ফিনল্যান্ডের যদি একজন আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ থাকত

ফিনল্যান্ডের গ্রন্থাগারে গেমস খেলার ব্যবস্থা আছে। ছবি: লেখক
ফিনল্যান্ডের গ্রন্থাগারে গেমস খেলার ব্যবস্থা আছে। ছবি: লেখক

পড়ালেখার জন্য ২০১১ সালে পাড়ি জমাই উত্তর ইউরোপের দেশ ফিনল্যান্ডের ছোট্ট কিন্তু মনোরম শহর ভাসায়। আসার পর কিছুদিন হাবুডুবু খাওয়ার মতো অবস্থা ছিল। বাংলাদেশের সঙ্গে ফিনল্যান্ডের সাংস্কৃতিক ব্যবধান আক্ষরিক অর্থেই উত্তর আর দক্ষিণ মেরু। তার ওপর ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা। আর এ শিক্ষাব্যবস্থার কেন্দ্রে আধুনিক গ্রন্থাগার।

একটি দেশের গ্রন্থাগারব্যবস্থা কতটা শিক্ষাবান্ধব ও জনকল্যাণমুখী হতে পারে, সেটা ফিনল্যান্ডে না এলে হয়তো বুঝতে পারতাম না।

গ্রন্থাগারে সিডি ও ভিসিডি বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। ছবি: লেখক
গ্রন্থাগারে সিডি ও ভিসিডি বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। ছবি: লেখক

বলে রাখা ভালো, শিক্ষার হার ও শিক্ষার মানে ফিনল্যান্ড বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি। এই দেশের গ্রন্থাগারব্যবস্থা অত্যন্ত আধুনিক ও বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। ফিনিশ সমাজব্যবস্থার মূল প্রতিপাদ্য, শিক্ষা এবং সাম্য। এ দুটি বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে ফিনিশ গ্রন্থাগারগুলোর মূল লক্ষ্য। কিছু পরিসংখ্যানে চোখ বোলালেই লক্ষ্য পূরণে গ্রন্থাগারগুলো কতটা সফল তা বোঝা যাবে। ফিনল্যান্ডের ২৮২টি মিউনিসিপ্যালিটির প্রতিটিতেই রয়েছে গণগ্রন্থাগার, অনেকগুলোর আবার রয়েছে শাখা গ্রন্থাগার। ২০১৮ সালে দেশটির জনগণের মোট ৮৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন গ্রন্থাগারসামগ্রী পড়ার জন্য নেয় (১৫.৪ পার ক্যাপিটা)। গ্রন্থাগার ভিজিটের সংখ্যা ছিল ৫০ মিলিয়ন (৯ পার ক্যাপিটা) এবং ইন্টারনেট সেবা গ্রহণের পরিমাণ ছিল ৩৮ মিলিয়ন বার।

ফিনল্যান্ডের গ্রন্থাগারে গেমস খেলার ব্যবস্থা আছে। ছবি: লেখক
ফিনল্যান্ডের গ্রন্থাগারে গেমস খেলার ব্যবস্থা আছে। ছবি: লেখক

এখানের গ্রন্থাগারের সেবা শুধু বই ও সংবাদপত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। গ্রন্থাগারে রয়েছে স্থানীয় ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা, শিশুদের খেলার জায়গা ও তরুণদের জন্য ভিডিও গেমস খেলার ব্যবস্থা। রয়েছে সর্বসাধারণের জন্য কম্পিউটার, প্রিন্টার ও স্ক্যানার। এ ছাড়াও রয়েছে সিডি ও ভিসিডি বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা। আছে ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার। আর এসব সেবা সবার জন্যই সম্পূর্ণ ফ্রি!

যা–ই হোক, এখানের গ্রন্থাগারগুলোকে মোটামুটি দুই ভাগে ভাগ করা যায়। গণগ্রন্থাগার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক গ্রন্থাগার। দুই ধরনের গ্রন্থাগারেই আসার পর বিস্মিত হওয়ার মতো সেবা পাই।

গ্রন্থাগারের সেবার ব্যাপারে খুলে বলা যাক, এখানে আসার পর বাংলা বইয়ের জন্য প্রাণটা আকুলি-বিকুলি করত। তো গ্রন্থাগারে গিয়ে বাংলা বইয়ের খোঁজ করতে আমাকে জানানো হলো এই মুহূর্তে বাংলা বই নেই। তবে আমি চাইলে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রন্থাগার থেকে কিছু বাংলা বই আমার জন্য নিয়ে আসবে। বই নিয়ে আসার অনুরোধ করলাম। এক সপ্তাহ পর আমার মোবাইলে মেসেজ এল যে বই চলে এসেছে, আমি চাইলে নিয়ে আসতে পারি। আর এ জন্য আমাকে একটি টাকাও খরচ করতে হয়নি, শুধু বইগুলো সময়মতো ফেরত দিয়ে আসতে হয়েছে! আর বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সেবায় তো আরও চমকে গেলাম, যখন জানলাম থিসিসের জন্য রেফারেন্স বই দরকার হলে সুইডেনের গ্রন্থাগার থেকে এনে দেবে! মনে মনে ভাবলাম, এদের যদি একজন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ (বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা) থাকতেন, তাহলে এরা আরও কত কী যে করে ফেলত!