করোনা ভাইরাস: ফ্রান্সের শহরগুলো যেন অচেনা

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

‘মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে, ...বাঁচিবার চাই’। আজ এ অপ্রতিরোধ্য লাশের মিছিলের ক্রান্তিলগ্নে কবির এ আকুতি যেন বিশ্বের শান্তিকামী মর্ত্যের মানুষের আর্তনাদ।

সর্বশেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ফ্রান্সে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজারের বেশি। এখন পর্যন্ত ৯১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সরকারের পক্ষ থেকে অতিদ্রুত বিস্তারকারী এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে সর্বোচ্চ জননিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের প্রভাবে থমকে গেছে ফ্রান্সের স্বাভাবিক জীবনযাপন। ১৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড ফিলিপের নির্দেশনা অনুযায়ী কেবল ফার্মেসি, গ্রোসারি শপ, টোব্যাকো শপ, পোস্ট অফিস, ব্যাংক ও সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছেন।

প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ১৩ মার্চ শুক্রবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে বর্তমান পরিস্থিতিকে ফ্রান্সের ১০০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও প্রতিকূল পরিস্থিতি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ১৬ মার্চ থেকে পরবর্তী নির্দেশনা পর্যন্ত সব বিদ্যাপীঠ বন্ধ ও সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থা ঘোষণা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার ভেতর প্রধানমন্ত্রীর এই দ্বিতীয় দফা নির্দেশনা এল।

ফ্রান্সের সীমান্তগুলোয় রাখা হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা, ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে অতি প্রয়োজন এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া সীমান্ত দিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

ফ্রান্সের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক দুটি বিমানবন্দরেই আংশিক এলাকা যাত্রীসাধারণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এয়ারলাইনসগুলো তাদের ফ্লাইট বাতিল ঘোষণার কারণে এয়ারপোর্ট অনেকটা যাত্রীবিহীন ফাঁকা হয়ে পড়েছে। যাত্রীদের পরীক্ষায় ভাইরাস আক্রান্তদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

আজ পর্যন্ত ৩ নম্বর বিপৎসংকেতে অবস্থানকারী দেশ হিসেবে ফ্রান্সের ৭০ বছরের সব নাগরিকের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার জন্য জোরালো নির্দেশনা রয়েছে। তা ছাড়া ১০০ লোকের অধিক জনসমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

১৫ মার্চ পূর্বনির্ধারিত মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনের প্রথম রাউন্ড যথারীতি ভোট গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু ভোটকেন্দ্রগুলোকে সংক্রামকমুক্ত রাখার জন্য ব্যাপক স্যানিটারি ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।

ছুটির দিন রোববার রাস্তাঘাট প্রায় যানবাহনশূন্য, সরকারি এ সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ক্যাফে, রেস্তোরাঁগুলো রয়েছে বন্ধ। পর্যটকবিহীন ফ্রান্সের প্রায় প্রতিটি শহর জনমানবহীন ভৌতিক নগরে পরিণত হয়েছে। এ যেন এক অচেনা শহর।

প্রায় সব সুপার মার্কেটের শেলফের দিকে নজর দিলেই ক্রেতাদের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত করার একটা প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।

অজানা আশঙ্কায় জনমনে একধরনের অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতার ছাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক-কর্মচারী উভয়ই আগামীর পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।

এ রকম অচল অবস্থায় অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তাদের কর্মচারীদের বেকার ভাতার জন্য চাকরি থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

ফ্রান্স সরকার আসন্ন আর্থিক সংকট মোকাবিলায় ব্যবসার ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে ভর্তুকি প্রদান করার আশ্বাস প্রদান করেছে, কিন্তু অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশিরা যেহেতু চুক্তিবিহীন কাজ করে থাকে, তাই তাঁরা এসব সুবিধা পাবেন না বলে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

প্রাণঘাতী অভিশপ্ত এ ভাইরাসের ছোবল থেকে অতি শিগগিরই যেন পৃথিবীর মানুষ মুক্ত হয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনের গতিধারা ফিরে পায়, ফ্রান্সের বাংলাদেশিদের এই প্রত্যাশা।