ভালোবাসার রকমফের

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

‘তোমার কাছে/ সঙ্গে আমার একটি না হতে পারা সংসার রয়েছে।’ এত দুর্দান্ত লাইন যে কার মাথায় আসে?

ভালোবাসা?...কাউকে প্রথম দেখেই প্রেম হয়, যাকে কোনো দিনও বলা হয় না ভালোবাসি!

কারও কারও গুণমুগ্ধ হয়েই আমরা জীবন কাটাই। সে জানেও না।

কারও সব গুণ থাকা সত্ত্বেও পরিবার, পরিস্থিতির চাপে ছেড়ে আসি।

কারও প্রতিটা গুণ থাকা সত্ত্বেও শুধু পানসে, বোরিং বা চালাক বলে ছেড়ে আসি।

আবার কারও কোনো গুণ না থাকলেও শুধু শুধুই তার প্রেমে হাবুডুবু খাই।

কারও শুধু মিষ্টি কথাতেই আমরা গলে যাই (ফ্লার্টিং)।

কখন কার কাকে ভালো লাগে বলা মুশকিল!

সেটা প্রথম অধ্যায়।

দ্বিতীয় অধ্যায় পছন্দের মানুষের সঙ্গে সংসার। অপছন্দের মানুষের সঙ্গে সংসার। অপরিচিত মানুষের সঙ্গে সংসার।

তৃতীয় অধ্যায় মানুষগুলোর সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করা। অ্যাটলিস্ট করার চেষ্টা করা। সেখানে গিয়েই সবাই নতুন করে খাবি খায়।

সারা জীবনের পরিচয়, তুমুল ভালোবাসা, কোনো কাজে লাগে না। যখন আবিষ্কার করেন, আপনারা দুজন একসঙ্গে এক ছাদের নিচে থাকার মতো বোকামি আর হয় না। কোনো কিছুতেই মেলে না, অ্যাডজাস্ট হয় না। কেউ কাউকে একচুল ছাড় দিতে রাজি নন। এ নতুন আবিষ্কারে ভালোবাসার মোহ কেটে যায়। বাস্তবতায় আসলে, ছাড়াছাড়ি করে নিজেদের শান্তি বজায় রাখাটাই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত মনে হয়।

জীবনটা আসলে গিভ অ্যান্ড টেক। সেখানে ছন্দপতন হওয়ার মতো বিড়ম্বনা আর হয় না। প্রতিনিয়ত অ্যাডজাস্ট করা, করার মেন্টালিটি থাকা যে কী ভীষণ দরকার, তা এ পর্যায়ে এসে বুঝতে ভুল করা বা মানতে না চাওয়ার খেসারত হয় অনেক ভালোবাসায়।

অনেকে চেষ্টা করেন আজীবন সুখী হতে। পার্টনারকে সুখী করতে। অনেকে সফল, অনেকেই নন।

অনেকেই সুখী হওয়ার ভান করেন। নিজেকে প্রতিনিয়ত ঠকিয়ে ভাবেন, বৃহত্তর স্বার্থে নিজের এ আত্মবলিদান, কোনো ব্যাপার নয়!

অনেকেই কালশিটে আর অন্যায় মেনে পড়ে থাকেন যাওয়ার জায়গা নেই বলে।

অনেকে সন্তান/বাবা-মা, পারিপার্শ্বিক শান্তি বজায় রাখতে দাঁতে দাঁত চেপে অশান্তির জীবন মেনে নেন। ভাবেন এটাও ভালোবাসা।

প্রতীকী ছবি। ছবি: আবদুস সালাম
প্রতীকী ছবি। ছবি: আবদুস সালাম

অনেকেই ভাবেন, তাঁকে চেঞ্জ করে সুখী হবেন। যেন এটা আপনার দায়িত্ব। কারও বিগড়ে যাওয়া অ্যাডাল্ট সন্তানকে মানুষ করা। অনেকেই আবিষ্ট বা প্রভাবিত হয়ে থাকেন এই মন্ত্রে। জীবনের সবটুকু নিংড়ে দিয়ে নিজেকে ছিবড়ে করে ভাবেন সুখী। আর আবিষ্কার করেন চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে। কিন্তু আজও তাঁর মনে ঠাঁই নেই আপনার।

আসলে আমরা কেউ সুখী নই। তাই অন্য কাউকে সুখী হতে দিতে চাই না। ব্যাপারটা যে সব সময় জ্ঞানত হয় তা নয়। বেশির ভাগই অবচেতনে হয়। আমরা চাই আমাদের সন্তানেরা সুখী হোক। ভালোবাসার মানুষ ভালো থাকুক। কিন্তু আমরাই ঠিক করি সে কার সঙ্গে সুখী হবে।

যদিও জানি তাদের পছন্দ অন্য কেউ। ভালোবাসা অন্য কেউ। যারা জেনুইনলি তাদের সুখেই রাখবে (কিছু খেলোয়াড় বাদে, যারা শুধু বায়োডাটা ভরতে চায়, কার কার সঙ্গে প্রেম হলো সেসব নাম দিয়ে)।

তাদের ভালোবাসাকে ছেড়ে, মানসিক কষ্ট নিয়ে, আমাদের পছন্দের মানুষদের হাসি মুখে মেনে নিয়ে, তাদের সঙ্গে সুখী হতে বলি আমরা বা বাধ্য করি। সংসারের প্রথম কদম নিজের বিক্ষত মনের সঙ্গে আপস করে মানসিক টর্চারে শুরু হয়। নতুন মানুষকে চিনতে, বুঝতে সময় লাগে। নিজের ক্ষত সারতে সময় লাগে। কিন্তু দায়িত্ব আর শ্বশুরবাড়ির মানুষের চাহিদার মুখোমুখি হতে সময় লাগে না। আর সেটাই বাস্তবতা। আর এটি চলবে তার জীবনের বিশাল একটি অংশজুড়ে।

ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে সংসার করলে যে এসব ফেইস করতে হবে না, তা নয়। অ্যাটলিস্ট সাংসারিক সুখ-দুঃখ ভাগ করাটা সহজ হয়।

জীবন কাকে কখন কোন মোড়ে ফেলে যাবে, কে জানে? অ্যাটলিস্ট সবাই ভালো থাকুক। নিজের মতো বাঁচুক, নিজের মতো ভালোবাসুক।