আলোর মতো অন্ধকারও সমান গুরুত্বপূর্ণ

ছবি: প্রথম আলো
ছবি: প্রথম আলো

উঁচু স্থান থেকে নিচের জিনিসপত্রের ছবি ভালোভাবে দেখা যায়। একইভাবে দূর থেকে আমরা প্রবাসীরা আমাদের প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশকে ভালোভাবে দেখতে পাই।

রাষ্ট্র গঠনের বেশ কিছু উপাদান আছে। জনগণ এর মধ্য থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ তার চিন্তা দিয়ে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়। তাই জনগণকেই সব থেকে বেশি দায়িত্বশীল ও সচেতন হতে হয়। আর দায়িত্বশীল জনগণই পারে সুন্দর দেশ উপহার দিতে।

আমি বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের বাইরে আছি। আর অস্ট্রেলিয়ায় বাস করছি দুই বছরের বেশি সময়। পড়াশোনার সূত্রে অস্ট্রেলিয়ায় আসার পর বেশ কিছু জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছি। সব সময় লক্ষ্য করার চেষ্টা করেছি এ দেশের মানুষের জীবনযাপন।

অস্ট্রেলিয়া একটি উন্নত সমাজ। উন্নত সমাজ মানে এই নয় যে, এখানে উঁচু উঁচু দালানকোঠা ও রাস্তাঘাট।

উন্নত, উন্নয়নশীল আর মধ্যম আয়ের দেশের পার্থক্য আছে। আমার কাছে মনে হয়েছে মূল তফাতটা মননে। শিক্ষা মানুষের খুবই দরকারি উপাদান। যা দিয়ে মানুষ করতে পারে গুণাবলির বিকাশ।

দুনিয়ার সব ঘটনা এক আপেক্ষিক ব্যাপার। কথাটা বিজ্ঞানের। বিশ্বায়ন শব্দটাও বেশ পুরোনো হতে চলেছে। সব মানুষই একটা নেটওয়ার্কের কাছে আবদ্ধ হয়ে গেছে। তার নাম অনলাইন দুনিয়া। যার মাধ্যমে সব সংবাদ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সব জায়গায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্বব্যাপী। অনেক দিন ধরেই এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সব জায়গায়। বিশেষ করে উন্নত দেশে।

এখানে সাধারণ থেকে রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তি সবাই কথা বলেন এ নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ায় এবার তাপমাত্রা ৪০-৪১ সেন্টিগ্রেড। ফলে বনজঙ্গলে ধরেছে আগুন। এভাবে ঘটছে পরিবেশের বিপর্যয়। এ জন্য জনগণ সরকারের করছে সমালোচনা। ফলে সরকার বাধ্য হচ্ছে গ্রিন টেকনোলজির ব্যবহারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবাই হুমকির মধ্যে পড়বে। কিন্তু এর প্রভাবে সব থেকে ক্ষতির মধ্যে পড়বে স্বল্পোন্নত দেশ। অনেক দেশ হারাতে পারে জমি।

কিন্তু এ নিয়ে আমাদের দেশের মানুষ কোনো চিন্তাভাবনা করেন বলে মনে হয় না। অনেকে বোঝার চেষ্টাই করেন না। আবার যাঁরা বুঝতে পারেন, তাঁরা এক একটা দেয়াল তৈরি করে রেখেছেন। তাঁদের বিশ্বাস, এই দেয়াল রক্ষা করবে। যদি রক্ষা না করেও তাঁদের আছে বিকল্প। এসবের পেছনে কাজ করেছে শ্রেণি বিভাজন। উন্নত দেশগুলোর সমাজে আছে সাম্য। সামান্য কোনো নেতিবাচক বিষয় সবাইকে সমানভাবে প্রভাবিত করে।

জলবায়ু পরিবর্তনে কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়। রাষ্ট্রের সবাই মিলে তা করতে হবে সমাধান। জীবন চলার জন্য টাকার বিকল্প নেই, এটা সত্য। কিন্তু টাকা থেকেও অক্সিজেন বেশি জরুরি। তা আমরা বুঝতেই চাই না। ইকোসিস্টেম ভেঙে পড়লে কোটি টাকা খরচ করে আমরা বাঁচতে পারব না, এটা ভাবার কারও সময় নেই।

একসময় গ্রামবাংলায় দেখতাম বড় বড় আম-কাঁঠালের গাছ। আরও ছিল তালগাছ, বেলগাছ, বটগাছ। অল্প কিছু টাকার লোভে আমরা এই গাছগুলো হরহামেশাই বিক্রি করে দিচ্ছি। কিন্তু আমরা বুঝতেই চাচ্ছি না এই গাছগুলো জীবনধারণের জন্য সরবরাহ করছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অক্সিজেন। গাছগুলো দেয় ছায়া।

এখন আমাদের দেশে গরমে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে তা নিয়ে ভাবার যথেষ্ট সময় নেই কারও।

অন্যদিকে আমি এখন যে দেশে আছি, সেখানে সকালবেলায় শুনতে পাই ঘুঘু পাখির ডাক। দেখতে পাই জানালা দিয়ে প্রকাণ্ড গাছের দোল খাওয়া। এভাবে তৈরি হয় বাতাস; যা দেহমনকে করে সিক্ত।

এখানে একটি গাছ বাঁচানোর জন্য দেখেছি রাস্তার গতিপথ পরিবর্তন করতে। কারণ, এই উন্নত সমাজের মানুষগুলো বুঝতে পারে গাছের প্রয়োজনীয়তা। আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে আলোর মতো অন্ধকারও সমান গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই মেনে নিতে হবে সম্পদের মতো পরিবেশও একটা সম্পদ।

গাছপালা, পশুপাখি আর আমরা—এই তিন মিলেই পরিবেশ। পশুপাখি ও আমরা মানবসমাজ চরমভাবে নির্ভরশীল গাছপালার ওপর। উদ্ভিদ ছাড়া প্রাণিকুল কোনোভাবেই টিকবে না, এটা আমরা সবাই জানি। তবুও উদ্ভিদ কেটে ফেলার সময় ভাবি না।

গাছপালা কাটার দরকার হতে পারে। কিন্তু শুধু কাটলেই হবে না। পরিবেশের ভারসাম্য ধরে রাখার জন্য লাগাতে হবে। কারণ আমাদের দেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় লাগাতে হবে গাছপালা। বাংলাদেশে এখন শীতকাল শেষ। বর্ষাকালে সবার উচিত হবে একটি করে গাছ লাগানো। আর এটাই হবে দেশপ্রেম। যা সুন্দর করবে আগামীর দিনগুলো। সবাই মিলে গড়ে তুলতে হবে সবুজ পৃথিবী।