দিনলিপি

সময়কে মলাটবন্দী রাখতে অনেকেই দিনলিপি বা ডায়েরি লিখে থাকেন। একবার ভেবে দেখেছেন, রোজনামচা লেখার এই রীতি কবে থেকে শুরু হলো?
অনেক গবেষক মনে করেন, দিনলিপির শুরুটা গুহামানবদের হাতেই ঘটেছিল। তবে এই কথার কোনো জুতসই প্রমাণ নেই। দিনলিপি লেখার সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলে দশম শতাব্দীতে। এ সময় জাপানি রাজদরবারের নারীদের লেখা দিনলিপি পাওয়া যায়। সেসব দিনলিপিতে উল্লেখ থাকত তাঁদের চাওয়া-পাওয়ার খতিয়ান, রোজকার ঘটে যাওয়া কোনো বিশেষ ঘটনার বিবরণ, এমনকি ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নের কথাও। এমন একজন দিনলিপিকার ছিলেন জাপানি নারী মুরাসাকি শিকিবু। তাঁর বেশ কিছু লেখা পরবর্তী সময়ে চিত্রকরের চিত্রকর্মের বিষয় হয়েছে।
পশ্চিমা দুনিয়ায় দিনলিপি লেখা জনপ্রিয় হয় রেনেসাঁ যুগে। ১৬৩৩ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম নেওয়া স্যামুয়েল পেপিসকে বলা হয় দিনলিপির শেক্সপিয়ার। তিনি তাঁর দিনলিপিতে তাঁর বিভিন্ন কৃতকর্মের ব্যাখ্যা তুলে ধরে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। পরবর্তী সময়ে ইউরোপের দেশগুলোতে যখন শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে বিপ্লব দানা বাঁধা শুরু করে, বিশেষভাবে ফরাসি বিপ্লবের সময় দিনলিপি লেখা আরও জনপ্রিয়তা পায়।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে কাগজের সহজলভ্যতা বৃদ্ধির সঙ্গে দিনলিপির লেখার সংখ্যাও বাড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নাৎসি বাহিনীর অত্যাচারের দিনগুলোতে লেখা অ্যানা ফ্রাঙ্কের ডায়েরির ঐতিহাসিক মূল্য আজ সর্বজনবিদিত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা দিনলিপি নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে বই।
নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে