সুইডেনে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে একুশ পালন

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, স্টকহোম
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, স্টকহোম

একুশের চেতনায় উজ্জীবিত ও সম্মিলিতভাবে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সুইডেনে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

গতকাল ২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকালে দেশটির রাজধানী স্টকহোমে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিতকরণের মধ্য দিয়ে দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে বিকেলে একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য নিয়ে এক মুক্ত আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধায় মহান ভাষাশহীদদের স্মরণ করেন। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

নীরবতা পালন শেষে আগত সব অতিথি দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলামের নেতৃত্বে দূতাবাস প্রাঙ্গণে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় নেপথ্যে বাজছিল একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’।

এরপর দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।

দ্বিতীয় পর্যায়ে মুক্ত আলোচনা পর্বে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষাপট, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস এবং বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা অর্জনে অমর একুশের সুদূরপ্রসারী প্রভাবের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন।

অনুষ্ঠানে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, স্টকহোম
অনুষ্ঠানে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, স্টকহোম

বক্তারা বলেন, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালি যে ইতিহাস রচনা করেছিল, সে ইতিহাস এখন বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। তারা দূতাবাসের এ আয়োজনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারিতে দূতাবাসে আয়োজন বহির্বিশ্বের সামনে ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য প্রসারে বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকার প্রদর্শনের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের সামনে বাঙালির সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ভাষার জন্য আত্মত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরতে ভূমিকা রেখেছে।

রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় ভাষাশহীদদের অবদান, ভাষা আন্দোলন ও তৎপরবর্তী সব আন্দোলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর প্রভুসুলভ মনোভাবের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং ভাষার ভিত্তিতে বাঙালির জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ। এরই পথ বেয়ে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ।

তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ করায় তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এই গৌরবময় সাফল্য অর্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যদেরও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতিসমূহের কথা উল্লেখ করে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সরকার ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর ভূমিকার প্রতি আলোকপাত করেন।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, স্টকহোম
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, স্টকহোম

আলোচনার পর বিভিন্ন ভাষায় গাওয়া ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটি নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত প্রামাণ্যচিত্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘মুজিব শতবর্ষ’ উদ্‌যাপন ও ২১ বইমেলা নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়া দূতাবাসের মিলনায়তন কক্ষে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির বিরল ছবিসমূহ নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

সবশেষে স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশি এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে দেশাত্মবোধক গান ও কবিতা পরিবেশিত হয়।

অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রদূত সব শিল্পী ও কলাকুশলীকে শুভেচ্ছা উপহার প্রদান দেন। বিজ্ঞপ্তি