করোনা আতঙ্কে ইরানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা কেমন আছেন

ইস্পাহান মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ডরমিটরি। ছবি: সংগৃহীত
ইস্পাহান মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ডরমিটরি। ছবি: সংগৃহীত

এক মাসের বেশি সময় হতে চলেছে করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি কমাতে আমাদের ইরানের ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ ইরানের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি হয়েছে। ডরমিটরিতে বসেই সারা দিন সময় পার করছি আমরা। ইউনিভার্সিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই শুধু খাবার কিনতে বাইরে যেতে হচ্ছে।

ডরমিটরিতে থাকা অন্যান্য বিদেশি শিক্ষার্থী যেমন লেবানন, আফগানিস্তান, কাশ্মীরসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় সবাই নিজ দেশে ফিরে গেছেন। বিশেষ করে লেবাননের শিক্ষার্থীরা তেহরানে তাদের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মাধ্যমে ইরানের সঙ্গে নিজেদের দেশের বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেও নিজেরাই ফ্লাইট ভাড়া করে লেবাননে ফিরে গিয়েছেন। ডরমিটরি অনেকটায় শিক্ষার্থী শূন্য। আমাদের সেই কোলাহলপূর্ণ ডরমিটরি এখন অনেকটাই নীরব।

আমার ইরানি রুমমেট সেই দুই সপ্তাহ আগেই ইস্পাহানের পাশের শহরে নিজ পরিবারের কাছে ফিরে গেছে। মোবাইলে কথা বলি করোনাভাইরাস নিয়ে আপডেট শেয়ার করি। সে বলে, ‘এই সমস্যা খুব সহজেই দূর হচ্ছে না তুমি মনে রেখো। সুযোগ থাকলে দেশে ঘুরে আসো।’

বাসা থেকে মা ফোন দিয়ে বলেন, ‘সুযোগ থাকলে চলে এসো দেশে। কীভাবে বলি, ইরান-বাংলাদেশ সব ফ্লাইট বন্ধ হয়ে আছে। এই অবস্থায় মনে হয় এই বিশ্ব একটি মুক্ত কারাগার যেখানে আমরা কারাগারের আসামি।’

মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরি হওয়ায় ডরমিটরিতে অনেক চিকিৎসক ও নার্স শিক্ষার্থী আছেন, যাঁরা নিয়মিত হাসপাতালে ডিউটিতে যাচ্ছেন। নিজে ব্যক্তিগতভাবে মাস্ক হাতে গ্লাভস, নিয়মিত হাত ধোয়া ইত্যাদি মেনে চলছি কিন্তু আপনার পাশের শিক্ষার্থীরা যদি তা না মেনে চলেন, তবে এই কারাগারে আপনি কতটা নিরাপদ? চিন্তার বিষয়, আতঙ্কের বিষয় এখানেই।

সময়ে সময়ে ইরানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের পরিমাণ বাড়ছে। আর আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হিসাব করলে চীনের পরেই ইতালি। এরপর ইরানের অবস্থান। এখন পর্যন্ত ইরানে ৬১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৩ হাজারে। তাই কোনোমতেই এমন অবস্থা নিয়ে না ভেবে উপায় কই?

জানি না এই মুক্ত কারাগার থেকে আমরা কবে মুক্তি পাব। ইরানে অবস্থানরত ১০০ জনের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ইরানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ধর্মীয় বিভাগে অধ্যয়নরত আছেন। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই এ অবস্থা নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে সময় পার করছেন। সুযোগ পেলে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন অনেকেই। সবার কাছে দোয়া চাই আমাদের জন্য।

লেখক: শিক্ষার্থী, ডক্টর অব মেডিসিন, ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়