মরুর বুকে মনোরম এক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

কেএইউএসটি ক্যাম্পাসে লেখক
কেএইউএসটি ক্যাম্পাসে লেখক

সৌদি আরবের কিং আবদুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষেপে কেএইউএসটি) সর্বাধুনিক গবেষণামূলক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সম্ভবত মধ্যপ্রাচ্যে এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এটাই প্রথম।

দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে বন্দর নগরী জেদ্দা থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে থুওয়েল নামক স্থানে অত্যন্ত আধুনিক কায়দায় ও মনোরম পরিবেশে সাজানো কেএইউএসটি ক্যাম্পাস। এর উদ্বোধন ও কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৯ সালে।

বিশ্বের সবচেয়ে রক্ষণশীল মুসলিম দেশ সৌদি আরবে এটাই প্রথম মিক্সড জেন্ডার ইউনিভার্সিটি। যেখানে কট্টরপন্থী ইসলামি চিন্তাবিদদের ঘোর বিরোধিতা সত্ত্বেও নারী-পুরুষ একসঙ্গে শিক্ষা অর্জন করার সুযোগ পেয়েছে।

লোহিত সাগরের উপকূলে জায়গাটি ১৫ বছর আগেও ছিল ঊষর মরুভূমি। সমুদ্রে মাছ শিকারের জন্য ছিল উপযুক্ত জায়গা। এখানে ১৬ দশমিক ৪ বর্গকিলোমিটার স্থলভাগ ও ১৯ দশমিক ৬ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রের জলসীমা নিয়ে মূল ক্যাম্পাসের সঙ্গে মনোরম বিচ সংযুক্ত করে সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে উঠেছে।

বর্তমানে বিশ্বের ৬০ দেশের শিক্ষার্থী এখানে লেখাপড়া করছেন। অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি ও বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে মূলত গবেষণা ও স্নাতকোত্তর পাঠদান হয়। অফিশিয়াল ভাষা ইংরেজি।

গত ১০ বছরে ফলাফল অত্যন্ত ভালো। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ইতিমধ্যে বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে।

সর্বাধিক দ্রুততম গবেষণা ও উদ্ধৃতি রেকর্ডকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম ও উদীয়মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ২০১৬ সালে ১৯তম স্থান অর্জন করেছে।

বিগত ৫০ বছরে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের সেরা ১৭৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে র‌্যাঙ্কিংয়ে ষষ্ঠ এবং মধ্যপ্রাচ্যে তথা এশিয়া ও আফ্রিকার মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৪ জন্য বিজ্ঞানী আন্তর্জাতিক গবেষকের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। যা নিঃসন্দেহে স্বল্পসময়ে বৃহত্তর সাফল্য হিসেবে বিবেচ্য।

বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে প্রতিষ্ঠিত, সেই এলাকা পুণ্যভূমি মক্কা প্রদেশের অন্তর্গত। সেই স্থানটির নাম থুওয়েল। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে হাইওয়ে-৬০। হাইওয়ে-৬০ হচ্ছে দেশটির একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, যা আল-কাছিম, মদিনা, ইয়ানবু ও রাবিগের সঙ্গে সংযুক্ত।

ক্যাম্পাসের বাইরে বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে লোহিত সাগরের কোল ঘেঁষে দেশটির নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছে আরেকটি বিচ। থুওয়েল বিচ, যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। থুওয়েল বিচ এখনো নির্মাণাধীন।

বিচের একাংশে রয়েছে বেশ পরিপাটি ঝকঝকে–তকতকে ও নারকেলগাছের মতো দেখতে বেশ কিছু উঁচু পামগাছের সমন্বয়ে বিশাল এলাকাজুড়ে মার্বেল পাথরের পাটাতন করা পার্ক।

সমুদ্রের পানিতে গোসল করা, মাছ ধরা, নৌকা ও স্পিডবোটে চড়ে আনন্দ উপভোগ করার জন্য জেটিতে রয়েছে বেশ কিছু ছোট–বড় বোট। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এখানে বিনোদনপিপাসু লোকজনের সমাগম ঘটে। বেশির ভাগই আসেন পরিবারসহ।

বিচে শিশুরা মনের আনন্দে খেলায় মেতে ওঠে। কিশোরেরা দুরন্তপনায় ব্যস্ত থাকে। যুবকেরা সাঁতার কাটেন আর নারীরা কালো বোরকাসমেত হাঁটুজলে নেমে জলকেলি খেলেন।

বিচের বাকি অংশ নির্মাণাধীন। চলাচলের জন্য রয়েছে ধূসরধুলার মাঝে ইটের সলিং।

২০৩০ সৌদি ভিশনের অংশ হিসেবে নির্মিত অত্যন্ত বিলাসবহুল ও দৃষ্টিনন্দন মূল বিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে। সেখানে যেতে হলে অনলাইনে অনুমতি নিতে হয়। গাইডসহ সময় পাওয়া যায় দুই ঘণ্টা।

কেএইউএসটি ক্যাম্পাসে লেখক
কেএইউএসটি ক্যাম্পাসে লেখক

বাইরে থেকে বিচের কিছু অংশ দেখা যায়। বিশেষ করে সমুদ্রের নীল জলের মাঝে ৬০ মিটার উঁচু একটা টাওয়ার রয়েছে। মূলত ওটা একটা বাতিঘর ‘ব্রেকওয়াটার বিকন’। ৫০০ বর্গমিটার জায়গা দখল করে ক্যারোট আকারে তীক্ষ্ণ হয়ে ওপরের দিকে উঠেছে। দিনে রুপালি আলোয় ঝিল্লিসর্বস্ব টাওয়ার চকচক করে আর রাতের গাঢ় আঁধার হাওয়ায় মিলিয়ে দিয়ে রঙিন আলোয় অপূর্ব সুষমা নিয়ে ফুটে ওঠে। যা সমুদ্রের একাংশ বর্ণিল করে তোলে।

প্রথমে আমি জায়গাটির সন্ধান পাইনি। যখন পেয়েছি, তখন আর হাতে সময় ছিল না। তবু স্বল্প সময়ে সাইফ খান, সুমন, খোরশেদ ও টিটু ভাইকে সঙ্গে নিয়ে দুধের স্বাদ চায়ে মিটিয়েছি।

কী সুন্দর ক্যাম্পাস। আর কী সুন্দর বিচ। সত্যিই অসাধারণ। বাইর থেকে যতটা সম্ভব দৃষ্টিগোচর হয়, তাতেই মুগ্ধ। ভেতরের অবয়ব তথা নৈসর্গিক দৃশ্য কল্পনার চেয়েও সুন্দর। ঝকঝকে–তকতকে এমন ক্যাম্পাস অন্য কোথাও আছে কি না জানি না। এমন ক্যাম্পাসের ছাত্র হতে পারলে হয়তো সারাটা জীবনই ছাত্রত্ব নিয়ে বেঁচে থাকতে মন চাইবে।

লেখকের ই–মেইল: <[email protected]>