কোরিয়ায় ইপিএস কর্মীদের সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের মতবিনিময়

সিউলে ইপিএস কর্মীদের সঙ্গে দূতাবাসে মতবিনিময়। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস
সিউলে ইপিএস কর্মীদের সঙ্গে দূতাবাসে মতবিনিময়। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস

দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি ইপিএস কর্মীদের নিয়ে বরাবরের মতো এ বছরও মতবিনিময় সভা করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম।

গতকাল রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় বেলা তিনটায় দূতাবাসের হলরুমে এই মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ২০১৯ সালের সব কার্যক্রম তুলে ধরেন দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মুকিমা বেগম।

দেশটিতে কর্মরত বাংলাদেশিদের সমস্যা ও তার সমাধানই ছিল এই মতবিনিময় সভার মূল উদ্দেশ্য। আলোচনায় উঠে আসে বর্তমান অবস্থা, সমস্যা, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ করণীয় প্রসঙ্গ।

মতবিনিময়ে ইপিএসভিত্তিক সামাজিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইপিএস কর্মীদের নির্দিষ্ট কিছু সমস্যার দিক সমাধানের লক্ষ্যে দূতাবাসের কাছে প্রস্তাব তুলে ধরেন।

তবে এবারের মতবিনিময়ে বোয়েসেলে জমাকৃত জামানত ও বিমার বিষয়টি উঠে এসেছে। এ বিষয়ে ইপিএস কর্মীদের কাছে পরামর্শ চেয়ে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল দূতাবাস।

সভার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ছিল—

ক. যেকোনো আইন প্রণয়নের তিন থেকে চার মাস আগে তা ঘোষণা দেওয়া এবং প্রবাসীদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করা।

খ. জামানতপ্রথা বিলুপ্ত করে বিমাপ্রথা চালু করা। যদি তা সম্ভব না হয়, জামানতের টাকার পরিমাণ কমানো এবং ইনক্রিমেন্টের মাধ্যমে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।

গ. রসিদ প্রদান করা। জামানত বা বিমার প্রিমিয়ামের (যদি বিমা সম্ভব হয়) রসিদসহ সব ধরনের কাগজ জামানতকারীর বা বিমাকারীর কাছেও এক কপি করে দেওয়া। জামানত বা বিমার টাকা কোথায় জমা আছে, সেটা প্রদানকারীর যেন সব সময় বোয়েসেল অ্যাপসের মাধ্যমে দেখতে পায়, সেটা নিশ্চিত করা।

মতবিনিময় সভার ইপিএস কর্মীদের একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস
মতবিনিময় সভার ইপিএস কর্মীদের একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস

ঘ. কোন কোন শর্ত ভঙ্গ করলে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না, সেটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা।

ঙ. কোম্পানি পরিবর্তন যেহেতু বৈধ আছে, তাই কোম্পানি পরিবর্তনের দোহাই দেখিয়ে জামানত বা বিমার টাকা বাজেয়াপ্ত করা যাবে না।

চ. ফেরতের জন্য যেসব কাগজপত্র লাগবে, তা জামানতপত্রে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকা ও ওয়েবসাইটে এর কপি আপলোড করা।

ছ. ফেরতের সময় লভ্যাংশসহ ফেরত দেওয়ার নিশ্চয়তা।

জ. ই-৯ ভিসা নিয়ে বৈধভাবে যেকোনো সময় একেবারে ফেরত গেলে টাকা ফেরত প্রদান করা। এ ছাড়া কোরিয়ায় কেউ যদি ভিসা পরিবর্তন করে, তবে ভিসা পরিবর্তনের প্রমাণ দেখিয়ে আবেদন করলে তার জামানত ফিরিয়ে দেওয়া।

ঝ. কর্মরত অবস্থায় কেউ যদি মৃত্যুবরণ করে, তবে তার পরিবারের কাছে জামানতের টাকা পৌঁছে দেওয়া।

ঞ. যদি শর্ত ভঙ্গ না হয়, তবে আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গেই পূর্ণ জামানত ফিরিয়ে দেওয়া। আবেদন করার পদ্ধতি সরাসরি বোয়েসেলে না গিয়ে ফ্যাক্স কিংবা ই-অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে করা।

রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কমিউনিটির নেতা ও ইপিএস কর্মীরা। ছবি: আমিনুল মোগল
রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কমিউনিটির নেতা ও ইপিএস কর্মীরা। ছবি: আমিনুল মোগল

এ ছাড়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিবিএ এবং এমবিএ কোর্স চালু করার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ইপিএস কর্মীরা। ইপিএসে আরও বেশি বাংলাদেশি নিয়োগের উপায়সহ সময়োপযোগী সার্বিক দিক তুলে ধরেন বক্তারা। দূতাবাসের প্রতিটি উদ্যোগকে স্বাগত জানান ইপিএস কর্মীরা। এর আগেও এমন মতবিনিময় সভা সফলতার দরজা খুলে দিয়েছে বলে মনে করেন ইপিএস কর্মীরা।

দূতাবাস ইপিএস কর্মীদের সার্বিক সহযোগিতা ও প্রতিটি বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করে। ইপিএসভিত্তিক সব সামাজিক সংগঠনকে প্রবাসীদের বিভিন্ন ধরনের তথ্যসেবা দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রদূত। দূতাবাসও যেন প্রবাসীদের সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত থাকতে পারে, সে জন্য ইপিএস কর্মীদের সহযোগিতা চান রাষ্ট্রদূত।