কারোনাভাইরাস মানবজাতিকে স্থবির করে দিয়েছে

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

স্পেন, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, পর্তুগাল করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র গোটা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করছে। ইতালি ও ইংল্যান্ড ইতিমধ্যে আলাদা দ্বীপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে৷ অবস্থা কতটা ভয়াবহ হলে উন্নত দেশগুলো জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে!

ভারত বাংলাদেশের সীমানা বন্ধ করে দিয়েছে। সিঙ্গাপুর আক্রান্ত দেশগুলো থেকে ভ্রমণের কড়াকড়ি নজরদারি করছে। আক্রান্ত দেশগুলো থেকে সিঙ্গাপুরে ফিরে এলে সুস্থ বা অসুস্থ যে অবস্থাই হোক না কেন বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের Stay home notice (SHN) জারি করেছে। চায়নার সঙ্গে অনেক আগেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অন্য সব দেশের। ফিলিপাইন গত সপ্তাহে বাংলাদেশের মানুষকে তার দেশে নিষিদ্ধ করছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী, ফুটবলার, ইরানের এক ডজন সাংসদ–মন্ত্রী, ইতালির বিরোধীদলীয় প্রধান—কেউই বাদ যাননি করোনার আক্রমণ থেকে। আপনি ধনী–গরিব যে–ই হোন না কেন, আপনিও ছাড় পাবেন না।

ফুটবল ম্যাচ, ক্রিকেট ম্যাচ স্থগিত করা হচ্ছে। মক্কায় যেকোনো সমাবেশ নিষিদ্ধ।

ফেসবুকে লাইভ ভিডিওতে দেখি লন্ডন, প্যারিস, ব্যাংকক, সাংহাই, ভেনিস এখন জনমানবহীন ভুতুড়ে নগরী। এর আগে এই নগরীগুলোর এমন ভুতুড়ে অবস্থা কেউ দেখেছে কি না জানি না। এ যেন বিশ্বযুদ্ধ চলছে। এ মহাবিপদ থেকে সবারই সচেতন হওয়া জরুরি। সবাই সবার অবস্থান থেকে সামাজিক দায়িত্ব পালন করা অপরিহার্য।

বিশ্ব অর্থনীতি এখন মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন। এশিয়ান স্টক একচেঞ্জ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় দরপতনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো গতকাল শুক্রবার। এতটা ভয়াবহ হবে, গত মাসেও কেউ তা ভাবেনি।

বাংলাদেশের কী অবস্থা হবে, ভাবতেই আঁতকে উঠি। বাংলাদেশের বেশির ভাগ খাদ্যদ্রব্য আসে ভারত থেকে। ভারত এখন বাংলাদেশের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। এই মুহূর্তে ভারত যদি খাদ্যদ্রব্য দেওয়া বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমাদের কী অবস্থা হবে, তা সহজেই অনুমেয়। কয়েক দিন আগে পেঁয়াজ দেয়নি, তখন পেঁয়াজের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছিল।

আমাদের এই মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে সরকারের এখনই গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করাসহ রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক জনসমাবেশ এখনই বন্ধ না করলে আমাদের ভাগ্যে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে।

এই পর্যন্ত যারা এ ভাইরাসকে অবহেলা করেছে, তারাই আজ আক্রান্ত। তবে আমি খুবই আতঙ্কিত কারণ, সারা বিশ্ব যখন করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিটা রাষ্ট্র যেখানে ধার্মিক, অধার্মিক, সরকারি দল, বিরোধী দল, বুদ্ধিজীবী—সবাই এক কাতারে এসে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করছে, সেখানে আমাদের দেশে ভিন্ন দলের ভিন্নমত। তারা এই দুর্যোগকালীনও এক হতে পারল না।

আর আমজনতার কথা কী বলব? কিছু লোক তো করোনাভাইরাস নিয়ে ট্রল করছে। অনেকেই বলছে দেশে করোনাভাইরাস নেই। এসব জ্ঞানীর কথা শুনে হাসি আসে।

নিয়মিত করোনাভাইরাস নিয়ে লেখার কারণে অনেকেই বলেন, আমি সিঙ্গাপুর সরকারের দালাল। সরকারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিয়মিত লিখে যাচ্ছি। তাদের চিন্তাভাবনা দেখে ইঁদুরের গর্তে লুকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।

সবাইকে বলব, করোনাভাইরাস হাস্যকর কিছু নয়। এ ভাইরাসটি সারা বিশ্বকে অচল করে দিয়েছে। যেমনটা বিশ্বযুদ্ধে হয়েছিল। মানবজাতি এখন হুমকির মুখে।

কোনো তির নয়, তলোয়ার নয়, অত্যাধুনিক অস্ত্র নয়, পারমাণবিক বোমা নয়। অদৃশ্য এক ভাইরাস গোটা মানবজাতিকে স্থবির করে দিয়েছে। মানবজাতি এখন ভাইরাসের ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে মানবজাতি জয় পেতে মরিয়া। জানি না কবে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে।