ব্রাইটন মাতাল 'বেদের মেয়ে জোসনা' পালা

‘বেদের মেয়ে জোসনা’ পালার কলাকুশলীরা
‘বেদের মেয়ে জোসনা’ পালার কলাকুশলীরা

ঘড়ির কাঁটায় তখন সন্ধ্যা সাতটা। বাইরে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি। একদিকে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক, অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় ডেনিসের বিপদ সংকেত।

বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে দক্ষিণ ইংল্যান্ডের সমুদ্রতীরবর্তী শহর ব্রাইটনের বিখ্যাত ব্রাইটহেলম থিয়েটারের গাঢ় নীল পর্দা সরালেন আয়োজক শাহীন মিতুলি। সামাজিক সংগঠক অ্যান্থনি কালুমে বব মার্লি হ্যাট পরে মঞ্চে এসে শুভেচ্ছা জানালেন দর্শকদের।

সব প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে শুরু হলো বহুল কাঙ্ক্ষিত ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র পালা।

পরিচালক টি এম আহমেদ কায়সার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে নেচে-গেয়ে গভীর মায়াভরা কণ্ঠে শুরু করলেন পালাবন্দনা। নিজস্ব ভঙ্গিমায় বিশেষ কায়দায় চোখেমুখে দারুণ অভিব্যক্তি নিয়ে তাঁর এক পায়ে নৃত্যের সঙ্গে পালা বর্ণনা শেষ হলে মঞ্চে উপস্থিত হন যতরপুরের রাজা সারওয়ার-ই আলম।

গভীর চিন্তাগ্রস্ত তিনি। কারণ তাঁর সামনে পড়ে আছে বিষধর কালনাগিনীর ছোবলে আক্রান্ত শাহজাদা সোহেল আহমেদের অর্ধমৃত দেহ। রাজার আদেশ বলে কথা। ডাক পড়ল রাজ্যের সবচেয়ে পারদর্শী নাগিনী সোনিয়া সুলতানার, যাকে পুত্রের প্রাণের বিনিময়ে রাজসিংহাসন পর্যন্ত লিখে দিতে চান রাজা।

দারুণ নাটকীয়তা। ধীরে ধীরে এগোতে থাকে কাহিনি। জেসি বড়ুয়া ও অমিত দের সুরের ঝংকার আর তানিম আহমেদের তবলার শব্দ দ্যোতনায় ততক্ষণে ভীষণ মন্ত্রমুগ্ধতায় আচ্ছন্ন দর্শক। কলাকুশলীদের চোখেমুখে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস।

একদিকে মঞ্চ কাঁপিয়ে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী রাজার হুংকার, অন্যদিকে সোনিয়া সুলতানা ও সোহেল আহমেদের অভিনয় ও নৃত্য। আর কালনাগিনীর ভূমিকায় শিশুশিল্পী লুজানের অসাধারণ নৈপুণ্য।

আয়োজকদের সঙ্গে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ পালার কলাকুশলীরা
আয়োজকদের সঙ্গে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ পালার কলাকুশলীরা

অবশেষে নির্দয় জল্লাদ অমর বৈদ্যের তলোয়ারের ঝলসানিতে শাহজাদার শিরশ্ছেদ করার ভয় কাটিয়ে শাহজাদাকে অবমুক্ত করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে দর্শকদের মুহুর্মুহু করতালিতে শেষ হয় টান টান উত্তেজনাময় একটি সফল মঞ্চায়ন।

রাধারমণ সোসাইটি ও ডাইভারসিটি লুইসের যৌথ উদ্যোগে এভাবে গত শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ব্রাইটনে মঞ্চায়িত হয় গ্রাম-বাংলার বিখ্যাত ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র পালা। সিংহভাগ অবাঙালি দর্শকের পাশাপাশি অনেক বাঙালি দর্শকও বাইরের বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে এসে উপভোগ করেন আবহমান বাংলার এই লোকপালা।

ভূয়সী ভূয়সী প্রশংসায় আপ্লুত হন কলাকুশলীরা। দর্শকসারি থেকে দাবি জানানো হয়, পালাটি গ্রীষ্মের ছুটিতে ব্রাইটনে আরেকবার মঞ্চায়নের জন্য।

উল্লেখ্য, এর আগে পালাটি লন্ডনের রিচমিক্স থিয়েটার ও সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে এবং লিডস ও কার্ডিফ শহরে মঞ্চায়নের মাধ্যমে সুধী মহলের বিপুল প্রশংসা অর্জন করে। এ ছাড়া বিবিসি এসেক্স রেডিও পালাটি নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান এবং স্থানীয় ইংরেজি ভাষার সংবাদপত্রগুলো এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

বিলেতের বিভিন্ন শহরে বাঙালি সংস্কৃতির আলো ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ব্রিটেনের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধ দৃঢ় করতে নিরলস চেষ্টারত দলটিকে সুধীজন ‘বিলেতে বাঙালি সংস্কৃতির দূত’ হিসেবে অভিহিত করেন।

ব্রাইটনে পালাটির মঞ্চায়ন আয়োজন করেন ডাইভারসিটি লুইসের অ্যান্থনি কালুমে ও কবি শাহীন মিতুলী। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন রাজনীতিক সৈয়দ এনাম ও সামাজিক সংগঠক সৈয়দা নাজনিন সুলতানা শিখা।