আয়োজনে ইউনেসকো ও বাংলাদেশ দূতাবাস

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মণিপুরি সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিস
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মণিপুরি সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিস

দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পালন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ২১ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) ইউনেসকো ও বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে পৃথকভাবে দিবসটি পালন করা হয়।

ইউনেসকো 

এ উপলক্ষে ইউনেসকো ল্যাংগুয়েজ উইদাউট বর্ডার শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ইউনেসকোর সদর দপ্তরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউনেসকোয় স্থায়ী প্রতিনিধি কাজী ইমতিয়াজ হোসেন অংশ নেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও ইউনেসকোর উপমহাপরিচালক (শিক্ষা) স্টেফিনিয়া জিয়ান্নি, প্যারিসে নিযুক্ত তানজানিয়ার রাষ্ট্রদূত স্যামুয়েল শিলুকেন্ডু ও Organisation internationale de la Francophonie-এর ফরাসি ভাষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যবিষয়ক পরিচালক আলেক্সন্ডার ওলফ বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন তাঁর বক্তব্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আয়োজনে ইউনেসকো ঘোষিত প্রতিপাদ্য ল্যাংগুয়েজ উইদাউট বর্ডারের প্রশংসা এবং এ সময়োপযোগী প্রতিপাদ্য নিয়ে এ আয়োজন করায় ইউনেসকোকে ধন্যবাদ জানান।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পরিবেশনা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিস
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পরিবেশনা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিস

এরপর ইউনেসকো দিনব্যাপী বিভিন্ন দেশের ভাষা বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে বিতর্ক ও গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ দূতাবাস ও ইউনেসকোতে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ইউনেসকো সদর দপ্তরে ২৭টি সদস্যরাষ্ট্রের সরাসরি অংশগ্রহণে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে। শুরুতে ছিল ভাষা প্রদর্শনী। এ প্রদর্শনীতে ইউনেসকোতে বিভিন্ন দেশের স্থায়ী মিশন সুদৃশ্য ব্যানার, পোস্টার, ডিজিটাল ব্যানার ইত্যাদির মাধ্যমে নিজ নিজ দেশের মাতৃভাষাকে তুলে ধরে।

স্টেফিনিয়া জিয়ান্নি এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক আয়োজনে প্রায় চার শ দর্শকের উপস্থিতিতে নৃত্য-গীত-বাদ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ নিজ নিজ ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য উপস্থাপন করে।

উল্লেখ্য, এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আসা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত একটি মণিপুরি সাংস্কৃতিক দল নৃত্য পরিবেশন করে ও প্রশংসিত হয়।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সার্বিয়া সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিস
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সার্বিয়া সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিস

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতে রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি কাজী ইমতিয়াজ হোসেন শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। ইউনেসকোর মহাপরিচালকের পক্ষে স্টেফিনিয়া জিয়ান্নি ও উপমহাপরিচালক (তথ্য ও যোগাযোগ) Mr. Moez Chakchouk বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ থেকে আগত মণিপুরি সাংস্কৃতিক দলের রাসনৃত্য, মণিপুরি ছন্দে রবীন্দ্রনৃত্য ও মৃদঙ্গ বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐশ্বর্যকে তুলে ধরে।

সাংস্কৃতিক আয়োজন শেষে ১৬টি সদস্যরাষ্ট্রের নিজস্ব রসনায় অতিথিদের আপ্যায়িত করা হয়।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিতি। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিস
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিতি। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিস

ইউনেসকোতে এ ধরনের ভিন্নধর্মী আয়োজনের জন্য উপস্থিত রাষ্ট্রদূত ও ইউনেসকোতে স্থায়ী প্রতিনিধি, ইউনেসকোর কর্মকর্তা ও আসা অতিথিরা আয়োজক হিসেবে ইউনেসকোতে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের প্রশংসা করেন।

বাংলাদেশ দূতাবাস 

২১ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানী প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রবাসী বাংলাদেশি ও দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন তাঁর বক্তব্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি ইউনেসকো কর্তৃক এ দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণাকে ২১ ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিকীকরণ বলে অভিহিত করেন এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

বাংলাদেশ দূতাবাসে অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিস
বাংলাদেশ দূতাবাসে অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিস

অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষাশহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত এবং তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি