বেড়ানো: আল্পবাখের বাঁকে ৩

কংগ্রেস সেন্টার আল্পব্রেচ। ছবি: সংগৃহীত
কংগ্রেস সেন্টার আল্পব্রেচ। ছবি: সংগৃহীত

৭.

খুব সম্ভবত মরে-টরে গিয়ে স্বর্গে চলে এসেছি। নইলে চারদিক তীব্র আলোয় ভেসে যাচ্ছে কেন? ধাঁধাটা ভাঙতে ঝটকা মেরে উঠে বসলাম। সঙ্গে সঙ্গে কলকবজাগুলো ক্যাঁচকোঁচ করে উঠল। যাব্বাবা, হাড়গোড়ের আর্তনাদ মানে জ্যান্তই আছি। তবু জানালার বাইরেটা দেখে ভ্রম কাটছে না। কাঁচা রোদের খপ্পরে পড়ে শ্বেতশুভ্র আল্পবাখ আসলেই স্বর্গ বনে গেছে।

স্বর্গসুখ উবে যেতে সময় লাগল না। কপালে আজ স্নো-শ্যু হাইকিং নামের বিষম নরক আছে। মনটা আলপিন খাওয়া বেলুনের মতো চুপসে গেল। চ্যাঁচামেচি করা বাঙালি কলিজায় মাইকিংটা খুব সয়। কিন্তু হাইকিংটা ঠিক ধাতে পোষায় না। কাল রাতেই হাতেনাতে প্রমাণ মিলেছে। আরেক দফা অত্যাচার সইলে ধড় থেকে জান সটকে পড়ার ভয় আছে।

প্যাঁচা মুখ নিয়ে কাঁধ ঝুলিয়ে হোটেল থেকে বেরোলাম পা ঘষটে ঘষটে। যথারীতি কাতিয়া পাশে হাঁটছে। ‘দেখেছ কী জব্বর আবহাওয়া’ জাতীয় এক-দুই বাক্য খরচ করে কিপটে হয়ে গেলাম। অবাক করে দিয়ে কাতিয়া গল্প জুড়ে দিল। ‘বেকি তোমার উপহারটা পেয়ে দারুণ খুশি হয়েছে।’ বেকিটা কে মনে করতে কয়েক সেকেন্ড লেগে গেল। ‘ওহ, তাই নাকি?’ জবাব দিলাম। কাতিয়ার মেয়ে বেকি। দেশ থেকে আড়ংয়ের একটা পাটের ব্যাগ নিয়ে এসেছিলাম ওর জন্য।

১১ বছরের বেকি স্কুল ছুটি থাকলে মায়ের সঙ্গে অফিসে চলে আসে। টুকটাক হোমওয়ার্ক করে সময় কাটায়। আমাকে দেখলেই প্রশ্ন ছোড়ে, ‘জ্যুসিগকাইট আছে তোমার কাছে?’ জার্মান জ্যুসিগকাইট মানে বাংলা মিঠাইমন্ডা। বেকির জ্যুসিগকাইটের আবদারে ডেস্কে ‘কাইত’ হয়ে থাকা আমি সোজা হয়ে উত্তর দিই, ‘আছে, নিয়ে যাও।’ বলেই একটা চকলেট বাড়িয়ে ধরি। সেই সূত্রে বেকির সঙ্গে সামান্য সখ্য আছে।

ডানে মনিকা, বাঁয়ে লেখক আর মাঝে গাইড জিম। ছবি: সংগৃহীত
ডানে মনিকা, বাঁয়ে লেখক আর মাঝে গাইড জিম। ছবি: সংগৃহীত

তা, উপহার পেয়ে বেকি খুশি হয়েই ক্ষান্ত হয়নি। সে উপহারের উৎস্য দেশটা নিয়ে গবেষক মায়ের সঙ্গে খানিকটা গবেষণাও করেছে। আকারে অতি ছোট কিন্তু জনসংখ্যার প্রকারে অতি বড় ইত্যাদি গড়পড়তা খবরের চেয়েও বাংলাদেশে যে হাজারে বিজারে নদী আছে, এই তথ্যে সে অভিভূত। হাজার নদীর ছোট্ট দেশটা দেখতে কেমন, তাই নাকি সে ঘুরেফিরে ভাবছে এই কয় দিন। সামান্য একটা পাটের থলের মানচিত্র তুলে ধরার শক্তি দেখে আমিও অবাক।

৮.
সামান্য দুশ্চিন্তা লাগছে আজকের প্রেজেন্টশন নিয়ে। কয়েকজন মিলে খেটেখুটে যা ফল জোগাড় করেছি, সেটাই সবার হয়ে একজন মেলে ধরবে। কাজ মনমতো না হলে জায়গায় দাঁড়িয়ে ধুয়ে ফেলার একটা ভয়ংকর রীতি চালু আছে জার্মানিতে। তেমন হলে আর ইজ্জত নিয়ে ফিরে যেতে হবে না। বৈজ্ঞানিক জীবনে ইস্তফা দিয়ে অন্য ধান্দার ফিকির করা লাগবে। পকেটের কোনায় একটা জং ধরা পিএইচডি নিয়ে হয়তো মিউনিখের ফুটপাতে প্যাঁ পোঁ ভাঙা হারমোনিয়াম বাজিয়ে সিকি–আধুলি জুটিয়ে পেট চালাতে হবে। ভাবতেই গা শিউরে উঠল।

ঘণ্টাখানেক পরের কথা। প্রজেক্টের হোমরাচোমরা একজন, ডক্টর মাইকেল কোয়ান্টে সবার হয়ে দারুণ প্রেজেন্টশন দিয়েছে। কান কাটা যাওয়ার হাত থেকে বেঁচে গিয়ে হালকা মন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এ বেলার মতো সেশন শেষ।

রিসার্চ কনসোর্টিয়ামের কো-অর্ডিনেটর ডরোথি সবাইকে তাড়া দিচ্ছে এক জায়গায় জড়ো হওয়ার জন্য। আমরা জড়ো হওয়ার তোয়াক্কা না করে ছাড়া গরুর মতো চরে ফিরছি। বেচারা আর না পেরে শেষে সবাইকে ফেলে যাওয়ার হুমকি দিলে কাজ হলো। গরু লাইনে আনতে এমন রাখালের দরকার হয় বৈকি। দু–চারবার হ্যাট হ্যাট করতেই সাজিয়ে রাখা সরঞ্জামগুলোর কাছে চলে এলাম সবাই।

সরঞ্জাম বলতে দুটো ভীষণ চোখা হাইকিং স্টিক আর এক জোড়া অদ্ভুতদর্শন ধাতব ফ্রেম ধরিয়ে দেওয়া হলো জনে জনে। এই ফ্রেমই নাকি স্নো-শ্যু। ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। একটা ফোল্ডিং চেয়ার মাঝ–বরাবর পটাং করে ভেঙে স্নো-শ্যু বলে চালিয়ে দিলেই হলো? এখন এই ভাঙা চেয়ার পায়ে গলিয়ে হাঁটব কী করে। মনিকা আর দীপ্তিকেও দেখছি না। ভারত ভগ্নিরা কাছে থাকলে একটা উপায় হতো। লোকজন ঝটপট কী করে যেন এই বস্তু জুতার সঙ্গে বেঁধেছেঁদে রওনা দিয়ে দিয়েছে। পিঁপড়ার লাইনের মতো তাদের সারিটাও আস্তে আস্তে এগোতে শুরু করেছে।

‘আমি একবার দেখিয়ে দিই?’ রাবারের স্ট্র্যাপগুলো যেনতেনভাবে গেঁড়ো বাঁধা বাদ দিয়ে তাকালাম ভদ্রলোকের দিকে। বয়স ষাটের ওপরে হবে। বাঁধানো দাঁতে ঝকঝকে একগাল হাসতেই সহজ হয়ে গেলাম। পটাপট কি জাদুবলে স্নো-শ্যুয়ের ফ্রেমে আমার হাইকিং জুতাজোড়া ঠিকঠাক জুড়ে দিয়ে দুষ্টুমি চোখে হাত বাড়িয়ে বলল, ‘ওহ্, নামটাই বলা হয়নি। আমি জিম, দুই নম্বর জিম।’

‘আর আমি এক নম্বর জিম, হা হা হা...।’ ভ্যাবাচেকা খেয়ে ফিরতি কিছু বলার আগেই আরেক দুষ্টু বুড়ো পেছন থেকে বলে উঠল। নম্বর-রহস্য বুঝতে না পেরে বোকার মতো বলে ফেললাম, ‘অ্যাঁ, মানে কী?’ ‘মানে আবার কী, আমাদের দুজনেরই নাম জিম। কাকতাল, বুঝলে না। আমরা আজকের ট্যুর গাইড। তোমার আর কী খেদমত করতে পারি, বলে ফেলো তো জলদি।’ দুই বগলে দুই ফ্রেম চেপে এগিয়ে আসা মনিকা আর দীপ্তিকে দেখিয়ে দিলাম হাতের ইশারায়। জিম বুড়োরা ছোকরার গতিতে তাদের দিকে ছুটে গেল। মিনিট দুয়েকের মনিকারাও তৈরি। তারপর ধীরগতির তিন–তিনটে বাদামি মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে দলের একেবারে সবার শেষে হাসিমুখে রওনা দিল এক আর দুই নম্বর জিম।

হাইকিংয়ের প্রস্তুতি। ছবি: সংগৃহীত
হাইকিংয়ের প্রস্তুতি। ছবি: সংগৃহীত

৯.
ডিগবাজি খেয়ে উল্টে না পড়ে কীভাবে যেন লাঠি ঠুকে ঠুকে এগোতে থাকলাম। দুই দিনের তাজা এক হাঁটু তুষার জমাট বেঁধে সারতে পারেনি। পা দেবে যাচ্ছে পেঁজা তুলোর অতলে। অনর্থক হাইকিং টাইকিং না করে তুষারের বিছানায় শুয়ে আকাশ দেখতে পারলে বেশ হতো। খানিক দূরেই এক খণ্ড মেঘ ভাসছে। যেন ডাকলেই চুপচাপ কাছে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু মেঘবালিকা হওয়ার ইচ্ছেটাকে ঠেলে সরিয়ে পা চালালাম।

উল্টো পথে একজনকে ফিরে আসতে দেখে শুধালাম, ‘ঘটনা কী, যাচ্ছ কই?’ মেয়েটা জানাল, তার হাঁপানির রোগটা ঝোপ বুঝে কোপ মেরেছে। তাকে আর আটকে না রেখে বিদায় দিয়ে দিলাম। সেও অদৃষ্টের উদ্দেশ্যে ভয়ংকর দুটো গাল পেড়ে নেমে গেল। বিজ্ঞানের মতো সূক্ষ্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করা লোকদের মধ্যে গালি দেওয়ার মতো স্থূল একটা বদ স্বভাব আছে। একটু আগে নিজেও এক প্রস্থ গাল ছুড়েছি ভাঙা চেয়ার, মানে স্নো-শ্যু জোড়া পড়তে গিয়ে। চোস্ত বাংলা গালি বলে কেউ বোঝেনি ভাগ্যিস। নইলে ভালোমানুষি চেহারার জারিজুরি সব ফাঁস হয়ে যেত মুহূর্তেই।

এদিকে নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখি, আমরাও সংখ্যায় কমে গেছি। মনিকা আর আমার গদাই লস্করি চালকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দীপ্তি বাকিদের সঙ্গে ভিড়ে গিয়েছে কোন ফাঁকে। এক নম্বর জিমকেও দেখছি না। দুই নম্বর জিমই শুধু সঙ্গে আছে। মনিকাও হাঁপিয়ে হেদিয়ে বেশ পিছিয়ে পড়েছে। তার সুবিধার জন্য গতি কমিয়ে জিম আর আমি গল্প জুড়েছি ঢিমেতালে।

‘তোমার ফুসফুস টুসফুস ঠিক আছে তো? পারবে তো বাকিটা পথ?’ জিমের গলায় উদ্বেগ। দুষ্টুমি করে বললাম, ‘ফুসফুসের বাতাস ফুরিয়ে গেছে সেই কখন। এখন কলিজার চিপা থেকে বাতাস বের করে তাই দিয়ে চলছি।’ জিম হো হো হেসে উঠল, ‘তুমি দেখি দারুণ পাজি। কথার মারপ্যাঁচ এত শিখলে কোত্থেকে?’ অস্ট্রিয়ানদের জার্মান উচ্চারণ অন্য রকম। জিমের কথায় সেই টান নেই। মুচকি হেসে উত্তর দিলাম, ‘কথার খেলা আমার খুব প্রিয় একটা খেলা। আচ্ছা বলো তো, গাইডের কাজ করছ কত দিন?’ জিম জানাল, ‘এই ধরো তিরিশ-চল্লিশ বছর। যখন একটা কি দুটো দাড়ি–মোচ গজিয়েছে ঠিক তখন থেকে শুরু।’

তিরিশ আর চল্লিশের মাঝে প্রায় এক যুগ ফারাক, সেটা ধরিয়ে না দিয়ে পথের পাশের আস্তাবলে অতিকায় ট্রোজান হর্স আকারের গোটা পাঁচেক ঘোড়া দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম। পাহাড়ি ঘোড়াগুলোর একেকটা পেটে আস্ত এক প্লাটুন স্পার্টা সৈন্য এঁটে যাবে, এমনই ভীষণ তাদের আকার। ভারী পশমে খুর পর্যন্ত ঢাকা। মায়াবী চোখ ঘেঁষে বাদামি ঘন কেশর নেমে এসেছে ঘাড়ের পাশে। দুটো পাখা থাকলে বোধ হয় উড়েই যেত আকাশে। জিমের কাছ থেকে জানলাম, কয় ঘর চাষি আছে এই এলাকায়, ঘোড়াগুলো তাদেরই। ‘গরমের সময়ে একবার এসো আল্পবাখ। ঘোড়ায় চড়ে পাহাড়ি রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দারুণ লাগবে।’ সায় দিয়ে মনে মনে তারিফ না করে পারলাম না প্রাণীগুলোর।

জিমের সঙ্গে কথায় কথায় বাড়িঘর, লোকালয় পেরিয়ে কখন যে অনেকটা দূরে চলে এসেছি, টের পাইনি। ভয়ংকর সরু খাদটার কিনারায় এসে টনক নড়ল। দুই পা পরিমাণ চওড়া পথটার পাশে নেমে গেছে গভীর খাদ। নিচে একচিলতে পাথুরে ঝরনা। পড়ে গেলে হাড়গোড় গুঁড়িয়ে সলিলসমাধি। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। প্রকট উচ্চতাভীতি খোলস খুলে বেরিয়ে এসেছে। এই পুলসিরাত আমি পার হতে পারব না কিছুতেই। জিমকে ডাকতে গিয়ে দেখি কোথাও কেউ নেই। অনেকটা পিছিয়ে পড়ে মনিকাকে হাতে ধরে এগিয়ে আনতে ব্যস্ত সে।

ভয়ে আতঙ্কে ভেউ করে কেঁদে দেব কি না ভাবছি। হঠাৎ মনে হলো, আরে দলের এক শ লোক একটু আগেই এই পথে দিব্যি হেঁটে পার হয়ে গেছে। আর আমি বাঙ্গাল ঢোঁক গিলে খাবি খাচ্ছি। ধ্যাত্তেরি, ভয়ের কপালে ম্যাচ জ্বালিয়ে আগুন দিই। লম্বা এক দম নিয়ে রাস্তাটা উড়িয়ে দিলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখি জিম দুই হাতের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বলছে, শাবাশ, শাবাশ।

পরক্ষণেই বুড়ো আঙুলটা ভাঁজ করে চার আঙুলের ইশারায় কী যেন কী বলতে লাগল জিম। ফিরে যেতে বলছে সে। মনিকা ধপ করে বসে পড়েছে। জিম তার সঙ্গে ফিরে যাবে। চাইলে আমি রয়ে যেতে পারি ইত্যাদি। একমুহূর্ত ভেবে আমিও খ্যামা দিলাম। কারণ, ঘেমে–ভিজে ভারী জ্যাকেট চুপচুপ করছে। দেখা গেল পানিশূন্যতায় একটা দফারফা হয়ে ফিট খেয়ে পটল–টটল তুলে ফেললাম। তখন, বাংলাদেশের কাগজে বেরোল, ‘পর্বতারোহণে গিয়ে প্রাবাসী মেধাবী শিক্ষার্থীর মৃত্যু।’ ওদিকে মেধাবীও নই আর শিক্ষার্থী হওয়ার বয়সও পেরিয়ে গেছে কবে। সিদ্ধান্ত নিলাম, যাহ, ফিরেই যাই। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক হাইকিংয়ের আদ্যোপান্ত যথেষ্ট দেখা হয়েছে। হেই দুনিয়ার মাবুদ, আরেক দফা এই দুনিয়াবী পুলসিরাতটা পার করে দাও দেখি। পাঁড় ধার্মিক বনে গিয়ে তিন কুল পড়ে বুকে ফুঁ মেরে প্রায় বন্ধ চোখে ইন্ডিয়ানা জোনস কায়দায় লাফিয়ে পেরোলাম পথটুকু।

১০.
ফিরে যাচ্ছি শর্টকাট ধরে। এতে নাকি তাড়াতাড়ি হবে। জিম কাঁধের ব্যাগ থেকে একটা কার্বোনেটেড ড্রিংক ধরিয়ে দিয়েছে। তরমুজের রসের মিষ্টি পানীয়র খানিকটা কারবালার তৃষ্ণা নিয়ে গলায় ঢেলে বাড়িয়ে দিল মনিকা। জান বাঁচানো ফরজ, তাই জানতেও চাইলাম না ওতে অ্যালকোহল আছে কি না। জিম বুড়ো না থাকলে আজ আর দেখতে হতো না। এগিয়ে যাওয়াটা এ যুগে এত বেশি জরুরি যে পিছিয়ে পড়াদের দিকে খেয়াল করার ফুসরত মেলে না কারও। কিন্তু পিছিয়ে পড়ে খুব যে খারাপ লেগেছে তা নয়। বরং প্রাইভেট গাইড জিমের সাথের আল্পবাখের আঁকেবাঁকে ঘোরাঘুরিটা বাড়তি বোনাসের মতন।

‘ঐ যে বড় গাছটা দেখছ না, ওর বয়স কত জানো?’ আন্দাজ করার আগেই জিম জবাব দিয়ে দিল, ‘আট শ বছর, বুঝলে পাক্কা আট শ। এ তল্লাটের সবচেয়ে পুরোনো গাছ। লোকে দেখতে আসে খুব।’ হিসাব কষলাম, আট শ বছর আগের সেই সময় গাছটা যখন মাত্র চারা, তখন পৃথিবীর আরেক প্রান্তে দিল্লির সুলতান ইলতুৎমিশ বাংলা আক্রমণ করে হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। এর আগে এত পুরোনো অথচ জ্যান্ত কিছু দেখিনি বলে বিস্ময় আর ধরে না। জিম বুড়ো আমাদের বিস্ময় দেখে তৃপ্তির হাসি হাসছে। তার দিনটাও একেবারে বাজে খরচ হয়নি।

আরও ঘণ্টাখানেক পরে কংগ্রেস সেন্টারের কাছে ফিরে হাজারখানেক ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় দিলাম বুড়োকে। নাম দুই নম্বর জিম হলেও মনটা তার একেবারে এক নম্বর।

বিজ্ঞান, গবেষণা, সম্মেলন ইত্যাদি ব্যাপারগুলো আসলে একেবারে শুষ্কং কাষ্ঠং না। এর ফাঁকতলে ঘুরে নিলে কত রঙের মানুষ আর কত কিছুর দেখা মেলে। কনফারেন্স হলে বসে স্বচ্ছ কাচে ঢাকা দেয়ালের ওপাশে ঝিরিঝিরি তুষার পড়া সন্ধেটার দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম কথাগুলো। কফি কাপের উষ্ণ চুমুকে ডুবে আবার মন দিলাম প্রজেক্টরের বিশাল স্ক্রিনে। (সমাপ্ত)

আরও পড়ুন
বেড়ানো: আল্পবাখের বাঁকে
বেড়ানো: আল্পবাখের বাঁকে ২