জয় সব ফিরিয়ে দেয়, স্যালুট শাহমিকা

শাহমিকা আগুন এবং তার ছেলে রিস। ছবি: লেখক
শাহমিকা আগুন এবং তার ছেলে রিস। ছবি: লেখক

শাহমিকা আগুনকে চিনি এক অনলাইন পত্রিকার লেখা পড়ে। ফেসবুকের ফ্রেন্ড হয়ে যায় পরে। থাকে লন্ডনে। আজ রিয়েল লাইফ হিরো শাহমিকা আগুনের সাফল্যের গল্প বলি।

শুরুটা ছিল মরুভূমির তপ্ত বালির ওপর খালি পায়ে হাঁটার যন্ত্রণার মতন। তার পাঁচ বছরের ছেলে রিসের যখন অটিজম ধরা পড়ল, তখন পুরো দুনিয়া মাথায় ভেঙে পড়ার অবস্থা।

শাহমিকার স্বামী, রিসের বাবা মেনে নিতে পারেননি ছেলের অটিজম। শ্বশুরবাড়ির সবাই শাহমিকাকেই দোষারোপ করল। দাম্পত্য সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। ছেলেসহ শাহমিকার জায়গা হয় মেয়েদের রিফিউজি আশ্রয় কেন্দ্রে। গল্পটা এখানেই জলাবদ্ধতার মতন স্থির, গতিহীন হতে পারত। সুইসাইড করার চিন্তা করেও ছেলের জন্য ফিরে এলেন শাহমিকা। অটিস্টিক বাচ্চা আর তার মাকে এই সমাজ সহজভাবে নেয় না। ছেলের অসুস্থতার জন্য মাকেই দায়ী করা হয়। রিস প্রায়ই বাসা থেকে বের হয়ে যেত সুযোগ পেলে। বিপদ বুঝতে পারত না। মা–ছেলেকে কেউ দাওয়াতে ডাকে না। স্কুলের এক টিচার শাহমিকাকে বলেছিলেন, ‘মনে করো তুমি পশু পালছ, মানুষের মতো আচরণ আশা করলে তুমি হতাশাগ্রস্ত হবে।’ সেদিন বাড়িতে ফিরে অনেক কান্নাকাটি করল।

ছেলেকে দেখাশোনার পাশাপাশি অটিজম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেন শাহমিকা। একজন পুষ্টিবিদ হিসেবে তিনি রিসার্চ করে পেলেন, ডায়েটের সঙ্গে অটিজমের আছে গভীর সম্পর্ক। রেগুলার অটিজম বুঝতে পারা এবং অটিজমকে ডিল করার কোর্সে সে বুঝতে পারল অনেকেই, যেটা প্রশিক্ষণ নিয়েও বুঝতে পারে না। সে তার ছেলের ডায়েট বদলে সাবকনশাস মাইন্ড নিয়ন্ত্রণ করে অটিজম ম্যানেজ করতে শুরু করল। ছেলে রিসের উন্নতি দেখে অনেক অটিস্টিক শিশুর মা–বাবা তার কাছে সাহায্য চাইল।

রিসের লার্নিং ডিজঅ্যাবলিটি ভালো হলো, সেন্সরি ইস্যু ফিরে এল। সে যেকোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারল। শাহমিকা বিভিন্ন দেশের প্রায় ১ হাজার ২০০ শিশুকে সুস্থ করে তুলেছেন প্রায়। তাঁর ওয়েবসাইট এঞ্জেলিক হিলিং ওউইথ শাহমিকা।

শাহমিকা কানাডা, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে সেমিনার করে অটিস্টিক নিয়ে সচেতনতা তৈরি করেন এবং শিশুদের সাহায্য করেন ডায়েট কন্ট্রোল, ভিটামিন, মিনারেলস, হারবাল স্পাইসসহ কিনেসিউলজি, ক্রেনেও সেক্রাম থেরাপি দিয়ে। যে থেরাপি মা–বাবাকে শেখানো হয়, যাতে তাঁরা ছেলেমেয়েকে দিতে পারেন। অনলাইন ভিডিও কলে শাহমিকা এই সেবা দিয়ে থাকেন। শুধু তা–ই নয়, সে অটিস্টিক শিশু ও তাদের মা–বাবার ইমোশনাল ব্লকিং ও ট্রমা রিলিজ করা হয়। প্রতিটি অটিস্টিক শিশুর মা–বাবা অতিরিক্ত মানসিক যন্ত্রণায় থাকেন। তাঁদের ট্রমা রিলিজ খুব জরুরি। শাহমিকা নিজের ছেলেকে নিয়ে অনেক এক্সপেরিমেন্ট করতেন, তাঁর ছেলের বাবা এই নিয়ে তাঁকে দোষ দিয়ে ছেলেকে তাঁর কাছ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ভাগ্য সাহসী, পরিশ্রমী, হার না–মানাদের সাহায্য করে। আজ রিসের বাবা ছেলের উন্নতিতে খুশি। ছেলের সঙ্গ পছন্দ করেন, ছেলের সঙ্গে সময় কাটাতে চান। শাহমিকার ইনবক্সে বিভিন্ন দেশ থেকে সন্তুষ্ট মা–বাবারা অপার ভালোবাসা দেখান। শাহমিকার এই ঘুরে দাঁড়ানো এবং বিজয়ী ভাব দেখলে সুইডিশ ব্যান্ড অ্যাবার একটি গানের লাইন মনে হয়, ‘দ্য উইনার টেকস ইট অল স্যালুট শাহমিকা।’