যুক্তরাজ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন

যুক্তরাজ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম। দেশটির বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার উপস্থিতিতে গতকাল বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) এই কার্যক্রম শুরু হয়।

দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীমের বিশেষ উদ্যোগে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যেই প্রথম জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হলো।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা ও হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বক্তব্য ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিরা এখন ঘরে বসেই জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। প্রাপ্ত আবেদনের তথ্য যাচাই করার পর আবেদনকারীর হাতের ছাপ ও আইরিশ গ্রহণের জন্য হাইকমিশনে একটি হেল্প ডেস্ক খোলা হবে। এই হেল্প ডেস্ক থেকে সব তথ্য নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে দেওয়ার পর জাতীয় পরিচয়পত্র সংশ্লিষ্ট দেশের হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আবেদনকারীকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। তবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন যাঁরা যত তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করবেন, তাঁরা তত তাড়াতাড়ি জাতীয় পরিচয়পত্র পাবেন।

হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই মুজিব শতবর্ষে যুক্তরাজ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন শুরু হলো। এটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপনের শুরুতে বাংলাদেশি-ব্রিটিশদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর একটি বিশেষ উপহার।

হাইকমিশনার বলেন, এ বছর বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনে ২৩ মার্চ থেকে ‘মুজিব শতবর্ষ বিশেষ কনস্যুলার সেবা সপ্তাহ’ পালন করবে। তখন নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া সাপেক্ষে লন্ডনে প্রথম পর্যায়ে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে।

হাইকমিশনার আরও বলেন, যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন গত বছর প্রধান নির্বাচন কমিশনকে একটি চিঠি লেখে। এরপর হাইকমিশনেরই অনুরোধে গত জুলাই মাসে নির্বাচন কমিশনের একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাজ্যে আসে। তারা লন্ডন, বার্মিংহাম ও ম্যানচেস্টারে বাংলাদেশি-ব্রিটিশ কমিউনিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং যুক্তরাজ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের জন্য একটি পাইলট প্রকল্প চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় লন্ডন মিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হলো।

তিনি বলেন, গত বছর আমরা জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণের প্রক্রিয়া যুক্তরাজ্যে শুরু করার ব্যাপারে যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলাম আজ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপনের শুরুতে সে অঙ্গীকার পূরণ করে লন্ডন মিশন জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনে অগ্রণী ভূমিকা নিল। এ দিনটি যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন হয়ে থাকবে। এ জন্য আমি নির্বাচন কমিশন ও আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকার নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে আলোচনায় অংশ নেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী এবং নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর।

অনুষ্ঠানে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন প্রকল্পের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার সাইদুল ইসলাম জাতীয় পরিচয়পত্রের বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের জন্য আবেদনকারীর বৈধ পাসপোর্টের ফটোকপি, বিদেশি পাসপোর্টধারী হলে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের ফটোকপি বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে শনাক্তকারী একজন প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের পাসপোর্টের কপি, বাংলাদেশে বসবাসকারী রক্ত-সম্পর্কের কোনো আত্মীয়ের নাম, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসহ অঙ্গীকারনামা, বাংলাদেশে কোথাও ভোটার হননি মর্মে লিখিত অঙ্গীকারনামা ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের প্রত্যয়নপত্র। বিজ্ঞপ্তি