দূতাবাসের উদ্যোগে ইউনেসকো ও এসিডির সহায়তা

অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, তেহরান
অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, তেহরান

ইউনেসকোর আঞ্চলিক অফিস ও এশিয়ান কো-অপারেশন ডায়ালগের (এসিডি) সাংস্কৃতিক সমন্বয় কেন্দ্রের সহায়তায় ইরানের রাজধানী তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাস মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে।

২২ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) সন্ধ্যায় ইউনেসকো ও এসিডির সহায়তায় বড় পরিসরে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ইউনেসকো ও এসিডির আঞ্চলিক অফিসপ্রধান ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া তেহরানের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, সিরিয়া, লেবানন, মঙ্গোলিয়ার শিক্ষার্থী, প্রবাসী বাংলাদেশি ও দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সপরিবার অংশগ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, ২১ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, তেহরান
অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, তেহরান

আলোচনা সভায় বক্তারা ভাষাশহীদ দিবসের তাৎপর্য ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রাসঙ্গিকতার ওপর আলোকপাত করেন।

দূতাবাসের কাউন্সেলর মো. হ‌ুমায়ূন কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন কমার্শিয়াল কাউন্সেলর মো. সবুর হোসেন। তিনি অমর একুশের প্রেক্ষাপট ও দিবসটি কীভাবে ইউনেসকো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষিত হলো তা বর্ণনা করেন।

এসিডির সাংস্কৃতিক সমন্বয় কেন্দ্রের সভাপতি মো. ইসা রেজাজাদেহ ভাষা-দার্শনিকদের উদ্ধৃত করে বলেন, নতুন একটি ভাষা শেখার অর্থ কেবল কিছু নতুন শব্দ শেখাই নয়, বরং একটি নতুন চিন্তাপদ্ধতি শেখা। কোনো একটি ভাষা হারিয়ে গেলে তার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জ্ঞানের বিশ্বও হারিয়ে যায়। তিনি তার বক্তব্যের শুরুতে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

বক্তব্য দিচ্ছেন রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, তেহরান
বক্তব্য দিচ্ছেন রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, তেহরান

ইউনেসকোর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান স্ফেতান স্ফেতকভস্কি ইউনেসকো ঘোষিত এ বছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ভাষার কোনো সীমানা নেই’ (ল্যাংগুয়েজ উইদাউট বর্ডারস) বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন এবং বিলুপ্তপ্রায় ভাষাসমূহ সংরক্ষণ ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার বলেন, ভাষা আন্দোলনের মধ্যেই জাতীয় ঐক্য ও পরিচিতির বীজ নিহিত ছিল, যা পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রেরণা জুগিয়েছে।

রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণে দিনটির ভূমিকা উল্লেখ করে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখার পাশাপাশি ভাষাবৈচিত্র্য সংরক্ষণ করার আহ্বান জানান।

বক্তব্য দিচ্ছেন এসিডি সাংস্কৃতিক সমন্বয় কেন্দ্রের সভাপতি মো. ইসা রেজাজাদেহ। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, তেহরান
বক্তব্য দিচ্ছেন এসিডি সাংস্কৃতিক সমন্বয় কেন্দ্রের সভাপতি মো. ইসা রেজাজাদেহ। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, তেহরান

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল বার্তা হলো ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা এবং পৃথিবীর বুক থেকে লোকজ সংস্কৃতির আঁধার ভাষাসমূহকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা।

রাষ্ট্রদূত ইউনেসকো কর্তৃক ১৯৯৯ সালে মহান ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকার কথা আলোচনা করে বলেন, ভাষাবৈচিত্র্য রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার ও উদ্যোগের অংশ হিসেবে তিনি ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছেন।

রাষ্ট্রদূত গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে বাংলা ভাষার অধিকারের দাবিতে প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদদের আত্মত্যাগ এবং ভাষা আন্দোলনের সূচনা থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করেন।

বক্তব্য দিচ্ছেন ইউনেসকোর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান স্ফেতান স্ফেতকভস্কি। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, তেহরান
বক্তব্য দিচ্ছেন ইউনেসকোর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান স্ফেতান স্ফেতকভস্কি। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, তেহরান

আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা নাচ ও গান পরিবেশন এবং কবিতা আবৃত্তি করেন। শিশুরাও নাচ-গান পরিবেশন করে।

এর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে দূতাবাসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, শহীদ মিনারের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়।

উপস্থিতির একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, তেহরান
উপস্থিতির একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস, তেহরান

দিবসটি উপলক্ষে দূতাবাস প্রাঙ্গণ অমর একুশে সম্পর্কিত পোস্টার ও ব্যানার দিয়ে সজ্জিত করা হয়। বিজ্ঞপ্তি