ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিদেশিদের জানানো প্রয়োজন

বক্তব্য দিচ্ছেন হাইকমিশনার রেজিনা আহমেদ। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, পোর্ট লুইস
বক্তব্য দিচ্ছেন হাইকমিশনার রেজিনা আহমেদ। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, পোর্ট লুইস

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০০০ সাল থেকে পালন করা হলেও ২১ ফেব্রুয়ারিকে কেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তার ইতিহাস অনেকেরই জানা নেই। তাই বিদেশিদের এ ইতিহাস জানানো প্রয়োজন যে এর পেছনে রয়েছে বাঙালি জাতির অত্যন্ত গৌরবময় এক করুণ ইতিহাস।

মরিশাসের রাজধানী পোর্ট লুইসে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রেজিনা আহমেদ।

বক্তব্য দিচ্ছেন ভারতের হাইকমিশনার। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, পোর্ট লুইস
বক্তব্য দিচ্ছেন ভারতের হাইকমিশনার। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, পোর্ট লুইস

রেজিনা আহমেদ তাঁর বক্তব্যে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভের পটভূমি তুলে ধরে বলেন, ‘একুশ আমাদের গর্ব। সারা বিশ্বে এর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত কার্যকর করার দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ। বাংলাদেশ সরকার সব ভাষা সংরক্ষণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’

মরিশাসে মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করা হয়েছে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। পোর্ট লুইসে বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হয়। বাংলাদেশ হাইকমিশনের এ উদ্যোগে দেশটির ভারতীয় হাইকমিশনও শামিল হয়।

এ উপলক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে হাইকমিশনার রেজিনা আহমেদের বাসভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিতকরণের পর এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারে একুশের তাৎপর্যের ওপর এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ভাষা আন্দোলনভিত্তিক নাটিকা। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, পোর্ট লুইস
ভাষা আন্দোলনভিত্তিক নাটিকা। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, পোর্ট লুইস

২১ ফেব্রুয়ারি দিবসের শুরুতে হাইকমিশনার রেজিনা আহমেদ তাঁর বাসভবনে হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিতকরণের মাধ্যমে দিবসের কার্যক্রম সূচনা করেন। পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।

২২ ফেব্রুয়ারির আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশটির সরকারের শিল্প ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আভিনাস টিলাক। বক্তব্য দেন ভারতীয় হাইকমিশনার তন্ময় লাল ও বাংলাদেশের হাইকমিশনার রেজিনা আহমেদ।

প্রধান অতিথি আভিনাস টিলাক বলেন, মরিশাসের সমাজব্যবস্থা বহু ভাষাভাষী এবং বহু সংস্কৃতির এক মিলনমেলা। মরিশাস সব সময় সব ভাষাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বিভিন্ন ভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে মরিশাসে বিভিন্ন স্পিকিং ইউনিয়ন তাদের নিজ নিজ ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা করে যাচ্ছে, যা সবার জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মরিশাসের অর্থনীতিতে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অবদানের কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

আভিনাস টিলাক তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বাংলা ভাষার আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও বায়ান্নর ভাষাশহীদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালি জাতি যে সংগ্রাম করেছে, তার প্রশংসা করেন।

ভোজপুরি স্পিকিং ইউনিয়নের পরিবেশনা। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, পোর্ট লুইস
ভোজপুরি স্পিকিং ইউনিয়নের পরিবেশনা। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, পোর্ট লুইস

ভারতের হাইকমিশনার তন্ময় লাল বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সম্প্রতি বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বর্ণযুগে অবস্থান করছে।

তন্ময় লাল আরও বলেন, ‘ইউনেসকো সব ভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে আজকের এই দিনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর পেছনে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসনীয়। বহু ভাষা প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে, এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।’

তন্ময় লাল বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগের প্রশংসা এবং এর সঙ্গে শামিল হতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের শুভেচ্ছা উপহার দেওয়া হয়। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, পোর্ট লুইস
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের শুভেচ্ছা উপহার দেওয়া হয়। ছবি: বাংলাদেশ হাইকমিশন, পোর্ট লুইস

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয় প্রবাসী বাংলাদেশি কর্তৃক বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসসংবলিত নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে। এ ছাড়া ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার, হিন্দি স্পিকিং ইউনিয়ন, তেলেগু স্পিকিং ইউনিয়ন, ভোজপুরি স্পিকিং ইউনিয়ন, মারাঠি স্পিকিং ইউনিয়ন, তামিল টেম্পল ফেডারেশন, কনস্যুলেট জেনারেল অব সৌদি আরব, কনস্যুলেট জেনারেল অব ঘানা এবং মরিশাসে বসবাসরত প্রবাসী ভারতীয় বাঙালিরাও উৎসাহের সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে দেশটির বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, জাপানের রাষ্ট্রদূত, পোর্ট লুইসের মেয়র, প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বিপুলসংখ্যক অতিথি উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি