে দেখি এটা যেন ভয়ংকর অভিশপ্ত জনমানবশূন্য ভুতুড়ে জায়গা। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক যাত্রীর সমাগম হয় এই বিমানবন্দরে।
বিমানবন্দরের এমন দৃশ্য দেখে বিমূঢ় হয়ে গেলাম। কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া তেমন কোনো মানুষকে দেখলাম না। ইমিগ্রেশন কাউন্টারে একজনই কর্মকর্তা ছিলেন।
সকাল ১০টায় চীন থেকে CZ ৩০৬১ ফ্লাইট ছাড়ল দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশে। সেই বিমানে মাত্র ১৬ জন আরোহী ছিলেন। তার মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশি, সাতজন কোরীয়। আর বাকি চারজন চীনের। এর পরের দিনই বাংলাদেশ থেকে চীনের গুয়াংজু শহরের সব ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
কোরিয়ার সময় বেলা ২টায় দেশটির ইনচন বিমানবন্দরে পৌঁছালাম। সেখানে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশেষ করে চীন থেকে আসা ফ্লাইটের ওপর। বিমান থেকে নামার পরপরই আমাদের নেওয়া হলো মেডিকেল টিমের কাছে। সেখানে সবার শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখা হয়।
আমাদের আলাদাভাবে চেকআপের পর বিমানবন্দরের কর্তব্যরত কয়েকজন কর্মকর্তার অধীনে বিশেষ ইমিগ্রেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। বিশেষত চীনের ফ্লাইট থেকে নামা সব যাত্রীকে। এসব যাত্রীর জন্য চারদিকে বেষ্টনী স্থাপন করে আলাদা ইমিগ্রেশন কাউন্টার খোলা হয়েছে ইনচন বিমানবন্দরে।
সেই ইমিগ্রেশন কাউন্টারের সামনে আছে আরও একটি মেডিকেল টিম। কোনো যাত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।
কোনো ব্যক্তি করোনাভাইরাস আক্রান্ত, এমন সন্দেহ হলে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ১৪ দিনের জন্য পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এই মেডিকেল টিমের চারপাশে বসানো হয়েছে করোনাভাইরাস শনাক্ত করার জন্য স্পেশাল ক্যামেরা।
দক্ষিণ কোরিয়ায় এ পর্যন্ত ২৫ জন করোনাভাইরাস সংক্রমণের রোগী শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২৫তম রোগী হলেন ৭৩ বছর বয়সী কোরীয় নারী। তিনি তাঁর পুত্র ও পুত্রবধূর সঙ্গে চীনের গুয়াংডং প্রদেশে ঘুরতে গিয়েছিলেন। দর্শনার্থীর পরিবার গত বছরের নভেম্বর থেকে এই বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত গুয়াংডং সফর করেছে বলে মেডিকেল অ্যাসবার্ব সূত্রে প্রকাশ।
দক্ষিণ কোরিয়ার কোনো বিদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসা দায়িত্ব নেবে দেশটির সরকার। এ ছাড়া, দেশটিতে অবৈধভাবে অবস্থানরত কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে তাঁকে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এর জন্য তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে না বলে একটি নোটিশ জারি করেছে সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাস।
এদিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে সবাইকে নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সব সময় সার্জিক্যাল মুখোশ পরা ও হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখারও পরামর্শ দিয়েছে তারা।